যুদ্ধের দামামা থামতে না থামতেই ভারতের হায়দ্রাবাদের তেলেঙ্গানায় গতকাল ১০ মে শুরু হলো বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা মিস ওয়ার্ল্ডের ৭২তম আসর। আর সেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিযোগী আকলিমা আতিকা কনিকা নজর কেড়েছেন অভিনব রিকশা গাউনে। একেবারে হুডসহ সত্যিকারের রিকশা ম্যাটেরিয়াল দিয়ে এই চোখধাঁধানো আউটফিটটি ডিজাইন ও তৈরি করেছেন বাংলাদেশের শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির ফ্যাশন শিক্ষার্থী রাইসা আমিন শৈলী। ভাবতেও ভালো লাগে, মিস ওয়ার্ল্ড এর মতো বড় পরিসরের গ্লোবাল প্যাজেন্ট বা সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাতেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ।
এ বছর মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন আকলিমা আতিকা কনিকা। বাহ্যিক সৌন্দর্য ছাপিয়েও যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে তুলে ধরার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। তিনি ইতিমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত ফেস অব এশিয়া ২০২৪ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের হয়ে লড়েছেন। আকলিমার নিখুঁত উপস্থাপনা ও আত্মবিশ্বাস আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কুড়িয়েছে প্রশংসা। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে মিস ওয়ার্ল্ড মঞ্চে একজন যোগ্য প্রতিনিধি হিসেবে প্রস্তুত করে তুলেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ফ্যাশন অঙ্গনের প্রভাবশালী উদ্যোক্তা, ন্যাশনাল ডিরেক্টর ও বিখ্যাত মডেল আজরা মাহমুদই মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০২৫ এর লাইসেন্স পেয়েছেন।
আজরার নেতৃত্বে গঠিত আজরা মাহমুদ ট্যালেন্ট ক্যাম্প (এ এম টি সি) ইতিমধ্যেই দেশের সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণীদের আন্তর্জাতিক মানের প্রস্তুতি দেওয়ার একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। এখানে সৌন্দর্য, নেতৃত্ব, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও আত্মবিশ্বাসের সমন্বয়ে এমন এক প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে, যারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে নতুনভাবে তুলে ধরতে সক্ষম। আর আকলিমা তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। আজরা মাহমুদ বলেন, 'আকলিমা মেধা, সৌন্দর্য ও পরিশ্রমের প্রতীক। সে এমন একটি নতুন মুখ যাকে মিস ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার অভিজ্ঞতা, পরিশ্রম এবং দেশের প্রতি তার ভালোবাসা আছে। সে শিগগিরই আমাদের ও বাংলাদেশের গর্ব হবে বলে আমরা আশাবাদী'।
আর দারুণ ব্যাপার হচ্ছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই অত্যন্ত নজর কেড়েছেন বাংলাদেশের আকলিমা। আর সেই সঙ্গে বেশ আলোচনা হচ্ছে তাঁর লাল টকটকে বেইসে বর্ণিল রিকশা ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি রিকশা গাউন। চমৎকার ফিটিংয়ের এই গাউনটি যে রিকশা প্রাণিত তা এর সঙ্গে সংযুক্ত হুডটির মধ্য দিয়ে খুব বোল্ড স্টেটমেন্ট রূপে প্রতীয়মান।
তরুণ ডিজাইনার রাইসা আমিন শৈলী তাঁর ডিজাইন করা এই অভিনব গাউনে মিস ওয়ার্ল্ডের মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিযোগী আকলিমাকে দেখে অত্যন্ত উচ্ছসিত। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিক্রিয়ায় তিনি আজরা মাহমুদকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান এই অভাবনীয় সুযোগের জন্য।
জানা যায়, সেই ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ধানমন্ডির জ্যামে বসে রিকশার ভিড়েই এই ডিজাইনের অনুপ্রেরণা পান রাইসা। তখনও জুলাই বিপ্লবের লাল রং একেবারে তাজা। মায়ের ঐকান্তিক সহযোগিতা আর ইন্সপিরেশনে এই তরুণ ডিজাইনার রিকশা ম্যাটেরিয়াল দিয়েই তৈরি করেছেন এই গাউন। হুডসহ রিকশার আদলে তৈরি এই গাউনের বর্ণিল নকশার মাছেই চোখে পড়ছে পেছনে লেখা 'মা-বাবার দোয়া'। রাইসা বলেন, 'রিকশার পেছনে প্রায়ই লেখা থাকে মা-বাবার দোয়া। মা-বাবারা যেমন সন্তানদেরকে পেছন থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দিয়ে থাকেন, সেই ইন্সপিরেশন থেকেই গাউনে এই নকশা করেছি'।
আর সবচেয়ে স্পেশাল ব্যাপার হচ্ছে, এই গাউনটি তৈরি করতে রাইসার সঙ্গে অকান্ত পরিশ্রম করেছেন, উৎসাহ দেওয়া থেকে শুরু করে সেলাই করতেও সাহায্য করেছেন তাঁর মা। আর এজন্য মাকে অন্তর থেকে ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।
মিস ওয়ার্ল্ড এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১১০ জন প্রতিযোগীর মাঝে রিকশা গাউনে আকলিমাকে অত্যন্ত নজরকাড়া লাগছে। আর সেই সঙ্গে তাঁর গ্রেসফুল হাঁটা ও সাবলীল উপস্থাপনে আবেদন বেড়েছে এই গাউনের।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে আকলিমা শুধুমাত্র একজন সুন্দরী প্রতিযোগী নন, বরং একজন সচেতন, আত্মপ্রত্যয়ী ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের সঠিক প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে সক্ষম নারী। আশা করা যায়, আকলিমা তাঁর লক্ষ্যে সফল হবেন। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার দৌড়ে বাংলাদেশের মুকুটে যোগ হবে নতুন পালক, যা আগে কখনো দেখেনি বাংলাদেশ।