জ্যান্ত কাক, ধুকপুক করা লাইভ হার্ট গাউন আর ৮৫ বছর আগের অনুপ্রেরণায় স্ক্যাপারেল্লির ব্যাক টু দ্য ফিউচার কালেকশন
শেয়ার করুন
ফলো করুন

লাল গাউনের ডিজাইনে ধুকপুক করছে লাইভ হার্ট। হিপহপ তারকা কার্ডি বি হাতে জ্যান্ত কাক নিয়ে এসেছেন উঁচু শোল্ডারের অদ্ভুত স্ট্রাকচার্ড আউটফিটে। এদিকে আরেক পপ ডিভা ডুয়া লিপার কি হোল পোশাকে তালা-চাবির প্যাটার্ন। একেবারে আটঘাট বেঁধেই প্যারিস ফ্যাশন উইকে এসেছে ইতালির বিখ্যাত ব্র্যান্ড স্ক্যাপারেল্লি। ডিজাইনার ড্যানিয়েল রোজবেরি অবশ্য ফ্যাশন দুনিয়াকে চমকে দিতে ওস্তাদ। তারপরও এবারের ফল ২০২৫ কালেকশনের শোতে যেন সারপ্রাইজের কমতি ছিল না।

হিপহপ তারকা কার্ডি বি হাতে জ্যান্ত কাক নিয়ে এসেছেন
হিপহপ তারকা কার্ডি বি হাতে জ্যান্ত কাক নিয়ে এসেছেন
কার্ডি বির সঙ্গে বেশ বন্ধুত্ব আছে কাকটির। সে কোনোই ঝামেলা করেনি পুরো সময়টুকুতে।
কার্ডি বির সঙ্গে বেশ বন্ধুত্ব আছে কাকটির। সে কোনোই ঝামেলা করেনি পুরো সময়টুকুতে।

প্রথমেই এলেন কার্ডি বি। ক্রিয়েট করলেন এবারের শোর ভাইরাল মোমেন্ট। কালো বাস্টিয়ার ড্রেসের ওপর ড্রামাটিক রেইজড নেকলাইন। কাঁধের ওপরে উঠে থাকা এই অংশ থেকে নেমে এসেছে সাদা ফ্রিঞ্জের পর্দা। এটুকুতেই শেষ হয়নি নাটক। কার্ডি বি-র সঙ্গে শোতে এসেছে এক কুচকুচে কালো দাঁড়কাক। বাক টু দ্য ফিউচার থিমের শোতে এই জ্যান্ত কাকের ভূমিকা নিয়ে কিছুটা কনফিউশনে আছেন ফ্যাশনপ্রেমীরা। কার্ডি বির সঙ্গে বেশ বন্ধুত্ব আছে কাকটির। সে কোনোই ঝামেলা করেনি পুরো সময়টুকুতে।

বিজ্ঞাপন

শোয়ে আগত অন্য অতিথিদের মধ্যে বিশেষভাবে নজর কাড়েন পপ ডিভা ডুয়া লিপা। দীর্ঘাঙ্গী ডুয়ার কি হোল পোশাকে আসলেই মাঝবরাবর একটি তালার ছিদ্রের আদলের কি হোল রাখা হয়েছে। আর এই সাদা তালাচাবি পোশাকে ডুয়াকে মানিয়েছেও বেশ।

সাদা তালাচাবি পোশাকে ডুয়াকে মানিয়েছেও বেশ
সাদা তালাচাবি পোশাকে ডুয়াকে মানিয়েছেও বেশ
হান্টার শেফারের স্ট্র্যাপলেস ও বডিকন ডুরে ডিজাইনের মিন্ট-গোল্ড ড্রেস
হান্টার শেফারের স্ট্র্যাপলেস ও বডিকন ডুরে ডিজাইনের মিন্ট-গোল্ড ড্রেস

হান্টার শেফারের স্ট্র্যাপলেস ও বডিকন ডুরে ডিজাইনের মিন্ট-গোল্ড ড্রেস আর ক্যারল জি-র গভীর ড্রেপড হার্ট নেকলাইনের কালো-সোনালি বডিকন গাউনও চোখ ধাঁধিয়েছে।

ল রোশের ওভারসাইজড ইউনিসেক্স জ্যাকেটের লুকও চোখে পড়েছে সবার
ল রোশের ওভারসাইজড ইউনিসেক্স জ্যাকেটের লুকও চোখে পড়েছে সবার

এর মাঝে সেলিব্রিটি স্টাইলিস্ট ল রোশের ওভারসাইজড ইউনিসেক্স জ্যাকেটের লুকও চোখে পড়েছে সবার। তাঁর সঙ্গে রিয়ান ডেস্টিনি এসেছেন প্যাস্টেল পিচ বোল্ড নেকলাইনের গাউনে।

বিজ্ঞাপন

এবার আসা যাক স্ক্যাপারেল্লির ফল ২০২৫ কালেকশনের কথায়। ব্যাক টু দ্য ফিউচার। মাইকেল জে ফক্স অভিনীত আশির দশকের সাড়া জাগানো কাল্ট ক্ল্যাসিক সিনেমা ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম এটি আসলে। তবে স্ক্যাপারেল্লির বর্তমান প্রধান ডিজাইনার ড্যানিয়েল রোজবেরির কালেকশনটির এই নাম দেওয়ার পেছনে আছে গভীর তাৎপর্য। ফিউচার বা বর্তমান আর পাস্ট বা অতীতকে কি আসলে খুব বেশি আলাদা করা যায়? সময় বহমান। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই ফিরে ফিরে আসে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে। ফ্যাশন দুনিয়ায় এটি আরও স্পষ্টভাবে দেখা যায়। প্রায় সময়ই দেখা যায় একটি ট্রেন্ড কয়েক বছর পর ঘুরেফিরে আসছে।

ফিউচারিস্টিক বা ভবিষ্যতকামী ডিজাইনেও আছে অতীতবিলাসী ভাবনা
ফিউচারিস্টিক বা ভবিষ্যতকামী ডিজাইনেও আছে অতীতবিলাসী ভাবনা
 ফ্যাশনে ফিউচার বা বর্তমান আর পাস্ট বা অতীতকে কি আসলে খুব বেশি আলাদা করা যায়?
ফ্যাশনে ফিউচার বা বর্তমান আর পাস্ট বা অতীতকে কি আসলে খুব বেশি আলাদা করা যায়?

আবার ডিজাইনাররা অতীতের বিশিষ্ট কোনো অনুপ্রেরণা থেকে সাজিয়ে তোলেন তাঁর নতুন সৃজন। এখানেও তাই করেছেন ড্যানিয়েল।

কিংবদন্তি ডিজাইনার এলসা স্ক্যাপারেল্লি
কিংবদন্তি ডিজাইনার এলসা স্ক্যাপারেল্লি

স্ক্যাপারেল্লির প্রতিষ্ঠাতা, কিংবদন্তি ডিজাইনার এলসা স্ক্যাপারেল্লির সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের ডিজাইন থেকেই এই কালেকশন অনুপ্রাণিত, বলছেন তিনি।

আসলে এই অনুপ্রেরণা আর কালেকশনের থিম বুঝতে হলে আমাদের একটু পেছনে যেতে হবে। সময়কাল ১৯২৭। ইতালিয়ান ডিজাইনার এলসা স্ক্যাপারেল্লি ফ্যাশনের লীলাভূমি প্যারিসে এসে শুরু করেন স্বপ্নের ফ্যাশন হাউস স্ক্যাপারেল্লি। সময়ের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে থাকা ডিজাইন–ভাবনা থেকে তৈরি আউটফিটগুলো সমাদৃত হলেও ব্যবসাসফল হতে পারেনি ব্র্যান্ডটি। ১৯৫৪ সালে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড স্ক্যাপারেল্লিকে। এরপর এই নামে পারফিউমের ব্র্যান্ড শুরু করেন ভগ্নহৃদয় স্ক্যাপারেল্লি। সালভাদর দালির সঙ্গে কোল্যাবরেট করে সংগ্রহ এনেছিলেন তিনি। একসঙ্গে কাজ করেছেন সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী কোকো শ্যানেলের সঙ্গে। এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত স্ক্যাপারেল্লির সব সময়ের ভবিষ্যৎকামী ডিজাইন।

১৯৩০-১৯৪০ সাল পর্যন্ত এলসার বিভিন্ন সাদাকালো ছবির অনুপ্রেরণায় সাজানো হয়েছে কালেকশনটি
১৯৩০-১৯৪০ সাল পর্যন্ত এলসার বিভিন্ন সাদাকালো ছবির অনুপ্রেরণায় সাজানো হয়েছে কালেকশনটি
সাদাকালোর সঙ্গে নজর কেড়েছে মেটালিক আমেজ
সাদাকালোর সঙ্গে নজর কেড়েছে মেটালিক আমেজ

কিন্তু ফ্যাশন দুনিয়ায় আবার নতুন করে ফিরে এল ব্র্যান্ডটি ২০১৪ সালে অন্য মালিকানায়। তবে ভালো দিক হচ্ছে এখানকার প্রধান ডিজাইনাররা এলসার মূল ডিজাইন–ভাবনাকে সব সময় সম্মান জানিয়ে এসেছেন তাঁদের কাজে। এবারের ফল ২০২৫ কালেকশনের কথাই ধরা যাক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ১৯৩০-১৯৪০ সাল পর্যন্ত এলসার বিভিন্ন সাদাকালো ছবির অনুপ্রেরণায় নিজের এই কালেকশনও ড্যানিয়েল সাজিয়েছেন সাদা-কালোয়। সঙ্গে ভবিষ্যৎকামী মেটালিক ডিটেইলিং লক্ষণীয়।

এলসা স্ক্যাপারেল্লিকে বলা হতো সুররিয়েলিস্ট ফ্যাশনের প্রবর্তক। এখন তো ফ্যাশনে এই সুররিয়েলিজম নিয়ে অনেক কথা হয়। সুররিয়েল মানে আসলে অদ্ভুত বা আলাদা কিছু।

এলসার সুররিয়েলিজম ডানা মেলেছে এই সংগ্রহে
এলসার সুররিয়েলিজম ডানা মেলেছে এই সংগ্রহে
সিলোয়েট নিয়ে খেলেছেন মেধাবী ডিজাইনার ড্যানিয়েল
সিলোয়েট নিয়ে খেলেছেন মেধাবী ডিজাইনার ড্যানিয়েল

আর স্ক্যাপারেল্লির এই ফল ২০২৫ কালেকশনে সেই ছাপ সুস্পষ্ট। এদিকে কাট, প্যাটার্ন আর সিলোয়েট নিয়ে খেলেছেন মেধাবী ডিজাইনার ড্যানিয়েল।

তবে এলসার সিগনেচার হেডপিসের প্রতি ট্রিবিউট দিতেও ভোলেননি তিনি। মেকওভারেও এক্সেন্ট্রিক সাদা-কালোর দেখা মিলেছে পুরো শোতে।

এলসার সিগনেচার হেডপিসগুলোকে ট্রিবিউট দিতে ভোলেন নি ড্যানিয়েল
এলসার সিগনেচার হেডপিসগুলোকে ট্রিবিউট দিতে ভোলেন নি ড্যানিয়েল
মেকওভার আর হেয়ারস্টাইলে অতীত আর ভবিষ্যত মিলে মিশে একাকার
মেকওভার আর হেয়ারস্টাইলে অতীত আর ভবিষ্যত মিলে মিশে একাকার

হেয়ারস্টাইলে ছিল ভবিষ্যৎকামী সাই-ফাই বা সাইবর্গ আমেজ। আবার অনুষঙ্গে দেখিয়েছেন চরম মুনশিয়ানা।

আর এরই মাঝে সবাইকে আন্দোলিত করেছে ধুকপুক করা লাইভ হার্ট বা জীবন্ত হৃৎপিণ্ড এমবেলিশ করা লাল টকটকে সিকুইনের গাউন।

প্রযুক্তি আর জীবনের অস্বস্তিকর অথচ আকর্ষণীয় এই সম্মিলন সবাইকে রীতিমতো ঝাঁকুনি দিয়েছে বলা যায়। স্ক্যাপারেল্লি নতুন করে সবকিছু করলেও পুরোনোকে অস্বীকার করে না। আর এ জন্য এই ব্যাক টু দ্য ফিউচার কনসেপ্ট কালোত্তীর্ণ হয়ে থেকে যাবে, এ কথা বলাই যায়।

সূত্র: ডব্লিউ ডব্লিউ ডি, ইন্সটাগ্রাম, হার্পার্স বাজার, ভোগ

ছবি: ইন্সটাগ্রাম

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ০৭: ৪২
বিজ্ঞাপন