দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার দ্য মাসলিনের
শেয়ার করুন
ফলো করুন

শেখ সাইফুর রহমান

বিদেশি পণ্যের প্রতি আমাদের আগ্রহ তর্কাতীত। অথচ বাংলাদেশেও পাওয়া যায় বিশ্বমানের পণ্য। আমাদের কারুশিল্পীদের তৈরি পণ্যও বিদেশিদের কাছে তুলে ধরা যেতে পারে। তাতে করে আমাদের কারুশিল্পী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা উপকৃত হতে পারেন। এই ভাবনা থেকেই শুরু শুরু দ্য মাসলিনের। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এই উদ্যোগ নিয়েছেন বেস্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক তাসনুভা ইসলাম। আর এই প্রতিষ্ঠান চলছে তাঁদের লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আইকনএক্সের করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির অংশ হিসেবে।

দ্য মাসলিনের শাড়িতে
দ্য মাসলিনের শাড়িতে
ছবি: দ্য মাসিলন

বস্তুত এ ধরনের সামাজিক উদ্যোগের ভাবনা তাঁর মাথায় আসে করোনাকালে। তিনি বলছিলেন, ২০২০ সালে করোনার সময়ে সব কিছু যখন বন্ধ, মানুষ তখন দেশীয় পণ্যের প্রতি আগ্রহী হন। অথচ অন্য সময় তাঁরা বিদেশি পণ্য কেনার জন্য উদগ্রীব থাকেন। কিন্তু কেন এটা সব সময় হবে না? এই প্রশ্ন উত্তর খুঁজতে গিয়েই দ্য মাসলিনের শুরু। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে।

বিজ্ঞাপন

কথায় কথায় আরও জানা গেল, লা মেরিডিয়ান হোটেলের  লবিসংলগ্ন যে জায়গায় এখন নিয়ে দ্য মাসলিন, সেটা মূলত ছিল তাদের আসবাবপত্রের শোরুম। প্রাথমিকভাবে তারা চেয়েছিল এটাকে একটা শপিংমলে রূপান্তর করতে, যেখানে থাকবে সব বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড। তবে সেই ভাবনা থেকে তারা সরে আসে এবং দেশীয় পণ্য বিদেশিদের কাছে উপস্থাপনার উদ্যোগ নেয়।

দ্য মাসিলনের উদ্যোক্তা তাসনুভা ইসলাম
দ্য মাসিলনের উদ্যোক্তা তাসনুভা ইসলাম
ছবি: সাইফুল ইসলাম

শুরুটা হয়েছিল ছোট করেই, বললেন তিনি। তবে আস্তে আস্তে জায়গা বেড়েছে। এখন তাঁর প্রদর্শন কক্ষ বেশ সুপরিসর।

বিজ্ঞাপন

একই সঙ্গে আমার মনে হয়েছিল আমাদের কারুশিল্পী এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদেরও প্রয়োজন একটা জায়গা, যেখানে তাঁরা তাঁদের সৃষ্টিকর্ম প্রদর্শন করতে পারবেন। আমরা সে জন্যই এই উদ্যোগ নিয়েছি, আমাদের প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে, যোগ করলেন তাসনুভা।

দ্য মাসিলনে দেশি–বিদেশী ক্রেতারা
দ্য মাসিলনে দেশি–বিদেশী ক্রেতারা
ছবি: দ্য মাসিলন

ব্যক্তিজীবনে একজন টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার তিনি। তবে সেটা ছাপিয়ে তিনি এখন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ফ্যাশন ও জুয়েলারি ডিজাইনার আর কারুশিল্পীদের সুহদ। দেশের কারুপণ্য ও কারুশিল্পীদের উন্নয়নই এখন তাসনুভার লক্ষ্য।

দ্য মাসলিনে রয়েছে শেল্ফ আর হ্যাঙ্গার। আর তাতে থরে থরে সাজানো আছে বিভিন্ন ধরনের পণ্য। পোশাক থেকে গয়না, হাতে তৈরি কাগজ থেকে রিকশা পেইন্ট করা কারুপণ্য। এমন কি ইউএনডিপির সহায়তায় হওয়া বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন শিশুদের পেইন্ট করা ক্রোকারিজও দেখা গেল এখানে। তবে এসব হ্যাঙ্গার বা শেল্ফের জন্য কোনো ভাড়া দিতে হয় না; বরং নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রত্যেকে তাঁদের পণ্য বিক্রির অর্থ বুঝে নিয়ে যান।

দ্য মাসিলনে জামদানি শাড়ি দেখছেন একজন ক্রেতা
দ্য মাসিলনে জামদানি শাড়ি দেখছেন একজন ক্রেতা
ছবি: দ্য মাসিলন

আর হ্যাঁ, এখানে আছে একটি জামদানি তাঁত। প্রতি শুক্রবার একজন বয়নশিল্পী এসে সেখানে কাপড় বুনেও থাকেন। বাংলাদেশর নানা ধরনের কারুপণ্যকে বৈশ্বিক মানের ডিজাইনে উন্নীত করাই তাঁর লক্ষ্য। যাতে করে সেসব পণ্য তিনি ছড়িয়ে দিতে চান দেশে ও দেশের বাইের। এ জন্য দ্য মাসলিনকে তিনি দেশের বাইরে নিয়ে যেতে চান।
তবে এখন বাংলাদেশের বয়নশিল্পের ওপর তিনি জোর দিচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। এ বছরের শেষ দিকে জামদানি নিয়ে একটা ইভেন্ট করার ইচ্ছাও পোষণ করলেন তাসনুভা।

তাসনুভা চান একেবারে তৃণমূলের কারুশিল্পীদের জন্য তাঁর দরজা খোলা রাখতে। এমনকি এখানে সেইসব ডিজাইনাররা স্বাগত, যাঁরা তাঁদের নিজস্ব সৃজনশীলতা দিয়ে মৌলিক নকশায় পোশাক তৈরি করে থাকেন।

দ্য মাসিলনে শাড়ি দেখছেন একজন ক্রেতা
দ্য মাসিলনে শাড়ি দেখছেন একজন ক্রেতা
ছবি: দ্য মাসিলন

তরুণদেরও অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে দ্য মাসলিন। ফলে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা তাঁদের পণ্য শুধু দ্য মাসলিনেই দিয়ে থাকেন।

দ্য মাসলিনেই আপাতত ১০ থেকে ১২ জন আছেন বয়নশিল্পী ও ফ্যাশন ডিজাইনার। আর কারুশিল্পী ও অন্যান্য উদ্যোক্তা আছেন ২০ জনের মতো। এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কারণ, দ্য মাসলিন শুরু হয়েছিল ছোট পরিসরে। আস্তে আস্তে সেটা বাড়ছে নতুন পণ্য যোগ হওয়ার সঙ্গে। এখানে ভারমিলিয়ন, ওয়্যারহাউসের মতো উদ্যোক্তা যেমন আছে, তেমনি ঢাকার বাইরে কুষ্টিয়ার অরুণিমাও আছেন এখানে।

নতুন কেউ এখানে আসতে গেলে নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া মেনেই আসতে পারবেন। ভালো কাজ যাঁরা করেন, তাঁদের জন্য দ্য মাসলিনের দরজা খোলা, জানালেন তাসনুভা। তবে বললেন, এখানে মান নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে কঠিনভাবে। ফলে পণ্যের মান ভালো হলে অবশ্যই এখানে স্থান হবে, যেন উদ্যোক্তার পণ্য, ডিজাইনারের সৃষ্টিকর্ম এবং কারুশিল্পীদের কারুপণ্য।

নিজের জগতে তাসনুভা ইসলাম
নিজের জগতে তাসনুভা ইসলাম
ছবি: সাইফুল ইসলাম

তাসনুভা নিজের কাজের বাইরে সময় দেন মসলিসনকে। নিজে সময় পেলে তিনি পোশাক ডিজাইন করেন। বিশেষ করে শাড়ির প্রতি তাঁর আগ্রহ যথেষ্ট। এ জন্য শাড়ির ডিজাইন করতে পছন্দ করেন। অন্যান্য পোশাক নকশাও তিনি করে থাকেন। তাঁর করা ডিজাইনের শাড়ি এবং অন্যান্য পোশাক দ্য মাসলিন ব্র্যান্ডের অধীনেই বিক্রি হয়ে থাকে।

তাসনুভা ইসলাম শুধু নিজে ডিজাইন করছেন কিংবা অন্যদের পণ্যের প্রদর্শন ও বিক্রির মাধ্যমে তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তা নয়; বরং দেশের কারুপণ্যের উন্নয়নে কিছু ভূমিকাও রাখছে। এই যেমন সিল্ক সূতা দিয়ে মিহি কাপড় তৈরির একটা উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া এ ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও নিতে চান।

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৩, ০৯: ২২
বিজ্ঞাপন