বাংলাদেশের যে শাড়ির ভক্ত হয়ে গেলেন স্বস্তিকা মুখার্জি
শেয়ার করুন
ফলো করুন

হাল ফ্যাশন ডেস্ক

সম্প্রতি ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশে এসেছিলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি। সুঅভিনেত্রী তো তিনি নিঃসন্দেহে। সেই সঙ্গে তাঁর শ্বাশ্বত বাঙালি সাজপোশাকের অনন্য সৌন্দর্যেও মুগ্ধ তাঁর ভক্ত ও অনুরাগীরা। নিজের মুভির বিশেষ স্ক্রিনিংয়ের দিনে শাড়ির সাজে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন স্বস্তিকা। আর তাঁর বাংলাদেশি ভক্তরা জানলে সত্যিই খুশি হবেন যে এসময় তাঁর পরনের নজরকাড়া সিল্ক শাড়ি ও ব্লাউজ আমাদের দেশেরই সুপরিচিত ফ্যাশন উদ্যোগ ভারমিলিয়নের তৈরি।

স্বস্তিকা এই শাড়িতে নিজের চমৎকার কিছু ছবি নিজেই সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর সেখানে ভারমিলিয়নের সিগনেচার ফেব্রিক 'ভারমিলিয়ন সিল্ক'- এর এই শাড়িটির প্রতি নিজের মুগ্ধতার উচ্ছসিত প্রকাশ ব্যক্ত করেছেন এই অভিনেত্রী। সে সুত্রেই ভারমিলিয়নের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা ও নকশাকার ইমতিয়াজ রাসেলের সঙ্গে কথা হলো এই শাড়ি আর ভারমিলিয়নের সিগনেচার ফেব্রিক নিয়ে।

বিজ্ঞাপন

ইমতিয়াজ রাসেল, ইফফাত আরা আর ফেরদৌস আরার প্রাণের ফ্যাশন উদ্যোগ ভারমিলিয়ন এখন সবার কাছে এক আলাদা অবস্থান গড়ে তুলেছে, বলতেই হয়। প্রকৃতি-প্রাণিত চোখ জুড়ানো সব বর্ণিল প্রিন্ট তাঁদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। আর সেই সঙ্গে আরেকটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে স্বস্তিকা মুখার্জির এ শাড়িটির মতো নিজেদের রেশম শাড়িগুলোর জন্য তাঁরা সম্পূর্ণ এক্সক্লুসিভ ভারমিলিয়ন সিল্ক ব্যবহার করেন। এই সিগনেচার ফেব্রিকে কাজ করার বিষয়টির জন্য ভারমিলিয়ন আলাদা কৃতিত্বের দাবী রাখে।

ইমতিয়াজ জানালেন, ২০১৯ সালে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে নতুন করে ভারমিলিয়ন নিয়ে যখন জোরেশোরে কাজ শুরু করলেব তাঁরা, তখন যে চ্যালেঞ্জটি তাঁদের সামনে এসে দাঁড়ায় তা হলো উপযুক্ত ফেব্রিক। বাজার থেকে সোর্সিং করা যে ফেব্রিকটি তাঁরা প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন তা আমাদের দেশের নয়। আর এ বিষয়টি অনুধাবনের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা দেশি ফেব্রিকে কাজ করার প্রত্যয় নেন এবং নিজেদের সিগনেচার ফেব্রিক ডেভেলপ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সে পথ ধরেই শুরু হয় ভারমিলিয়ন সিল্কের গল্প।

বিজ্ঞাপন

প্রায় দেড় বছর বহু সাধ্য-সাধনা আর তাঁতীদের সঙ্গে মিলে অক্লান্ত পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের পরে ভারমিলিয়ন নিয়ে আসে নিজস্ব রেশম ফেব্রিক 'ভারমিলিয়ন সিল্ক'। প্রচুর 'ট্রায়াল অ্যান্ড এরর' প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এই ফেব্রিকটিকে। ইমতিয়াজ বলেন, দেশের তাঁতীদের জন্য কিছু করা, আমাদের সমৃদ্ধ তাঁতশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আর দেশি ফ্যাশন উদ্যোগ হিসেবে সম্পূর্ণ দেশি ফেব্রিক ব্যবহার করার ভাবনা থেকেই ভারমিলিয়ন সিল্কের জন্ম। এই ফেব্রিকটি ডেভেলপ করার সময় বেশ কিছু বিষয়ের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশের আবহাওয়া সাপেক্ষে আরামদায়ক হওয়ার বিষয়টি ছিল মুখ্য। সেই সঙ্গে ব্যবহার উপযোগিতা, প্রিন্টের কাজ করতে সুবিধাজনক হওয়া আর টেকসই ও রং পাকা হওয়ার ব্যাপারগুলোও খেয়াল রাখা হয়।

সর্বোপরি, রেশমী বস্ত্রের যে 'গ্রেস' আর 'লাসচার' অর্থাৎ আভিজাত্যময় উজ্জ্বল লুক থাকা প্রয়োজন একে সকলের আরাধ্য করে তুলতে, সেদিকটিতে কোনো ছাড় দেননি তাঁরা। আর এখন ভারমিলিয়ন সিল্কের শাড়ি সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছে। ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জিও এখন ভারমিলিয়ন সিল্কের ভক্ত। এই শাড়িতে ছবিগুলোর সঙ্গে নিজের বয়ানে পুরো গল্পটি বলেছেন তিনি আবেগ ও উচ্ছাস নিয়ে। শাড়ি পরা আর শাড়িতে নিজেকে উপস্থাপন করাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এই অভিনেত্রীর কাছ থেকে বাংলাদেশি শাড়ির প্রতি ভালোবাসার স্বতঃস্ফূর্ত এই প্রকাশ শুধু ভারমিলিয়ন নয়, আমাদের সকলের জন্যই গৌরবের।

ইমতিয়াজ রাসেল জানালেন, শুধু সিল্ক নয়, ভারমিলিয়নের নিজেদের সিগনেচার ফেব্রিকের তালিকায় আছে ভারমিলিয়ন মসলিন, ভারমিলিয়ন অরগাঞ্জা আর ভারমিলিয়ন কটন। এবার বসন্ত কালেকশনে তাঁরা ভারমিলিয়ন কটনের ব্যবহার করেছেন। সেই সঙ্গে পরম্পরা সিরিজের মাধ্যমে বিভিন্ন পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী শাড়ি রিক্রিয়েট করার কাজটিও চালিয়ে যাবে ভারমিলিয়ন।

ইন্সটাগ্রামে ভারমিলিয়নের কাজ দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছিলেন নিজেই যোগাযোগ করে স্বস্তিকা মুখার্জি। এর পর তাঁর সঙ্গে ভারতেই পরিচয় হয় ভারমিলিয়নের সদস্যদের সঙ্গে। বিভিন্ন সময়ে তিনি নিজে অত্যন্ত আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের এই ফ্যাশন উদ্যোগের বিভিন্ন সৃজন সম্পর্কে। এর আগেও তাঁদের পরম্পরা সিরিজের শাড়ি পরেছেন স্বস্তিকা। আর এবারে বাংলাদেশে এসে ভারমিলয়নের তৈরি এ দেশের শাড়িতে নিজেকে সাজিয়েছেন এই অভিনেত্রী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই শাড়ির লুকের ছবিগুলো শেয়ার করতে গিয়ে স্বস্তিকা লিখেছেন, 'অন্য দেশেও আমার বন্ধুরা আছে, বন্ধুদের বাড়ি আছে সেখানে বেড়াতে যাব, ভেবেই মনটা খুশি হয়ে গেছিল। ওদের সঙ্গে যেদিন প্রথম দেখা হয়েছিল, মনে হয়েছিল ওরা আমার অনেক আপন, নিজের মানুষ। এইবার ঢাকা যাওয়া ঠিক হতে সবচেয়ে আগে ওদের জানিয়ে ছিলাম'। আর ভারমিলিয়ন সিল্কে তৈরি শাড়িটি খুবই আরামদায়ক বলে জানিয়েছেন তিনি। এত লোকের ভীড়েও স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছে তাঁকে এর ফেব্রিক। অফ হোয়াইট শাড়িটিতে নীলচে ধূসর ও কমলা নকশার প্রিন্টের পাড়-আঁচল। চমৎকার কালার কম্বিনেশনের শাড়িটির সঙ্গে জোড় বেঁধেছে নীলচে ধূসর ব্লাউজ। সব মিলে মোহনীয় লাগছে সুন্দরী অভিনেত্রী স্বস্তিকাকে।

ছবি: স্বস্তিকা মুখার্জির ফেসবুক পেজ

ফটোগ্রাফি: প্রণয়পত্র

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬: ০০
বিজ্ঞাপন