ফেসবুকে নতুন একটি ফ্যাশন ট্রেন্ড এসে গিয়েছে। আর তা হলো গুগল জেমিনি শাড়ি ট্রেন্ড। নিজেদের ছবি গুগল জেমিনিতে আপলোড করে সিনেমাটিক ভঙ্গি আর রঙিন শাড়িতে নতুন রূপে নিজের ছবি দিতে পারবেন আপনি এভাবে৷ অনলাইনে শাড়ির ছবি দেখে টাকাপয়সার হিসাব না মিলাতে পেরে চোখের জল ফেলছেন? গুগলের জেমিনি এভাবে দুধের স্বাদ মেটাতে পারে ঘোলেই। আর এই ট্রেন্ডের এআই ছবি দিয়ে সয়লাব এখন ফেসবুক। আসলে সোশ্যাল মিডিয়া আজ শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়; বরং এটি নিজের স্টাইল ও ফ্যাশনসেন্স প্রকাশ করার এক নতুন টুল। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া গুগল জেমিনি শাড়ি ট্রেন্ড আসলে এমনই একটি ডিজিটাল ট্রেন্ড। এখানে আমরা নিজেদের ছবি এআই-ভিত্তিক গুগল জেমিনিতে আপলোড করে নিজেকে যেভাবে ইচ্ছা দেখতে পারছি।এই শাড়ি, আলো-ছায়ার খেলা ও প্রাকৃতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের সংমিশ্রণে প্রতিটি ছবি যেন এক একটি গল্প বলছে। চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি।
ট্রেন্ডের সূচনা ও জনপ্রিয়তা
এই ঢেউ শুরু হয়েছিল কয়েকজন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর ছোট্ট এক প্রম্পটের মাধ্যমে। ছবি জেনারেট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা গেল পিনটারেস্ট স্টাইলের এই রেট্রো-ফ্যাশন সহজেই ভাইরাল হয়ে পড়ল। এটি জনপ্রিয়তার মূল কারণ হলো, এই ছবি বানানো অত্যন্ত সহজ, দ্রুত এবং সৃজনশীলতার প্রকাশ।এটিতে ব্যয়বহুল ক্যামেরা বা স্টুডিওর প্রয়োজন নেই; শুধু একটি প্রম্পট লিখলেই জন্ম নেয় হাজার হাজার লাইক পাওয়া ছবি।
যেভাবে কাজ করে এই ট্রেন্ডটি
১. প্রথমে আপনি গুগল জেমিনিতে প্রবেশ করবেন।
২. সেখানে নিজের পছন্দমত ছবি আপলোড করবেন।
৩. তারপর 'ড্রিমি শাড়ি প্রম্পট' লিখে গুগল জেমিনিতে আপলোড করতে হয়।
৪. সেই অনুযায়ী এআই আপনার ছবি জেনারেট করে দেয়।
এর ফ্যাশন বৈশিষ্ট্যতরুণ প্রজন্মের ফ্যাশন রুচিতে এখন যেন ফিরে আসছে ঐতিহ্যের আমেজ। ছবিগুলোতে দেখা যায়, তাদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে নীল কটনের সাদামাটা অথচ আকর্ষণীয় শাড়ি, সোনালি পাড়ের ঝলমলে সিল্ক কিংবা হাতে বোনা বিশেষ ড্রেপের শাড়ি। এই নির্বাচন শুধু পোশাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এক ধরনের সাংস্কৃতিক নান্দনিকতা প্রকাশ করে। ফ্রেমে আলো-ছায়ার খেলা যেন প্রতিটি মুহূর্তকে সিনেম্যাটিক করে তুলছে। চুলে গোঁজা একটি ফুল, হাতে ধরা বই কিংবা ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ, এই ছোট ছোট এলিমেন্ট ছবিকে দেয় এক গল্প বলার ক্ষমতা। যেন প্রতিটি দৃশ্যের ভেতরে লুকিয়ে আছে ব্যক্তিগত স্মৃতি, মায়া আর আবেগ। ছবিগুলোর টোন হালকা রেট্রো ঘরানার, যেখানে উজ্জ্বলতার সঙ্গে মিশে আছে এক ধরনের পুরোনো দিনের কোমলতা।এই মিনিমালিস্ট ব্যাকগ্রাউন্ড ছবিকে অপ্রয়োজনীয় ভিড় থেকে মুক্ত করে মূল চরিত্রকে সামনে নিয়ে আসে। আর প্রাকৃতিক রঙের সংমিশ্রণ ছবিকে দেয় একেবারে ফিনিশ, যেখানে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মেলবন্ধন চোখে পড়ে স্পষ্টভাবে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেসবুকের এই শাড়ি-ট্রেন্ড নিছক কোনো সাময়িক ফ্যাশন ঢেউ নয়। বরং এটি তরুণদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা আত্মপ্রকাশের এক আকাঙ্ক্ষা, সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ এবং প্রযুক্তিনির্ভর নতুন জীবনধারার প্রতিফলন। শাড়ি এখানে শুধু একটি পোশাক নয়; বরং এক ধরনের প্রতীক, যা তাদের শেকড়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে আবার একইসঙ্গে বৈশ্বিক ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। ভবিষ্যতে এই প্রবণতা আরও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠতে পারে।নতুন ধাঁচের পোশাক, অভিনব ভঙ্গি, ভিন্নধর্মী ব্যাকগ্রাউন্ড কিংবা পরিবেশের সংযোজন হয়তো এই ট্রেন্ডকে করবে আরও সমৃদ্ধ। এতে যেমন ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, তেমনি আধুনিকতার নানা রঙও মিশে যাবে এর প্রতিটি ফ্রেমে। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রেক্ষাপটে এই ঢেউয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ফেসবুকের পরিবর্তিত ভূমিকা। একসময় এই ফেসবুক ছিল মূলত নিউজফিড আর আড্ডার জায়গা, এখন তা ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে ডিজিটাল ন্যারেটিভের প্ল্যাটফর্মে,যেখানে তরুণরা তাদের স্টাইল শোকেস করছে, গল্প বলছে এবং একই সঙ্গে সামাজিক সংযোগও তৈরি করছে। ফলে এখন ফেসবুক কেবল তথ্য বিনিময়ের স্থান নয়, বরং জীবনযাত্রার অংশীদার, নান্দনিকতা প্রকাশের ক্ষেত্র এবং সংস্কৃতির নতুন ক্যানভাস হয়ে উঠছে।ফ্যাশনের এই ধারাটি তাই শুধু পোশাক বেছে নেওয়ার ব্যাপার নয়, বরং নিজের শেকড়ের সঙ্গে সংযোগ খোঁজার এক নীরব প্রচেষ্টা। আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের মিশেলে তৈরি এই শাড়ি-আঙ্গিক তরুণদের আত্মপ্রকাশের নতুন ভাষা হয়ে উঠছে,যেখানে প্রতিটি ফ্রেমে ধরা পড়ে তাদের ব্যক্তিত্ব, জীবনদর্শন এবং সৌন্দর্যের সহজ অথচ অনন্য এক ব্যাখ্যা।
ছবি: লেখক ও ফেসবুক।