রাজধানীর লালমাটিয়ার টি টংয়ে ঢুকেই দেখা মিলল তাহমিনা তমুর সঙ্গে। পেশায় তিনি একজন উদ্যোক্তা। গয়নার ব্র্যান্ড নুবা জংশনের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার। সম্প্রতি টি টংয়ে তাঁর একক গয়নার প্রদর্শনী চলছিল। গল্পচ্ছলে তিনি বলেন, নিজের সংগ্রহে থাকা গয়নাগুলো দেখে সবাই খুব প্রশংসা করতেন। তখন মনে হলো, নিজের পছন্দ অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায় কীভাবে। বিভিন্ন ধরনের গয়না সংগ্রহের আগ্রহ থেকেই তখন শুরু হয় এই ব্যবসা।
ঘুরে ঘুরে কালেকশন দেখতে দেখতে চোখ আটকে গেল কিছু গয়নার দিকে। জিজ্ঞাসা করতেই তিনি জানালেন, এগুলো মহিষের শিং দিয়ে বানানো। গয়নায় মহিষের শিংয়ের ব্যবহার কিছুটা নতুনই বলা যায়। মহিষের শিং দিয়ে তৈরি বালাগুলো একেবারে গোল হয় না। কিছুটা চ্যাপ্টা আকৃতির হয় বলে বালাগুলোও নতুনত্ব পেয়েছে। প্রথমে গরুর শিং দিয়ে বানানোর চেষ্টা করলেও ভেঙে যায়, কিন্তু মহিষের শিংয়ের টেক্সচার সুন্দর হয়, আর স্থায়িত্বও অনেক বেশি। বালা থেকে শুরু করে গলার মালা, এমনকি হাতের আংটিও তৈরি করা হয়েছে মহিষের শিং দিয়ে।
আংটিগুলোর নকশাও একেকটা একেক রকম। কোনোটা চৌকো, কোনোটা ত্রিভুজ আবার কোনোটা গোল নকশার। কিছু গয়না পলিশ করা আবার কিছু একদম ‘র’ রাখা হয়েছে। স্বকীয়তা বজায় রাখতে গয়নাগুলোতে অন্য রঙের ব্যবহার করা হয়নি। শিংয়ে মূল রং কালোই রেখে দেওয়া হয়েছে। শিংয়ের একদম গোড়ার মোটা অংশ দিয়ে তৈরি হয়েছে বালা আর চূড়ার অংশ নিয়ে বানানো হয়েছে আংটি। আরেকটি মজার জিনিসও তৈরি করা হয়েছে মহিষের দাঁত দিয়ে। ভিজিটিং কার্ড সাজিয়ে রাখার জন্য কার্ড হোল্ডার। আর চুলের কাঁটা তৈরি হয়েছে মহিষের পাঁজরের হাড় থেকে।
তাহমিনা তমু আরও জানান, শুধু মহিষের শরীরের অংশ দিয়েই নয়, বীজও ব্যবহার করা হয়েছে গয়নায়। শিম, চন্দনবীজ ও রুদ্রাক্ষের মালাগুলো ক্রেতাদের বেশ পছন্দের। এ ছাড়া রয়েছে ধাতুর গয়না। ভারত থেকে আনা মেটেরিয়ালকে পলিশ করে রূপ দেওয়া হয় কখনো রূপা, নিকল বা অক্সি কিংবা সোনালি রঙে। গয়নাভেদে পলিশ করা হয়। এর সঙ্গেই বিভিন্ন পাথর ও মুক্তা যোগ করে বানানো হয় গলার হার ও কানের দুল। তবে গয়নাগুলো একেবারেই ভারী নয়, তাই ব্যবহার করেও মিলবে আরাম।
নুবা জংশনে রয়েছে সব ধরনের গয়না। তাহমিনা জানান, গয়নার আসলে কোন দেশ-বিদেশ হয় না। এই জংশনে সব ধরনের ক্রেতাই আসেন। একেকজনের পছন্দ ও চাহিদা একেক রকম। তাই বিভিন্ন দেশের সব ধরনের গয়নার সংগ্রহই রাখার চেষ্টা করি। ইচ্ছা আছে বিদেশের গয়নাগুলো আরও উন্নত উপায়ে দেশে তৈরি করার। তাহলে একই ছাদের নিচে ক্রেতারা তাঁদের পছন্দের জিনিস দ্রুত পেয়ে যাবেন।
জংশনের সংগ্রহে রয়েছে নেপাল, ভুটান, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের নানা ধরনের গয়না। হালকা থেকে ভারী—গলার হার, পায়েল, দুল, জুয়েলারি পার্স—সবই পাওয়া যাবে এখানে। আর এ জন্য নুবা জংশনের পেজে ঢুঁ মারলেই হবে।
ছবি: নুবা জংশন ও হাল ফ্যাশন