জমজামাট আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ফ্যাশনের অন্যতম আসর আর্কা ফ্যাশন উইক। শেষ দিনের চোখধাঁধানো ফ্যাশন শোগুলোতে ছিল ফ্যাশনপ্রেমী দর্শকদের উপচে পরা ভীড়। ৪টি স্লটে মোট ৯টি ব্র্যান্ড ও ফ্যাশন লেবেলের শো হয় এদিন। রানওয়েতে ঢং, তাসা, উড়ুক্কু বাংলাদেশ, ফ্রেন্ডশিপ-কালার অব চরস, গ্রীষ্ম বাই সৌহার্দ্য, ব্লিস ক্লদিং, তান, অরণ্য ও কুহু- ওয়্যারেবল আর্ট তাদের সাসটেনেবল কালেকশন প্রদর্শন করে।
প্রথম স্লটের প্রথম শো শুরু হয় ঢং ব্র্যান্ডের আউট অব দ্য বক্স কালেকশন দিয়ে।
আধুনিক নবাবিয়ানা আমেজের নানা কাট ও ফেব্রিকের পোশাকে র্যাম্প মাতান মডেলরা। এটা ছিল মূলত পুরুষদের কালেকশন।
হলুদ, গোলাপির মতো পপিং কালার প্যালেটের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট ও প্রিন্স কোটের ফিউশন স্টাইল স্যুট, লং কোট, প্রিন্স কোট, সুফি আমেজের আর ওমর খৈয়াম স্টাইল লং কোট দেখা গিয়েছে এখানে।
পরের শোয়ে বোহো ফ্যাশনের জন্য সুপরিচিত উদ্যোগ তাসা প্রদর্শন করে তাদের সিগনেচার বোহো থিমের বর্ণিল সব কালেকশন। ডিজাইনার সঙ্গীতা মূলত পোশাক আর গয়নায় কড়ি, পমপম, ঝুনঝুনি, আয়না আর রঙিন রিবনেরর মতো বাহারি উপকরণ ব্যবহার করে বোহো আমেজ ফুটিয়ে তুলতে ভালবাসেন।
সেই আমেজেরই শাড়ি, কাফতান, টপস, হাফপ্যান্ট, নানা ধরনের বটম, স্কার্ট, সি থ্রু শার্ট, চটের হুডেড গাউন, শার্ট ইত্যাদি ছিল তাসার এই কালেকশনে। পোশাকে নজর কেড়েছে পকেটের ব্যবহার।
সুতি, গামছা ফেব্রিক, বাটিক কাপড় আর চট দিয়ে নকশা করা পোশাকগুলোতে কড়ি, সুতার কাজ, ফ্রিল ও পমপম বেশ নজর কেড়েছে। শো স্টপারের সি থ্রু গাউনটি ছিল ওয়ান শোল্ডার কাটের। এতে ছিল ফুলের চোখজুড়ানো এক্সটেনশন। এছাড়াও শাড়ির জমিনে অ্যাপ্লিকে করা রঙিন গ্রামের দৃশ্যের নকশা নজর কেড়েছে।
রিসাইকেল ও আপসাইকেল কালেকশন নিয়ে দ্বিতীয় স্লটের প্রথম শোটি করে সাস্টেনেবল ফ্যাশন উদ্যোগ উড়ুক্কু বাংলাদেশ। কাফতান, শ্রাগ, হারেম প্যান্ট, স্লিটেড স্কার্ট, স্ট্র্যাপলেস টপ, জাম্পস্যুট, জ্যাকেট, ওয়াইড লেগ প্যান্ট ও প্লাস সাইজ ড্রেস ছিল এই কালেকশনে।
তাদের শোয়ের সময় ফ্যাশন হোক পরিবেশবান্ধব, স্লো ফ্যাশন আলিঙ্গন করি, প্রতিটি সেলাই একটি গল্প, পুরোনো কাপড়ের নতুন গল্প, প্রাকৃতিক রং, প্রাণের রং এর মতো বার্তা দেয় উড়ুক্কু। প্যাচওয়ার্ক ও কাঁথাসেলাইয়ের মিনিমাল নকশা প্রাধান্য পেয়েছে পোশাকগুলোতে।
দ্বিতীয় শোয়ে অংশ নেয় সুপরিচিত পরিবেশবান্ধব ফ্যাশন ব্র্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ কালারস অব দ্য চরস। তারা প্রাকৃতিক রং নিয়ে সবসময় কাজ করে। শাড়ি, কাফতান, থ্রিপিস, কোঅর্ড সেট, শ্রাগ, মিনিড্রেস, শার্ট, ফতুয়া ও টপ ছিল তাদের কালেকশনে।
সুতি, মসলিন, সিল্ক ও খাদি ফেব্রিকে তৈরি করা মিনিমাল নকশার পোশাকগুলোতে প্রাধান্য পেয়েছে তাদের নানা সিগনেচার প্রাকৃতিক রং। তবে আর্কার মতো আগলভাঙা ফ্যাশন উৎসবে এই ব্র্যান্ডটির চিরচেনা কালেকশন খুব একটা প্রত্যাশা পূরন করেছে বলা যাবে না।
তৃতীয় স্লটে ফিউশন ও নিরীক্ষাধর্মী ওয়েস্টার্ন কালেকশন নিয়ে আসে গ্রীষ্ম বাই সৌহার্দ্য। তাদের পোশাকের কাট ও প্যাটার্নে আলাদা মনোযোগ ছিল চোখে পড়ার মতো । হুডেড ড্রেস, মিনি ড্রেস, শার্ট, বটম, টপ, মিনি স্কার্টের মতো পোশাকগুলোতে লেইস, ফ্রিল, প্লিট আর গ্যাদার্ড ফেব্রিকের ডিজাইন নজর কেড়েছে । সাদা, আইভরি, কালো ও বেগুনি রঙ প্রাধান্য পেয়েছে তাদের কালেকশনে।
এরপর তরুণ ডিজাইনার ফারদীন বায়েজিদের লেবেল ব্লিস তাদের পোশাক সংগ্রহ প্রদর্শন করে। সাসটেনেবল বা টেকসই কালেকশন নিয়ে এসেছে তারা। এই শোয়ে সি থ্রু টপ আর শর্টস পরে নজর কাড়েন সুপরিচিত মডেল জেসিয়া ইসলাম। এছাড়াও শার্ট, হাই ওয়েস্ট বটম, টপস, লং শ্রাগ ও সেমি ফরমাল ও ফিউশন কাটের ব্লেজারের মতো ট্রেন্ডি পোশাকগুলোতে পকেটের নিরীক্ষাধর্মী ব্যবহার চোখে পড়েছে সবার।
চতুর্থ স্লটের শো শুরু হয় নান্দনিক লাক্সারি ফ্যাশন লেবেল তানের পরিবেশনা দিয়ে৷ শুরুতেই সকলকে চমকে দিয়ে র্যাম্পে হাজির হন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও মডেল রুনা খান।
শো স্টপারকে প্রথমে দেখে সকলেই চিয়ার করেন একসঙ্গে। এটি আসলেই বড় চমক ছিল। তানের ডিজাইনার তানহা শেখের স্পেস ব্লু ও কালোর কম্বিনেশনে তৈরি করসেট ড্রেসে রুনা চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছেন সবার।
এছাড়াও তানের এই কালেকশনে প্রাধান্য পেয়েছে স্কার্ট, নিরীক্ষাধর্মী টপস ও বটম,শার্ট, স্যুট ও ব্লেজার। রুশিং টেকনিকে ফেব্রিক ম্যানিপুলেশন আর ফেব্রিক অরিগ্যামি প্যাটার্নের নকশা করা হয়েছে পোশাকগুলো। কালার প্যালেটে ছিল অ্যাপ্রিকট অরেঞ্জ আর কালো ও নীলের নানা শেড। ছোট কালেকশন হলেও তানই ছিল এদিনের ফ্যাশন শোয়ের হাইলাইট।
এর পরে এসেছে আরেক সুপরিচিত পরিবেশবান্ধব লাক্সারি ফ্যাশন ব্র্যান্ড অরণ্য। তারা এখানে প্রদর্শন করেছ ক্যাজুয়াল ও ফিউশনওয়্যারের কালেকশন নিয়ে। সবসময়ের মতো তাদের পোশাকে প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার ছিল।
বিভিন্ন দৈর্ঘ্য ও প্যাটার্নের স্কার্ট, শ্রাগ, স্ট্র্যাপলেস টপ, বোম্বার জ্যাকেট, কার্গো প্যান্ট, লং কোট, হারেম প্যান্ট, নিরীক্ষাধর্মী ও অ্যাসিমেট্রিক টপ দেখা যায় এই শোয়ে। পোশাকগুলো মিনিমাল হলেও সমসাময়িক ডিজাইনের। তবে কাট ও প্যাটার্নে আরো নতুনত্ব আশা করাই যায় অরণ্যের মতো ব্র্যান্ডের কাছ থেকে। ডিজাইনার নওশিন খায়ের এই পুরো সংগ্রহটিতে ইন্ডিগোর নানা শেডের ব্যবহার করেছেন সবচেয়ে বেশি।
আর্কা ফ্যাশন উইকের পর্দা নামে অভিজ্ঞ ডিজাইনার কুহু মান্নানের নিজস্ব লেবেল কুহুর শোয়ের মাধ্যমে। ছেলে ও মেয়েদের আলাদা পোশাক ছাড়াও ইউনিসেক্স পোশাকে সাজানো হয়েছে এই কালেকশন।
কালেকশনের থিম ছিল ফ্রিডম। আর ডিজাইনার কুহুর সিগনেচার হ্যান্ডপেইন্টের অনুপ্রেরণা এখানে মোগল আর্ট। শাড়ি, পাঞ্জাবি, বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের শ্রাগ, লং ড্রেস, কামিজ, টপ ও ফিউশনধর্মী কাফতানে সাজানো এই কালেকশনটি। বিভিন্ন কালার প্যালেটের ব্যবহার চোখে পড়েছে।