শিকড় শক্ত না হলে গাছ বাঁচে না। আবার সেই শিকড়কে ঠিক রেখে মুক্তভাবে ডালপালা মেলতে পারলেই সে গাছ একদিন মহীরূহ হয়। ফ্যাশনের বেলায় এই গাছের গল্পটির খুবই সার্থক রূপ দেখতে পাই আমরা। নিজেদের ঐতিহ্যকে ধারণ করে আধুনিক উপস্থাপনের মাধ্যমে তাকে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করার কোনো বিকল্প নেই এখন। আর ঠিক এই মূলমন্ত্রের প্রতিফলনের দেখা মিলল অনলাইন গয়নার উদ্যোগ কাদম্বরীর সৃজনে। পূজার সাজপোশাকে ফিউশন থাকলেও সকলেই চান ঐতিহ্যবাহী আমেজ।
কাদম্বরীর প্রাণভোমরা আগাথা অন্যা মন্ডল বললেন,'পূজার গয়নায় এবার আমরা চেষ্টা করেছি সাবেকিয়ানা আর আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটাতে। বোধন থেকে বিসর্জন, ষষ্ঠী-সপ্তমীর প্যান্ডেল হপিংয়ের মর্ডান লুক, অষ্টমীর অঞ্জলির জন্যে স্নিগ্ধ সহজ লুক, নবমীর পুরোপুরি ট্র্যাডিশনাল লুক কিংবা দশমীর সিঁদুর খেলার লুক সব কিছুর সঙ্গেই যেন মানিয়ে যায়, অর্থাৎ এক গয়না দিয়েই যেনো অনেকগুলো লুক ক্রিয়েট করা যায় সেই চিন্তা থেকেই আমরা চেষ্টা করেছি একটু ফিউশন ধাঁচে কিছু গয়না আনতে'। তাঁর এই খুব সহজ ভঙ্গীতে বলা কথাগুলোর মাঝেই কিন্তু মিনিমালিজম, মাল্টি পারপাস ফ্যাশন আর স্লো ফ্যাশনের মূলমন্ত্র লুকিয়ে আছে।
গয়নাগুলোর দিকে একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, ট্র্যাডিশনাল প্যাটার্নের মধ্যে থেকেই তাকে ভেঙেচুরে একেবারে মনের মাধুরীর সঙ্গে ফিউশন স্টাইল মিশিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে এগুলো।
অন্যার কাছ থেকেই জানা গেল, ম্যাটেরিয়াল হিসেবে ব্রাস ও কপারই বেশি ব্যবহার হয়েছে। গোল্ড বা সিলভার প্লেটিং ছাড়াও ট্রেন্ডি লুকের জন্য কিছু গয়নায় দেওয়া হয়েছে অ্যান্টিক ফিনিশ। এছাড়াও উৎসবের আমেজ আনতে বসানো হয়েছে কুন্দন, পুঁতি ও বিভিন্ন রঙের নজরকাড়া পাথর। এবারের কালেকশনে চোকার, লম্বা নেকপিস, বড় স্টেটমেন্ট দুলসহ রাখা হয়েছে টানা নথ আর নান্দনিক অথচ হালকা ডিজাইনের টিকলি। অন্যার বয়ানে, শুধু পূজারর সাজই নয়, বছর জুড়ে সব ধরনের লুকের সঙ্গেই যেন মানিয়ে যায় গয়নাগুলো, সে চিন্তা থেকেই এবারের কালেকশন ডিজাইন করেছেন তিনি।
এখন সময়টাই মুক্ত ফ্যাশনের। এখানে ঐতিহ্যবাহী শাড়ির সাজের সঙ্গে গয়নাগুলো মিলিয়ে পরা হলেও এমনিতে ওয়েস্টার্ন, ফিউশন আর যেকোনো ক্যাজুয়াল ওয়্যারের সঙ্গে এই গয়নাগুলো মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে পরা যাবে। আবার অন্যা বললেন, তিনি সচেষ্ট থাকেন যাতে তাঁর সৃজন ও সেগুলোর উপস্থাপন বা স্টাইলিং দেখে যে কোনো নারী নিজেকে সেখানে দেখতে পান। 'এই গয়নাগুলো আমারই জন্য'-এরকম একটি অনুভূতি দেওয়ার প্রয়াস থাকে কাদম্বরীর কাজে। আর সেই সঙ্গে প্রতিটি গয়নার মাধ্যমে এক ধরনের স্টোরি টেলিং বা গল্পের বয়ান উপস্থাপন করতে পছন্দ করেন অন্যা। আর তা তিনি ফুটিয়ে তোলেন এর নকশা আর উপস্থাপনায়। কাদম্বরীর গয়নার নিখুঁত নকশা আর মানের কারণে ২০১৭ সালে শুরু করা এই উদ্যোগটি এখন ফ্যাশনিস্তাদের আস্থা অর্জন করেছে।
কাদম্বরীর শুরুটা কিন্তু গয়না দিয়ে হয় নি, জানা গেল অন্যার কাছ থেকে। পেপার গ্রাফটিং করতেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সৃজনশীল কিছু করে নিজেকে ভালো রাখার তাগিদ থেকে। কিন্তু এত এত কাগজের অপচয় করতে হাত উঠত না তাঁর। এরপর নিজে হাতে গয়না বানাতে গিয়ে গয়নার উপকরণ আর ডিজাইন নিয়ে কাজ করা শুরু। কারিগরদের সঙ্গে কাছে থেকে কাজ করতে করতে নিজের সৃষ্টিশীল নকশার প্রকাশ ঘটানো শুরু করেন তিনি ধাতব এসকল গয়নায়। এরপর পিছু ফিরে তাকাতে হয় নি, বললেন কাদম্বরীর কর্ণধার আর এখন অন্যা আর কাদম্বরীর সৃজনশীল ডিজাইনার পিসগুলো পাকাপোক্ত জায়গা করে নিয়েছে ক্রেতাদের গয়নার বাক্সে আর হৃদয়েও।
ছবি: কাদম্বরী