বাংলাদেশের দেশিয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির দীর্ঘদিনের সারথী এমদাদ হক। ফ্যাশন ডিজাইনার হিসাবে তিনি ছিলেন বিপুল খ্যাতির অধিকারী। ১৯৬৮ সালে পুরান ঢাকার উর্দু রোডে জন্ম এমদাদ হকের। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র, ভাইবোন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বাদ এশা চকবাজার শাহী মসজিদে জানানার পর বনানী কবরস্থানে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাঁর বাবার কবরেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।
কয়েক বছর আগে কিডনির জটিলতার কারণে তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। এর পর থেকে তিনি সুস্থই ছিলেন। তবে মাসখানেক আগে হঠাৎ শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার জন্য তাঁকে শ্যামলীর স্পেশালাইজড হসপিটালে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ৫ত দিন তিনি এ অবস্থায় থেকে আজ শুক্রবার বেলা ২টা ১৬ মিনিটে ইন্তেকাল করেন।
এমদাদ হক বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির উত্থানপর্বের একজন সাক্ষীই কেবল নন, বরং একজন সক্রিয় সারথিও। এ শিল্পের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা সেই ১৯৮৫ সালে। সেই সময়ে তিনি অধুনালুপ্ত সাময়িকপত্র ‘বিচিত্রা’য় প্রদায়ক ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি লেখালেখির মাধ্যমে জড়িয়ে পড়েন বাংলাদেশের দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে স্নাতকোত্তর করে ধরাবাঁধা চাকরিতে না গিয়ে ব্র্যাকের রেশম প্রকল্পে যোগ দেন। এরপর তিনি চলে আসেন গ্রামীণ উদ্যোগে প্রধান পণ্য উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে। পণ্য উন্নয়ন ও নকশার পাশাপাশি পণ্যের বাজার আঁচ করতে পারার অসামান্য ক্ষমতা ছিল এমদাদ হকের। গ্রামীণ উদ্যোগকে সুদৃঢ় অবস্থানে উন্নীত করে তিনি ছেড়ে দেন। ঐ সময়ে তাঁর বেশ কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে গড়ে তোলেন বাংলার মেলা। তিনি ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম পরিচালক ও ডিজাইনার। সে সময়ে বাংলার মেলার ঈর্ষণীয় সাফল্যে ছিল তাঁর বিশেষ ভূমিকা।
পরবর্তীকালে বাংলার মেলার ডিজাইনার পদ ছেড়ে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের প্রতিষ্ঠান স্টুডিও এমদাদ। প্রথম দিকে একটা আউটলেট থাকলেও পরে নিজের বাসাতেই কাজ করতেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে এমদাদ ডিজাইন করতেন পুরুষদের পোশাক। বাংলাদেশের ডিজাইনারদের তৈরি বিয়ের পোশাককে জনপ্রিয় করেছেন তিনি। তাঁর ডিজাইন করা পোশাক প্রদর্শিত হয়েছে দেশে-বিদেশে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই তিনি ছিলেন ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশের সহসভাপতি। এ মাসের ৭–১০ ডিসেম্বর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত থাই সিল্ক ফ্যাশন উইকে তাঁর অংশগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে অংশ নিতে পারেন নি।
রাতে এই ফ্যাশন ডিজাইনারকে শেষবারের মতো দেখতে বনানী গোরস্থানে উপস্থিত ছিলেন অভিনয়শিল্পী আফজাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী, আফসানা মিমি, ফ্যাশন ডিজাইনার শৈবাল সাহা ও শাহরুখ আমীন, সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীনসহ অনেকেই।
ছবি: সংগৃহীত