বাংলাদেশের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় সৃজন ও পেশা–নির্ধারিত শিক্ষা কার্যক্রম হলো ফ্যাশন শিক্ষা। যদিও আগে প্রত্যেকেরই বাংলাদেশের ফ্যাশন ডিজাইন এডুকেশন সম্পর্কে একটি স্টোরিওটাইপ মানসিকতা ছিল। ধীরে ধীরে সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। ছাত্রদের আগ্রহ যেমন বাড়ছে ফ্যাশনের নানা শাখায় শিক্ষিত হয়ে ভবিষ্যতে পা রাখতে, অভিভাবকেরা ততটাই আগ্রহী ইচ্ছেপূরণে।
এই অগ্রগতির সেরা উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, বর্তমানে ছাত্ররা কেবল গৎ বাঁধা শিক্ষায় নিজেদের আটকে না রেখে বরং সময়োপযোগী ও কার্যকর সব বিষয় বেছে নিচ্ছে। এ রকম একটি বিষয় হলো, ফ্যাশন ডিজাইন; এ বিষয়ে পড়ার জন্য গত কয়েক বছরে প্রচুর ছাত্র ভর্তি হয়েছেন।
ফ্যাশন ডিজাইনিং হলো সবচেয়ে গ্ল্যামারাস, লাভজনক ও আধুনিক ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে একটি। আপনি যদি মনে করেন যে আপনার মেধা পোশাকের সৃজনশীল স্টাইলিং করার জন্য উপযুক্ত, তাহলে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে ক্যারিয়ার আপনার জন্য সঠিক। ফ্যাশন ডিজাইনিং হলো পোশাক ও আনুষাঙ্গিক ডিজাইনের শিল্প। একটি ফ্যাশন ডিজাইনিং ডিগ্রি অর্জন করার মাধ্যমে ফ্যাশনশিল্পে জ্ঞানের একটি নির্দিষ্ট স্তর অর্জন করা সম্ভব হয়।
ফ্যাশন ডিজাইনের স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ডিপ্লোমা ডিগ্রির বিস্তারিত পরিসর রয়েছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এই শিক্ষাপ্রক্রিয়া একজন শিক্ষার্থীকে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের নানা বিষয় শিখতে সহায়তা করে। বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি) ২০০০ সাল থেকে ফ্যাশনের নানা শাখায় শিক্ষা দিয়ে আসছে। ফলে বাংলাদেশে ক্রমেই বাড়ছে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনবল।
ফ্যাশন ডিজাইনিং হলো একধরনের শিল্পমাধ্যম, যা পোশাক ও অন্যান্য জীবনধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত নানা অনুষঙ্গের নকশা ও তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ফ্যাশন ডিজাইনিং বিভিন্ন সমাজ, সংস্কৃতি, আবহাওয়া ও বিভিন্ন প্রবণতা দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়; এ ছাড়া প্রবণতা অনুসারে পরিবর্তিত হয়।
বর্তমানে তৈরি পোশাকশিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই শিল্পকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশে ফ্যাশন ডিজাইন শিক্ষা বিকশিত হয়েছে।
ফ্যাশন ডিজাইনিং ক্যারিয়ারের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়।
ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি হলো বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্প; এখানে নানা ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে। ডিজাইনিং শিক্ষা ফ্যাশনশিল্পের প্রযুক্তিগত দিকগুলো অন্বেষণের সঙ্গে সৃজনশীলতাকে বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। এই কোর্স পোশাক তৈরির প্যাটার্ন মেকিং, ফ্যাশন ইলাস্ট্রেশন, গ্রাফিক ডিজাইন, বাজারের প্রবণতা ও ক্রেতার বিভিন্ন বিশ্লেষণ–সম্পর্কিত দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করবে।
ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো—প্যাটার্ন মেকিং অ্যান্ড গার্মেন্টস কনস্ট্রাকশন, ফ্যাশন ইলাস্ট্রেশন, ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের উপাদান, ফ্যাশন অর্নামেন্টেশন, কম্পিউটার এইডেড ডিজাইন, ফ্যাশন মার্কেটিং, পোশাকের সংস্কৃতির প্রভাব, ফ্যাশন প্রযুক্তি, টেক্সটাইল ও পোশাকে সুতার ব্যবহার, ফ্যাশন রিটেইল মার্কেটিং অ্যান্ড মার্চেন্ডাইজিং, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, পোশাকের মান ব্যবস্থাপনা, টেকসই ফ্যাশন ডিজাইন, ফ্যাশন পোর্টফোলিও ও ডিজাইন কালেকশন।
স্নাতক স্তরের কোর্সগুলোর লক্ষ্য হলো ফ্যাশন আর্ট অ্যান্ড টেক্সটাইল ডিজাইনিংয়ের ধারণাগত মৌলিক বিষয় ছাড়াও পোশাক ডিজাইনিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও প্রযুক্তির সঙ্গে ছাত্রদের পরিচিত করা। এ ছাড়া ফ্যাশন বিপণন, ফ্যাশন সাংবাদিকতা, ফ্যাশন ফটোগ্রাফি সম্পর্কেও জানা যাবে।
পড়ার ন্যূনতম যোগ্যতা হলো উচ্চমাধ্যমিক পাস যে কেউ বিজিএমইএর ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বিইউএফটি) ফ্যাশন ডিজাইনিং অনার্স কোর্সে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। অনার্স শেষ হলে এখানে মাস্টার্সও করা যাবে।
ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা
ফ্যাশনশিল্প অথবা বাংলাদেশের পোশাকশিল্প কর্মসংস্থান জন্য একটি বিশাল খাত। ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এ খাতে একজন যথাযথ পেশাদার হয়ে ওঠার সুযোগ প্রচুর। এই যেমন ফ্যাশন ডিজাইনার, ফ্যাশন ব্র্যান্ড ম্যানেজার, ফ্যাশন মার্চেন্ডাইজার, ডিজাইনিং ম্যানেজার, ব্যক্তিগত স্টাইলিস্ট, সেলিব্রেটি স্টাইলিস্ট, উৎপাদক ব্যবস্থাপক, পোশাকের মান নিয়ন্ত্রক, গার্মেন্টস এক্সিকিউটিভ, নকশা ব্যবস্থাপক, ফ্যাশন ইলাস্ট্রেটর, ফ্যাশন উদ্যোক্তা ইত্যাদি।
এই সেক্টরে কাজের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি কাজের প্রতি নিষ্ঠাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। কাজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে তার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। অনেকে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবেও কাজ করে থাকেন।
ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য অবশ্যই একজনকে সৃজনশীল হতে হবে। আরও থাকতে হবে শিল্প বিষয়ে দক্ষতা, ড্রয়িংয়ের দক্ষতা, সফল হওয়ার আগ্রহ, সময় ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ, ব্যবসাভিত্তিক ধারণা ও নেতৃত্ব গুণ।
ছবি: লেখক