জীবনের রং বদলে দেবে যোগাসন
শেয়ার করুন
ফলো করুন

যোগব্যায়াম নিয়ে সাম্প্রতিক নতুন আলোড়নের কারণ কোভিড-১৯। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত যোগব্যায়াম করেন, তাঁদের মনের জোর, রোগপ্রতিরোধ এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিডের সময়ে বুক ভরে দম নেওয়ার অভ্যাস বা প্রাণায়াম ও মেডিটেশন করার পরামর্শ দিয়েছে। অথচ এ দুটিই যোগব্যায়ামের অপরিহার্য অংশ। এ ছাড়া শরীরের ভারসাম্য, সক্ষমতা ও স্থিতিস্থাপকতা অটুট রাখা, ব্যথাবেদনা নিরাময়, অনিদ্রা দূর করা, অতিরিক্ত ওজন হ্রাস, মানসিক চাপ কমানো ও মনঃসংযোগ বাড়াতে যোগাসনের বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাও এখন এর পক্ষে মত দিচ্ছেন।

যোগব্যায়ামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ব্যায়ামের উপযোগী পোশাক ও অনুষঙ্গ
যোগব্যায়ামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ব্যায়ামের উপযোগী পোশাক ও অনুষঙ্গ
ছবি: লা রিভ

তবে যোগব্যায়ামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ব্যায়ামের উপযোগী পোশাক। তবে সেটা সাধারণ অ্যাকটিভ-ওয়্যার নয়; বরং যোগব্যায়ামের জন্য রয়েছে বিশেষ পোশাক, যা ব্যায়ামের সময় দেবে স্বাচ্ছন্দ্য ও আরাম। মনঃসংযোগ রাখবে নিরবচ্ছিন্ন।
যোগাসনের আসনগুলোতে রয়েছে চারটি ভাগ; অর্থাৎ বসা, দাঁড়ানো, বাঁকানো ও মোচড়। এ জন্য প্রয়োজন বিশেষায়িত পোশাক। এসব পোশাকে ব্যবহৃত কাপড়ের মূল বৈশিষ্ট্য তিনটি—আরাম, বায়ু চলাচলের উপযোগী ও নমনীয়। এই বৈশিষ্ট্য নিশ্চিত করতে সাধারণ সুতি বা লিনেনের কাপড় নয়, পলিস্টার-নাইলন-স্প্যানডেক্স কিংবা লাইক্রা মেশানো কাপড়ই বেশি উপযোগী।

বিজ্ঞাপন

সুতি খুব দ্রুত ঘাম টেনে নেয় ঠিক, কিন্তু তা সহজে শুকায় না; বরং ব্যায়ামের সময় অস্বস্তি ও দুর্গন্ধ তৈরি করে দ্রুত। এ জন্যই হাই-অ্যান্ড ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে মেগা চেইন ফ্যাশন রিটেইলে যোগব্যায়ামের পোশাকের আলাদা ক্রেতাশ্রেণি তৈরি হয়েছে। এর ভবিষ্যৎও উজ্জ্বল। ফরচুন বিজনেস ইনসাইটের সমীক্ষা বলছে, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে যোগ-পোশাকের বাজারের পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৮ সাল নাগাদ প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের অঙ্ক স্পর্শ করবে। কোভিডে অনলাইন যোগব্যায়ামের ক্লাসের পরিমাণ বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লম্বা হয়েছে টপ লেবেল ব্র্যান্ডগুলোর নামের তালিকা। এডিডাস, অ্যালো-ইয়োগা, অ্যাথলেটা ইনকরপোরেশন, লুলুমেলন, নাইকি, পিউমা—এমনকি হালের ক্রেজ র‌্যালফ লরেন আর টমফোর্ডও তাদের সংগ্রহে যোগ-পোশাক যোগ করতে বাদ রাখেনি।

যোগব্যায়ামের পোশাকের আলাদা ক্রেতাশ্রেণি তৈরি হয়েছে
যোগব্যায়ামের পোশাকের আলাদা ক্রেতাশ্রেণি তৈরি হয়েছে
ছবি: লা রিভ

প্রাচীন ভারতের যোগীরা কেবল খাটো একটি ধুতি পরে যোগব্যায়াম করতেন। যেন শরীরের কোনো অংশেই কোনো প্রকার বাধা তৈরি না হয়। আধুনিক বিশ্বে যোগব্যায়াম জনপ্রিয় হওয়ার পরপরই বিশেষায়িত পোশাকের চাহিদাও বাড়তে থাকে। ষাটের দশকে ঢোলা সুতির প্যান্ট ও শার্টকে মানা হতো যোগব্যায়ামের পোশাক হিসেবে। কিন্তু সেই ফ্যাশন টেকেনি বেশি দিন। কারণ, পা উঁচু করলে বা শীর্ষাসনে গেলেই পা উন্মোচিত হয়ে যেত, যা নারীদের জন্য ভীষণ অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াত। সত্তরের দশকে হগার-মাগার ব্র্যান্ড নিয়ে আসে বিশেষ ধরনের ইয়োগা শর্টস, যা এখনো চলছে। কিন্তু যোগ ফ্যাশনের মূল বিপ্লব শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ওই বছরই যোগব্যায়ামের জন্য বিশেষায়িত পোশাক ব্র্যান্ড লুলুমেলন প্রথম নাইলন ও লাইক্রার মিশ্রণে তৈরি ইয়োগা প্যান্ট তৈরি ও বিক্রি শুরু করে। এখনো লুলুমেলন শুধু যোগব্যায়ামের উপযোগী পোশাক তৈরি করেই বিশ্বে দাপটের সঙ্গে টিকে আছে।

বিজ্ঞাপন

হাল আমলে ইয়োগার পোশাক বলতে মূলত প্যান্ট, টপ, টি-শার্ট ও জ্যাকেটকেই বোঝানো হয়। এতে যোগ হয়েছে মেশ প্যানেল, রিব কাফ ও কাট অ্যান্ড সিউয়ের নানা কৌশল। হেড ও রিস্ট ব্যান্ড, নি-প্যাড, ম্যাট—এমনকি পানির বোতলও ইয়োগা এসেনশিয়ালের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।

যোগব্যায়াম জনপ্রিয় হওয়ায় বিশেষায়িত পোশাকের চাহিদাও বেড়েছে
যোগব্যায়াম জনপ্রিয় হওয়ায় বিশেষায়িত পোশাকের চাহিদাও বেড়েছে
ছবি: লা রিভ

আমাদের দেশেও বাড়ছে যোগব্যায়ামের অনুরাগীর সংখ্যা। ফলে ফ্যাশন হাউসগুলোও এই বিষয়ে ভাবতে শুরু করেছে। এই যেমন, ২১ জুন আন্তর্জাতিক যোগব্যায়াম দিবস উপলক্ষে ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড লা রিভ (www.lerevecraze.com) লঞ্চ করে ইয়োগা এসেনশিয়াল কালেকশন—ম্যাট ও পানির বোতল দিয়ে। সম্প্রতি এই লাইনে যোগ হয়েছে নারী ও পুরুষের বিশেষায়িত প্যান্ট, লেগিংস, টপ, টি-শার্ট ও জ্যাকেট।

ব্যায়ামে বাঙালির খ্যাতি যেমন আছে, আলস্যও বড় কম নেই। তাই আমাদের বেশির ভাগই আলসেমি ঝেড়ে ব্যায়ামে নিজেকে নিয়োজিত করতে বড়ই কুণ্ঠিত হই। তবে হ্যাঁ, জীবনে সাফল্যের ইঁদুর দৌড়ে টিকে থাকতে হলে নিজেকে ফিট রাখতে হবে। এর বস্তুত কোনো বিকল্প নেই। আবার বাস্তবতা হলো, সব সময় সময় বের করে দৌড়ানো বা জিমে গিয়ে ব্যায়ামও অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ ক্ষেত্রে যোগাসন হতে পারে যথার্থ আর সময়োপযোগী সমাধান।

প্রতিদিন সকালে আধঘণ্টার আসন আনতে পারে অভাবনীয় পরিবর্তন
প্রতিদিন সকালে আধঘণ্টার আসন আনতে পারে অভাবনীয় পরিবর্তন
ছবি: লা রিভ

তাই প্রতিদিন সকালে আধঘণ্টার আসন আনতে পারে অভাবনীয় শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন। তবে হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রেও কিন্তু বিশেষজ্ঞ পরামর্শ একান্ত আবশ্যক।

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২২, ১৭: ৫৯
বিজ্ঞাপন