ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী আনিকা তাবাসসুম। ছোটবেলা থেকেই টেলিভিশনে শিল্পীগোষ্ঠীর মাটির গয়নার প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। শান্তিনিকেতনের মাটির গয়না তাঁকে আকৃষ্ট করে। একটু বড় হলে নিজের জন্য এমন গয়নার খোঁজ করতে গিয়ে হতাশ হয়ে নিজেই মাটির গয়না বানানো শেখেন।
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন পোড়ামাটির কাজ, স্থাপত্য ইত্যাদি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে গয়না বানানো শুরু করেন। পরবর্তীকালে ভাবেন, তাঁর মতন নিশ্চয়ই আরও অনেকে এমন গয়নায় নিজেকে সাজাতে চান, তবে পারছেন না। এমন চিন্তা থেকেই ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নিজ উদ্যোগে শুরু করেন ‘শক্তি’।
মাটির গয়না তৈরিতে কাঁচামাল জোগাড় করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শক্তির গয়না তৈরিতে যে বিশেষ মাটি ব্যবহৃত হয়, তা আমাদের দেশে পাওয়া যায় না। তাই দেশের বাইরে থেকে মাটি এনে কাজ করতে হয়। তবে আমাদের দেশের পালপাড়া থেকে মাটি সংগ্রহ করেও কাজ করে থাকেন আনিকা। গয়না নকশা করা, বানানো—সবকিছুই তিনি ও তাঁর ছোট বোন মিলে করেন। আলাদা কোনো কারিগর তাঁরা রাখেননি। নকশার ক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী নকশায় বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকলেও গতানুগতিক কাজও করতে হয় বলে জানালেন তিনি। এ ছাড়া ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী কাস্টমাইজ গয়নাও তৈরি করেন তাঁরা। রঙের ক্ষেত্রেও ক্রেতাদের জন্য রয়েছে রং বাছাইয়ের সুযোগ। তাঁদের সব গয়নাই পাঁচটি ভিন্ন রঙে পাওয়া যায়।
মাটির গয়না তৈরি থেকে শুরু করে নকশা করা, পোড়ানো, শুকানো—সব মিলিয়ে বেশ খানিকটা সময় লেগে যায়। ছোট গয়না বানাতে মোটামুটি ৩ থেকে ৪ দিন লাগলেও ঐতিহ্যবাহী ভারী গয়না বানাতে মাঝেমধ্যে ১০ থেকে ১৫ দিনও লেগে যায়। এ সময়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে তুলনামূলক ভালোই সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। এক হাতে তৈরি করেন বলে আগে থেকেই সময় চেয়ে নেন তিনি। তবে কিছু ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীনও হতে হয় বলে জানালেন আনিকা।
শক্তিকে ব্যবসা হিসেবে আখ্যায়িত না করে শিল্পচর্চার একটি মাধ্যম বলতে অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন আনিকা। বর্তমান প্রজন্মের মাটির গয়নার প্রতি আগ্রহ দেখে নাকি তিনি সত্যিই খুব অবাক হন। সবচেয়ে বেশি সাড়াও তাঁদের কাছ থেকেই পেয়েছেন।
কিন্তু মাটির গয়নার পেছনে যে শ্রম প্রয়োজন, তার তুলনায় মূল্য নির্ধারণে কিছুটা বিপাকে পড়তে হয় বলে জানালেন তিনি। তবে এ শিল্প যেহেতু তরুণেরা নিজেদের সাজের অনুষঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করেছেন, তাই এ শিল্প আবারও আগের মতন সাড়া ফেলবে বলে আশা রাখেন শক্তির প্রতিষ্ঠাতা আনিকা তাবাসসুম।