জিয়ান্নি ভারসাচির অনন্য সৃজনসম্ভারে মাতছে লন্ডন
শেয়ার করুন
ফলো করুন

কিংবদন্তি ফ্যাশন ডিজাইনার জিয়ান্নি ভারসাচির অনন্য সব নকশা নিয়ে ১৬ জুলাই থেকে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘জিয়ান্নি ভারসাচি রেট্রোস্পেকটিভ’ শীর্ষক প্রদর্শনী। এতে থাকছে ভারসাচির ৪৫০টির বেশি আইকনিক ডিজাইন।

ইতালির প্রয়াত ফ্যাশন ডিজাইনার জিয়ান্নি ভারসাচি। বিশ্বজোড়া খ্যাতিসম্পন্ন এই ডিজাইনারের সৃষ্টিসম্ভারের আলোচিত কিছু পোশাক নিয়ে ১৬ জুলাই থেকে আর্চেস লন্ডন ব্রিজে শুরু হচ্ছে অনন্য প্রদর্শনী। শিরোনাম: ‘জিয়ান্নি ভারসাচি রেট্রোস্পেকটিভ’।

বিজ্ঞাপন

এই প্রদর্শনীতে স্থান পাচ্ছে ভারসাচির ডিজাইন করা ৪৫০টির বেশি পোশাক। এর মধ্যে আছে প্রিন্সেস ডায়ানা, কেট মস, স্যার এলটন জন, নাওমি ক্যাম্পবেল আর জর্জ মাইকেলের পরা পোশাকও।

১৯৪৬ সালে ইতালির রেজিও ক্যালাব্রিয়াতে জন্ম নেওয়া জিয়ান্নি ভারসাচি ছোটবেলা থেকেই ফ্যাশনের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। তাঁর মায়ের ছিল সেলাইয়ের ব্যবসা। এতে তিনি মাকে সহায়তা করতেন। এভাবেই ফ্যাশনজগতে প্রবেশ জিয়ান্নির।

বিজ্ঞাপন

১৯৭৮ সালে নিজের ফ্যাশন ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করার পর পরবর্তী দশকে তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর ডিজাইন ছিল সাহসী, বর্ণিল ও গ্ল্যামারাস। তিনি কখনো কখনো বারোক প্রিন্ট ও উজ্জ্বল রঙের পাশাপাশি বিলাসী উপাদান ব্যবহার করে পোশাক তৈরি করতেন; আবার কখনো ১৯৯২ সালে ‘বন্ডেজ’ ও ‘ফেটিশওয়্যার’-এর মতো দাপুটে থিমের পোশাক নকশার সংগ্রহ উপস্থাপন করেন।

জিয়ান্নি ভারসাচি ১৯৯৭ সালে এক নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তাঁর মৃত্যুর আট দিন পর হত্যাকারী আন্দ্রে কুনানান আত্মহত্যা করেন। ঘটনাটি অবাক করে সবাইকে। তিনি ছিলেন তাঁর প্রজন্মের অন্যতম প্রভাবশালী ফ্যাশন ডিজাইনার।

তাঁর মৃত্যুর পর, বোন দোনাতেল্লা ভারসাচি কোম্পানির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টরের দায়িত্ব নেন এবং তাঁর উত্তরাধিকার অব্যাহত রাখেন। তবে সম্প্রতি গুঞ্জন উঠেছে এই পদ থেকে শিগগিরই অবসর নিতে যাচ্ছেন দোনাতেল্লা। কারণ, ইতিমধ্যে এই ব্র্যান্ডের হাতবদল হয়েছে।

আয়োজকদের দেওয়া তথ্যানুসারে, এই প্রদর্শনী নব্বই দশকের ফ্যাশনের এক ‘ক্যালাইডোস্কোপিক’ বা বহুমুখী অভিজ্ঞতা দেবে দর্শকদের। এর আগেও এই প্রদর্শনী নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, জার্মানি, সুইডেন ও স্পেনে অনুষ্ঠিত হয়েছে; তবে লন্ডনের সংস্করণটি সম্পূর্ণ নতুন রূপে উপস্থাপনের পরিকল্পনা চলছে। জানা যায়, এটি এখন পর্যন্ত হবে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে পুরোনো সংগ্রহের প্রদর্শনী। এখানে থাকছে পোশাকের পাশাপাশি আনুষঙ্গ, স্কেচ, ছবি ও সাক্ষাৎকার। এসব মিলিয়ে এক অভিনব শিল্পযাত্রায় রূপ নেবে।

প্রদর্শনীর কিউরেটর কার্ল ফন ডার আহের মতে, ‘এই প্রদর্শনীকে এক শব্দে “বিশেষ অর্থবহ” হিসেবে দেখা যায়। তিনি বলেন, জিয়ান্নি ভারসাচির দাপুটে ও সৃজনশীল, নির্দ্বিধ দৃষ্টিভঙ্গি ফ্যাশনকে বদলে দিয়েছিল। আর লন্ডন এককথায় একটি সৃজনশীল শহর, যেখানে সংস্কৃতির ছাপ স্পষ্ট। তাঁর এই ঐতিহ্য উদ্‌যাপনের জন্য উপযুক্ত মঞ্চ।’
এ ছাড়া প্রদর্শনীর নতুন অংশ হচ্ছে ‘জিয়ান্নি ভারসাচি ইন লন্ডন’। এই শিরোনামে থাকছে তাঁর ব্রিটিশ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে উপস্থিতির ওপর বিশেষ নজর।

ভারসাচির কাজ যে শুধু পোশাক নয়; বরং সংগীত, চলচ্চিত্র ও তারকাসংস্কৃতির মধ্য দিয়েও ছড়িয়ে পড়েছিল, তা এখানে বিশেষভাবে তুলে ধরা হবে। এলটন জনের সঙ্গে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব, প্রিন্সেস ডায়ানার স্টাইল পুনরাবিষ্কারের অংশ হিসেবে ভারসাচির পোশাক পরে এই প্রদর্শনীতে অংশ নেবেন মডেলরা।

বিশ্বসংস্কৃতির সঙ্গে ভারসাচির গভীর সংযোগ বহুবার সামনে এসেছে। যেমন ধরা যাক, ১৯৯১ সালে ‘ফ্রিডম’ গানের কথা। এই গানের ভিডিওতে নাওমি ক্যাম্পবেল, লিন্ডা ইভানজেলিস্টা, সিন্ডি ক্রফোর্ড ও ক্রিস্টি টার্লিংটনকে ভারসাচির ক্যাটওয়াকে গানটির লিপ-সিঙ্ক করতে দেখা যায়, যা সংগীত ও ফ্যাশনের যুগলবন্দীর এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে।

আর্চেস লন্ডন ব্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিজ কোরাভোস বলেন, ‘জিয়ানি ভারসাচি ছিলেন তাঁর সময়ের এক প্রতিভাবান ডিজাইনার। তাঁর প্রভাব এখনো আমাদের আধুনিক সংস্কৃতি ও ফ্যাশনে টিকে আছে।’

এই প্রদর্শনী নিঃসন্দেহে ফ্যাশনপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে, যেখানে তাঁরা দেখতে পাবেন কীভাবে একজন শিল্পী তাঁর সৃজনশীলতা দিয়ে যুগের ধারা বদলে দিতে পারেন। ভূমধ্যসাগরের তীরে জন্ম নেওয়া ভারসাচি এর শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।

ছবি: আর্চেস লন্ডন ব্রিজের ওয়েবসাইট ও ইন্সটাগ্রাম

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫, ০৬: ০০
বিজ্ঞাপন