ঢাকা মেকার্স ২—টোট ব্যাগই এবার মেকার্স মার্কেটের হিরো

ঢাকার প্রাণকেন্দ্র গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোডের আলোকি কনভেনশন সেন্টারে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চলছে বাংলাদেশের আর্ট, ক্র্যাফটস ও ফ্যাশনের বর্ণিল উৎসব ‘ঢাকা মেকার্স ২’। প্রায় প্রতিদিনই জনসমাগমে মুখর হচ্ছে আলোকি। জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় কোনো অনুষঙ্গ বাদ যায়নি এই আসরের মার্কেটপ্লেস থেকে। নিজেকে সাজানো থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর জিনিস—সব পাওয়া যাচ্ছে এই আয়োজনে। তা–ও আবার সব দেশে তৈরি পণ্য। নিজস্ব শিল্পী, কারিগর, ডিজাইনারদের হাতের ছোঁয়া সবকিছুতে। এতসব পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন শতাধিক আর্টিজান ও শিল্পী। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, প্রায় প্রতিটি স্টলেই আছে টোট ব্যাগ। নজর কাড়ছে বিভিন্ন স্টাইলের টোট ব্যাগগুলো। কেউ সাদাসিধা কাপড়ের ওপর করেছেন ডিজিটাল প্রিন্ট, কেউ নিজ হাতে এঁকেছেন ল্যান্ডস্কেপ, কেউ করেছেন ক্যালিগ্রাফি। অভিনবত্ব ও সৃজনশীলতা ফুটে উঠেছে প্রতিটি টোটে।

রিকশা হুড ম্যাটেরিয়ালস, অর্থাৎ যে আর্টিফিশিয়াল লেদার দিয়ে রিকশার হুড তৈরি হয়, হুবহু সেটা দিয়ে টোটের ওপর প্যাচ করেছে হল্লা। যে যাচ্ছে এই স্টলের সামনে দিয়ে, ব্যাগগুলো একবার হলেও ছুঁয়ে দেখছে। রেমি কটনের ওপর রিকশার হুডের মতো সোনালি, নীল, লাল, গোলাপি, সবুজসহ চোখধাঁধানো রঙের সমন্বয় ঘটেছে এই প্যাচে। রিকশা হুডের মতো রঙিন হওয়ায় সবার নজর কাড়ছে এই টোটগুলো।
রিকশা খুব রঙিন এক বাহন। এই আবহটা হোম ডেকরে ও ঘরে কীভাবে নিয়ে আসা যায়, সেই চিন্তা থেকেই টোট ব্যাগে এই ডিজাইন ব্যবহার করেছে বলে জানান হল্লার স্বত্বাধিকারী শিমলা হক।

হ্যান্ডপেইন্ট, ডিজিটাল প্রিন্টের টোট সবচেয়ে বেশি চলছে। যাঁরা ভিন্ন কিছু চান, তাঁদের চলে যেতে হবে চারকোলে। চারকোলের উদ্যোক্তা আরমান চৌধুরী লিমন। তরুণ এই উদ্যোক্তা টোট ব্যাগের ওপর করেছেন মেটালের কাজ। কাঁসা–পিতলের চিত্রকর্ম ফুটে উঠেছে তাঁর টোটে। পটচিত্র ও নিজস্ব স্টাইল অনুসরণ করে এই ডিজাইনগুলো করেন তিনি। ঢাকা মেকার্স ২-এর এই আসরের টোট ব্যাগগুলোতে তিনি পটচিত্রে নারীকে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। কাঠ ও মেটালকে শুধু শোপিস হিসেবে নয়, ব্যবহারিক পর্যায়ে কীভাবে নিয়ে আসা যায়, সেই চিন্তা থেকেই টোটের ওপর এসব ধাতব ডিজাইন করা বলে জানান আরমান।

মেটাল কিংবা চকচকে কোনো উপকরণ নয়, বরং টোটে ফুল ও পাতার ছাপের ইকো ডাই করেছে স্পোরকেস। গাছের পাতার স্টিম দিয়ে ডাই করা প্রতিটি ডিজাইন। নকশাগুলো ভিন্ন। এমনকি রং কেমন হবে, সে নিয়ন্ত্রণও থাকে না শিল্পীর হাতে। কারণ, পুরোটাই প্রাকৃতিক উপায়ে করা। একরঙা টোট ব্যাগগুলোর ওপর আলাদা একটি ডাই করা ফেব্রিক বসিয়ে ডিজাইন করা হয় এগুলো।  

তরুণদের মুখে প্রচলিত বাক্যগুলোকে তুলে ধরেছেন ব্যাড গার্লস নেশনের মেলিনা গোমেজ তাঁর ডিজাইন করা টোট ব্যাগগুলোতে। কটন কাপড়ে স্ক্রিন প্রিন্ট করা এই ব্যাগগুলো নজর কাড়ছে ক্রেতাদের।

ক্যালিগ্রাফিশিল্পী নাজম আনোয়ার তাঁর অন্যান্য কাজের পাশাপাশি হাজির হয়েছেন দুই ধরনের টোট ব্যাগ নিয়ে। ফেব্রিকে ক্যালিগ্রাফি করা এমন টোট ব্যাগ যেমন আছে, তেমনি ক্রেতারা চাইলে প্লেইন টোট কিনে পছন্দমতো কিছু লিখিয়ে নিতে পারেন।

কাঁথা স্টিচ করা ফেব্রিক দিয়ে স্টাইলিশ কিছু টোট এনেছে ‘বাসা’। ক্যানভাস ফেব্রিকে বিমূর্ত সব চিত্র সুই–সুতাতে ফুটিয়ে তুলেছে কার্পাস। আর যাত্রার প্যাচ ওয়ার্ক করা টোট তো সবার পছন্দের।

ডিজিটাল প্রিন্টের বিচিত্র সব টোট নিয়ে ঢাকা মেকার্স ২-এর এই আসরে এসেছে অংকন। আর ব্লকের ছাপ দেওয়া টোট নিয়ে আছে ‘ছাপ’। মাছ, ফুল, পাতা ও নানা ছাপ দেওয়া হয়েছে এসব ব্যাগে।

বসফরাস তো নিজেদের স্টলের পুরো একটি দেয়ালকে বানিয়েছে টোট ব্যাগের ক্যানভাস। বিভিন্ন ফেব্রিকের ওপর অ্যাস্থেটিক চিত্রের স্ক্রিন প্রিন্ট করা সব টোট শোভা পাচ্ছে এই দেয়ালে।

৬০০ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে পাওয়া যাচ্ছে এই টোটগুলো। লক্ষণীয় সব কটি উদ্যোগের বিভিন্ন অনুষঙ্গের পাশাপাশি প্রাধান্য পেয়েছে টোট। জনপ্রিয়তার কারণ জানতে চাইলে এক ক্রেতা জানান, তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় আলাদা অনেক ডিজাইনের এই ব্যাগ কেনা যায়। সহজে অনেক জিনিস টোট ব্যাগে ক্যারি করা যায় ও একই সঙ্গে এই ব্যাগ এখন খুব ফ্যাশনেবল।

ছবি: আশিকুর রহমান