নারী-পুরুষের বর্ণিল পোশাকের সংগ্রহ নিয়ে হাজির হরিতকী-মহাশয়
শেয়ার করুন
ফলো করুন

পূজা মানেই উৎসব। আর উৎসব মানেই মনমাতানো সব সাজপোশাক। যেকোনো উৎসবের বড় একটা অংশজুড়ে থাকে পোশাক। এক বছর পর দেবী দুর্গা বাপের বাড়ি আসছেন আর তাঁকে বরণ করতেই যত আয়োজন। সাজে, পোশাকে। ষষ্ঠী থেকে দশমী—পাঁচ দিনের জন্য আগে থেকেই তৈরি থাকা চাই। তাই প্রতিটি উৎসবের মতো পূজা সামনে রেখে ফ্যাশন হাউসগুলোও ব্যস্ত। অনলাইন-অফলাইন সর্বত্রই মনোহর পোশাক সংগ্রহ নিয়ে আসছেন সবাই। তবে মেয়েদের শাড়ি, কামিজ কিংবা কুর্তিতে চিরায়ত পূজার মোটিফগুলো দেখা যায় বেশি।


ছেলেদের পোশাক ডিজাইনে একটু কমই বৈচিত্র্য থাকে। কিন্তু এবার ছেলেদের পূজার পোশাক দিয়েই ‘মহাশয়’ নজর কেড়েছে ফ্যাশনপ্রেমীদের। বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ, সনাতন লোকসংস্কৃতি, ঢাকঢোল আর পূজার সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও নানা অনুষঙ্গ ফুটে উঠেছে মহাশয়ের সংগ্রহে। মূলত সংস্কৃতিকে ধরে রেখে ফ্যাশন ট্রেন্ডের সঙ্গে থাকার ব্যাপারটিই ‘মহাশয়’–এর পোশাকে ফুটে উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

এ সংগ্রহের পোশাকগুলো ট্র্যাডিশনাল, ক্ল্যাসিক্যাল, আর্ট, ফোক আর্ট ও মিথোলজিকে কেন্দ্র করে নকশা করা হয়েছে। দেশীয় সংস্কৃতির পাশাপাশি আছে ভারতীয় লোকশিল্প থেকে অনুপ্রাণিত ডিজাইনও। কারণ, সনাতন ধর্মের পূজা-পার্বণে ভারতীয় উপমহাদেশীয় পুরাণের একটা বিশাল প্রভাব রয়েছে।
ফাড় রাজস্থানের একধরনের চিত্রকর্ম, যা মূলত গোটানো কাগজে বা ফাড় ক্যানভাসে আঁকা এক বিশেষ লোকশিল্প। ইংরেজিতে 'Phad' বা বাংলায় ফাড়। এই নান্দনিক শিল্পকর্ম দিয়ে মহাশয় তৈরি করেছে পাঞ্জাবি। শারদীয় উৎসব সামনে রেখে এমন নানান লোকশিল্পকে প্রাধান্য দিয়েছে মহাশয়।


দেবীকে বরণ করতে ভক্তের পোশাকেও চাই বনেদিয়ানা আর আভিজাত্য। ফাড় ছাড়াও মহাশয় তাদের পাঞ্জাবি সংগ্রহ সাজিয়েছে উজ্জ্বল রং ও নানা চিত্রকর্মের নান্দনিকতায়। যেখানে ফুটে উঠেছে বনেদিয়ানা। কারণ, উজ্জ্বল রঙের পোশাক উৎসবের আমেজকে বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী যামিনী রায়ের আঁকা বেশ কিছু চিত্রকর্ম দিয়ে পাঞ্জাবি করা হয়েছে। আর তাতে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে লাল রংকে। কমলা রঙের ওপর করা হয়েছে কালীঘাটের পটচিত্র। যাঁরা গাঢ় রঙের পোশাক পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য নেভি ব্লুকে প্রাধান্য দিয়ে পাঞ্জাবি নকশা করা হয়েছে  পদ্মফুলের মোটিফে। কারণ, পদ্ম ছাড়া দুর্গাপূজা যেন অসম্পূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

ফ্যাশনে একরঙা পাঞ্জাবি আর কোটির চল চিরায়ত। এই পূজায় সাদাসিধে একরঙা পাঞ্জাবির ওপর মহাশয়ের কোটি যোগ করবে রঙিন ও শারদীয় আবহ। রঘুরাজপুরি পটচিত্র দিয়ে করা হয়েছে কোটি। কালীঘাট ও রঘুরাজপুরি পটচিত্র বাঙালি লোকসংস্কৃতির পুরোনো ঐতিহ্য। আর পূজায় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ছোঁয়ায় এই সংগ্রহ হয়ে ওঠে ক্ল্যাসিক। শরৎকাল চললেও গরমের দাপট কমেনি। তাই পূজার পাঁচ দিনই পাঞ্জাবি পরার কথা চিন্তা করবে না অনেকেই। সেটা মাথায় রেখে আরামদায়ক হাফহাতা শার্ট ডিজাইন করেছে মহাশয়। বিভিন্ন রঙের মিশ্রণে বিশ্ববিখ্যাত ট্রাইবাল আর্ট ‘ওয়ার্লি’ ও পদ্মফুলের মোটিফ শার্টে আভিজাত্য ফুটে উঠবে শতভাগ। যাঁরা এত রঙিন শার্ট পছন্দ করেন না কিন্তু ওয়ার্লি চিত্রকলা পছন্দ, তাঁদের জন্য হালকা রঙেও শার্ট ডিজাইন করা হয়েছে।


সুপরিচিত হরিতকীর স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার অনিক কুন্ডু পুরুষদের বিবেচনায় রেখে মহাশয় চালু করেছেন। মহাশয়দের জন্য এটি অনিক কুন্ডুর প্রথম পূজা সংগ্রহ। তবে বলা যেতে পারে, প্রথম সংগ্রহ দিয়ে করেছেন বাজিমাত। পূজায় ছেলেদের এই রঙিন ও বৈচিত্র্যময় সংগ্রহ দিয়ে যে সাড়া পেয়েছেন, তা ঈর্ষণীয়ই বটে।
 অনিক কুন্ডু জানান, ‘মূলত মেয়েদের পোশাকে এমন মোটিফ আমাদের মাধ্যমে হোক অন্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হোক, অনেক দিন যাবৎই পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ছেলেদের পোশাকে এই মোটিফগুলো ছিল না। তাই হঠাৎ এমন একটা বিষয় প্রাধান্য দেওয়ায় বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি। হরিতকীও হয়তো হিংসা করছে মহাশয়কে।’

হরিতকীও মেয়েদের জন্য এনেছে রঙিন সব থিমের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, স্কার্ট, কুর্তি, টপস ইত্যাদি। বিশেষ করে দশমীর দিন সাদা-লাল শাড়ি সব মেয়ের প্রথম পছন্দ। হরিতকী ক্ল্যাসিক সাদা-লাল রংকে প্রাধান্য দিয়ে এনেছে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শাড়ি। এই শাড়ির আঁচলে আছে ময়ূর ও দুর্গা। পূজার বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ঢাক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই পুরো শাড়িতে ঢাকঢোলের মোটিফ পূজার আমেজকে ধরে রাখবে শতভাগ। তা ছাড়া পদ্ম, ফাড় চিত্রকর্মেও ডিজাইন করা হয়েছে শাড়ি।


শুধু শাড়ি নয়, সালোয়ার-কামিজেও এই ট্র্যাডিশনাল চিত্রকর্মগুলো স্থান পেয়েছে হরিতকীর ডিজাইনে। মধুবনী চিত্রকলার আলোকে করা শিল্পী পৃথা ধৈমেদের আঁকা চিত্রকর্ম দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কামিজ। আছে কালীঘাটের পটচিত্র প্রাণিত ডিজাইনও। বিজয়া দশমীর সিঁদুরখেলার দৃশ্য দিয়েও ডিজাইন করা হয়েছে সালোয়ার-কামিজ। নেভি ব্লু রং প্রাধান্য পেয়েছে এই ডিজাইনে। বর্ডারে ব্যবহার করা হয়েছে পদ্ম ও আলপনার মোটিফ।

স্কার্ট এখন ফ্যাশনের বড় একটি অংশ। স্কার্টে এথনিক আর্ট ফুটে ওঠে আরও দারুণভাবে। রাজপুরি পটচিত্র, নৃত্যরত নারী, মোগল স্থাপত্য নকশার ছাপ আধিপত্য পেয়েছে হরিতকীর স্কার্টগুলোয়। সুসজ্জিত রাজ হস্তীবহর সেজেছে হরিতকীর স্কার্টে। এই হাতি ও হাতির গয়নার কারুকাজের নকশা করা হয়েছে ইন্দোনেশিয়ান বাটিকের স্টাইলে। টপসে ব্যবহার করা হয়েছে প্রজাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা।

Meitu

স্কার্টেও রাখা হয়েছে রাজহস্তী দেখাশোনা ও পরিচর্যাকারী প্রজাদের। মূলত এই রাজহস্তী ও রাজহস্তী দেখাশোনাকারী প্রজা ও তাদের পারিবারিক জীবনযাত্রার এক গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।তা ছাড়া অনেক যুগলই পছন্দ করেন পূজায় একই ধরনের পোশাক পরতে। মহাশয় আর হরিতকী তাদের পূজাকে আরও প্রেমময় করতে এনেছে ‘দাদা-দিদির শারদীয়া’ সংগ্রহ।

ছবিঃ হরিতকী ও মহাশয়

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬: ০০
বিজ্ঞাপন