কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলে এখনোও টিকে আছেন ফুটবল রাজপুত্র লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনার হয়ে এবার শিরোপা জিততে পারলেই শেষ পালকটি যোগ হবে তাঁর উজ্জ্বল মুকুটে। সেটার জন্যই তো এত দূর আসা। কোটি কোটি ভক্তরা আছেন সেই অপেক্ষায়। বছরের পর বছর তাঁর পায়ের জাদুর সবচেয়ে কাছের সাথি কিন্তু তাঁর বুট।
মাঠের খেলায় যে অনুষঙ্গটি তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী। আর এই বুট কোনো সাধারণ বুট না। খোদ লিওনেল মেসির জন্য আলাদাভাবে তৈরি করেছে বিশ্বখ্যাত জার্মান স্পোর্টস ব্র্যান্ড অ্যাডিডাস। কাতারে আক্ষরিক অর্থেই মেসির সোনালি ছোঁয়া থাকছে তাঁর নতুন অ্যাডিডাস বুটের কারণে। আর এই বুট নিয়ে দু-চার কথা বলাই যায়। বিশেষ করে মেসির বুট বলে কথা।
কাতার বিশ্বকাপে মেসি যে বুট জোড়া পরে মাঠে নামছেন, সেটার নাম অ্যাডিডাস এক্স স্পিডপোর্টাল লেয়েন্ডা মেসি ২০২২। স্প্যানিশ ভাষায় লেয়েন্ডার অর্থ লিজেন্ড বা কিংবদন্তি। ২০০৬ সালে মেসি যখন প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলতে নামেন, তখনো পরেছিলেন অ্যাডিডাসের বুট। ১৬ বছর আগের বিশ্বকাপে তাঁর পরা অ্যাডিডাস এফথার্টি বুট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছে এবারের বুট জোড়া।
অ্যাডিডাসের এই সাদা ও সোনালি বুট জোড়ায় রয়েছে মেসির সন্তানদের নাম। একটি বুটের এক পাশে থিয়াগো ও মাতেওর নাম ও জন্মতারিখ লেখা। সঙ্গে তাঁর আদরের তিন ছেলের মা ও শৈশবের প্রিয়তমা আন্তোনেয়া রোকুজ্জোর নামও মুদ্রিত আছে। মেসির জার্সি নাম্বার ১০; এটা জুতার পেছনে এমব্রয়ডারি করা আছে নিখুঁতভাবে। নীল, সাদার ছোঁয়া রয়েছে বুটে, যা আর্জেন্টিনার পতাকার প্রতিনিধিত্ব করে। স্পিড-বুস্টিং বুট জোড়ার কিছু বৈশিষ্ট্য অন্য সব বুট থেকে আলাদা করেছে। আর হবেই না কেন। ফুটবল কিংবদন্তির জন্য তৈরি যে! এই বুটের কিছু বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আছে অ্যান্টি-স্লিপ সিলিকন হিল প্রিন্ট, কার্বন ফাইবারসহ আলট্রা-লাইটওয়েট, দ্রুততম গতিতে দৌড়ানোর জন্য আউটসোল, স্টাড কনফিগারেশন ও হাই-স্পিড স্টেবিলিটি সিস্টেম।
মেসির এক্স স্পিডপোর্টাল লেয়েন্ডা বুট এডিডাসে পাওয়া যাচ্ছে। অ্যাডিডাসের ওয়েবসাইটে এর মূল্য দেওয়া আছে ৩০০ মার্কিন ডলার। মেসি শিরোপা জিতলে এই বুট জোড়ার মূল্য সম্ভবত আকাশচুম্বীই হবে।
মেসির অ্যাডিডাস জার্নি
শুধু অ্যাডিডাস না, মার্কিন স্পোর্টস ব্র্যান্ড নাইকির বুটও পরেছেন মেসি। ২০০৫ সালের U20 বিশ্বকাপে তরুণ মেসি পরেছিলেন নাইকি T-90 বুট।
যদিও এক বছরের কম সময়ের মধ্যে মেসিকে পাঁচ বছরের চুক্তিতে সই করায় অ্যাডিডাস। তারপর থেকে মেসি অন্য কোনো ব্র্যান্ডের বুট পরেননি।
২০১৭ সালে অ্যাডিডাসের সঙ্গে আজীবন চুক্তি স্বাক্ষর করেন মেসি। এ জন্য মেসিকে প্রতিবছর ১০.৫ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে অ্যাডিডাস।
বিশ্বকাপ ২০০৬
১৬ বছর আগে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলে মেসি পরেন অ্যাডিডাস এফথার্টি বুট। বুট জোড়ার সাদা জমিনে নীল আর সোনালির ছোঁয়া ছিল। আর্জেন্টাইন আরেক কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় ওই বুটের নকশায়।
বিশ্বকাপ ২০১০
চার বছর পর মেসি দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত আসরে পরেছিলেন অ্যাডিডাসের এফফিফটি এডিজেরো বুট। এই একটি মডেল, যা তিনি বছরের পর বছর ধরে পরেছেন।
বিশ্বকাপ ২০১৪
ব্রাজিলে হওয়া বিশ্বকাপেও মেসি এফফিফটি অ্যাডিজেরোতেই ভরসা রাখেন। তবে রং ছিল ভিন্ন।
বিশ্বকাপ ২০১৮
চার বছর আগে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত আসরে মেসিকে দেখা যায় তাঁর ছেলে থিয়াগোর নাম লেখা উজ্জ্বল সবুজ নেমেজিজ এইটিন ওয়ান বুট পরতে।
ছবি: রয়টার্স ও ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডল