দেশি ফ্যাশনে বোহেমিয়ানা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ভবঘুরে, পিছুটান নেই কিংবা যাযাবর অর্থে একটা শব্দ অনেক প্রচলিত, তা হলো বোহেমিয়ান। অনেকেই নিজেকে এই আখ্যা দিতে পছন্দ করেন। শব্দটি এখন মানুষের জীবনধারা আর ফ্যাশনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে সত্যিকার অর্থে বোহেমিয়ান হয়ে ওঠা অন্য গল্প। আজকের আলাপ বোহেমিয়ান বা ফ্যাশনে বোহোর প্রভাব নিয়ে। চেক প্রজাতন্ত্রের একটি অঞ্চল হলো ‘বোহেমিয়া’। এই অঞ্চলের মানুষদের নির্দিষ্ট বাসভূমি নেই বা তাঁরা যাযাবর। এই গোষ্ঠী জিপসি ও রোমানি নামেও পরিচিত। যাদের বলা হয় বোহেমিয়েন্স। এখান থেকেই এসেছে ‘বোহেমিয়ান’ শব্দটি। মুক্তমনা এসব মানুষের কোনো পিছুটান নেই। আর তাঁদের পোশাক–আশাকেও রয়েছে অন্য সবার চেয়ে ভিন্নতা।

অন্য কারও পছন্দে নয়, বরং ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যই মূল বিষয় বোহো স্টাইলে। শিল্পকে উপজীব্য করে ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই ফ্যাশন ট্রেন্ড। ঢিলেঢালা, নানা রঙের প্রিন্ট আর পোশাকে খেয়ালি এম্বিলেশমেন্টের খেলা থাকে এই স্টাইলে। বিশ শতকে পশ্চিমা ফ্যাশন ডিজাইনাররা তাঁদের পোশাকের ডিজাইনে নতুনত্ব আনতে বোহো স্টাইলের সাহায্য নেন। একসময় মূলধারার ফ্যাশনের সঙ্গে বোহো মিশে যায়। এভাবে বহু বছর ধরে বোহেমিয়ান স্টাইলটি আস্তে আস্তে তরুণদের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বোহো ফ্যাশনের ইতিহাস এখানেই শেষ নয়। তবে তরুণদের মধ্যে এর ধারাবাহিকতা এখন চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাকেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন ফ্যাশনপ্রেমীরা।

বাইরে এখন প্যাচপেচে অবস্থা, তাই হয়তো অনেক সময় ইচ্ছা করে না একটু স্টাইল করে বের হতে। কিন্তু ঘরে বসেই কাজ কী। অফিস, ক্লাস, মিটিংয়ের মতো যেকোনো কাজে বাইরে যেতে হয়। সে সময়ে পরতে ইচ্ছা করে আরামদায়ক জামা। ৬০-৭০ দশকে ফ্যাশনপ্রেমীরা ঢিলেঢালা সুতি পোশাক পরতে পছন্দ করতেন। এতে একটা ক্যাজ়ুয়াল অথচ স্টাইলিশ লুক আসত। এই গ্রীষ্মে সেই স্টাইলই ফিরে এসেছে পুরোদমে।কখনোই আঁটসাঁট বা অস্বস্তিকর হওয়া উচিত নয়।

বিজ্ঞাপন

বোহো স্টাইলের প্রতীক হচ্ছে ঢিলেঢালা লেয়ারিং, উজ্জ্বল, পপিং রঙের প্রিন্ট, ট্যাসেল, প্রাকৃতিক তন্তু থেকে বানানো ফেব্রিক, প্যাচওয়ার্ক, পেসলে প্যাটার্ন আর প্রচুর স্টেটমেন্ট জুয়েলারি। তা ছাড়া বোহো স্টাইল বলতে সবার আগে মাথায় আসে ঢোলা প্রিন্টের শার্ট, পালাজ্জো, কাফতান, ঢোলা জামা, হারেম প্যান্ট,  ফ্লোয়ি প্যাটার্নের স্কার্ট, ফ্লেয়ার দেওয়া প্যান্ট, কাউবয় বুট ইত্যাদি।

এ ছাড়া ফ্লোরাল প্রিন্ট, গ্রাফিক্যাল প্রিন্ট বা স্ট্রাইপ প্রিন্টও এই ফ্যাশনের অন্তর্ভুক্ত। তবে এ সময়ে ফুল-পাতার জংলা প্রিন্টও বেশ ভালো লাগবে। রঙের দিক থেকে উজ্জ্বল রঙগুলো স্থান পেয়েছে এই স্টাইলে। তবে পোশাকে মনোক্রমের আধিক্য থাকলেও সাজ ও অনুষঙ্গে ফুটিয়ে তোলা যায় রঙিন ভাব।

বাঙালির বোহো স্টাইলে অন্য মাত্রা যোগ করেছে শাড়ি। শাড়ির জমিনে কিংবা পাড়ে নকশাকারেরা কড়ি, ঝুনঝুনি, পমপম আর নানা রকম বিডস নিয়ে খেলছেন। তাতে বোহো ভাব ফুটে ওঠে অনায়াসে। আবার বোহো ঘরানার ফ্যাশন উদ্যোগ ‘তাশা’র অভিনব ‘ওড়নায় পকেট’ নকশাটিও বেশ সাড়া ফেলেছে তরুণদের মধ্যে।

শাড়ির সঙ্গে ওড়না গলায় জড়িয়ে লেয়ারিং স্টাইল করা যায়। আর সেই ওড়নার জমিন আর অভিনব স্টাইলের পকেটে যদি থাকে সুতার পমপমের নকশা, ডলারের কাজ আর ট্যাসেলের ব্যবহার, তাহলে তো কথাই নেই।

পোশাকে শুধু এই স্টাইল ফুটে ওঠে তা নয়, সাজ আর অনুষঙ্গেও থাকতে হবে বোহো ভাইব। যেমন কড়ি, পমপম ইত্যাদি বসানো হাতের বালা কিংবা রঙিন পুঁতির ব্রেসলেট, কানে বহুরঙা ট্যাসেলের ঝোলানো দুল, বর্ণিল সুতা, কড়ি ও ট্যাসেলের নেকপিস, টপ নট বা চুড়ো করে বাঁধা চুল, চোখে মোটা করে দেওয়া কাজল, গাঢ় লিপস্টিক আর অনুষঙ্গ হিসেবে রাফিয়া ব্যাগ মানিয়ে যাবে বেশ। বোহেমিয়ান লুকের অন্য বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে বড় আকারের সানগ্লাস, বোল্ড ডিজাইনের গয়না (কখনো কখনো বেশ বড় আকারের) আর পা খোলা স্যান্ডেল।

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৩, ০৬: ১৫
বিজ্ঞাপন