নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থিত সাতটি মার্কেটের দক্ষিণে সবার প্রিয় এই চাঁদনী চক মার্কেট। এর উত্তরে সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত আছে ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটসহ আরও অনেক মার্কেট। জানা যায়, ১৯৫০ সালের পর ঢাকার আজিমপুর ও ধানমন্ডি এলাকায় বেড়ে ওঠা নতুন জনবসতির চাহিদা পূরণের জন্য বিপণিকেন্দ্র গড়ে তোলার কথা ভাবা হয়। পুরান ঢাকা ও নতুন ঢাকার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠে বিপণিবিতানগুলো। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৪ সালে গড়ে ওঠে ঢাকা নিউমার্কেট। এর অবস্থান ঢাকার আজিমপুর এলাকায়।
নিউমার্কেটের পূর্ব দিকে রয়েছে মিরপুর রোড, উত্তরে ঢাকা কলেজ, পশ্চিম পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা আর দক্ষিণ দিকে পিলখানা রোড। ১৯৬০ সালের দিকে নিউমার্কেটের পূর্ব পাশে মিরপুর রোডের ওপার গাউছিয়া মার্কেট ও নূর ম্যানশন মার্কেটের কাজ শুরু হয়। অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। মার্কেটপ্লেসটি প্রায় ৩৮ হাজার বর্গফুট এলাকাজুড়ে, যার মধ্যে গাউছিয়া মার্কেটের আয়তন প্রায় ২০ হাজার বর্গফুট আর নূর ম্যানশন প্রায় ১৮ হাজার বর্গফুট। এখানে একে একে আরও গড়ে উঠেছে চিশতিয়া সুপার মার্কেট, হোসাইনিয়া মার্কেট, মেহের প্লাজা, রহমানিয়া প্লাজা, গোল্ডেন প্লাজা। সাতটি মার্কেট একসঙ্গে এমনভাবে লাগোয়া, বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় পুরোটাই একটি মার্কেট।
এই ব্যস্ত মার্কেটগুলোর অবস্থান ঢাকার অত্যন্ত ব্যস্ততম এলাকা নীলক্ষেত ও সায়েন্স ল্যাবের মাঝখানে। মিরপুর রোড ধরে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে সহজেই এখানে আসা যায়। ঢাকা ও এর আশপাশের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় স্থান এটি। তবে নগরীর ব্যস্ততম এলাকা হওয়ায় এখানে যানজট লেগেই থাকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের সমাহার রয়েছে এখানে। এখন পুরো ঢাকা শহরে বড় বড় শপিং মল গড়ে উঠলেও ঈদের কেনাকাটায় গজ কাপড়ের জন্য চাঁদনী চক মধ্যবিত্ত থেকে অভিজাত শ্রেণির সব ক্রেতার কাছে প্রথম পছন্দের জায়গা।
পবিত্র রমজানের প্রথম দিনে ক্রেতার সংখ্যা খুব বেশি নয়। যাঁরা আসছেন, তাঁরা দামদস্তুর করছেন, যাচাই–বাছাই করছেন। রফিক টেক্সটাইলের বিক্রেতা সজলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মার্শালের কাপড়ে চিকনের কাজ করা থ্রি–পিস এবারের ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় আছে। দাম পড়বে ১ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। তিনি আরও বলেন, ২০ রোজা পর্যন্ত আনস্টিচড থ্রি–পিস কেনাকাটা চলে।
নোমানস ফেব্রিকসের নাজিমুদ্দিন বলেন, জর্জেট বারিশ কাপড়ের চাহিদা অনেক বেশি। শিফন, চিনন সিল্কের প্রতিও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। বম্বে কাপড়ের কদর দেখা যাচ্ছে অনেক। গজ পড়বে ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। ছেলেদের সুতি ও সিল্কের ওপর সিকুইনের কাজ করা পাঞ্জাবির কাপড়ের চাহিদা অনেক। কটন, থাই, জাপানসহ বিভিন্ন ফেব্রিকসের কাপড় দেখা যায় এখানে। কটন ও সিল্কের দাম পড়বে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা গজ। কারচুপি, জয়পুরি, চেরি জর্জেট কাপড় নিচ্ছেন ক্রেতারা দরজির কাছে পোশাক বানানোর জন্য। বারিশ সিল্ক, তান্দুরি কটন, লক্ষ্ণৌ প্রিন্ট, টিস্যুসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের প্রতি চাহিদার কথা জানান বিক্রেতারা।
৩৭ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে মধ্যবিত্ত থেকে অভিজাত শ্রেণির সব নারীর পছন্দের তালিকায় থাকে বুটিক হাউস চৈতী। মূলত সুতির ওপর স্ক্রিনপ্রিন্ট, ব্লক, সুতা ও অ্যাপলিকের কাজের আনস্টিচড থ্রি–পিস বিক্রি করে তারা। ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যায় পছন্দের রুচিশীল পোশাক এখানে। চাঁদনী চকের এই দোকানের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, প্রচুর পুরোনো ক্রেতা রয়েছেন তাঁদের। রোজার শুরুর দিকেই তাঁরা আসেন, কেনাকাটা করেন নিজের জন্য বা কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য।
ছবি: হাল ফ্যাশন