মায়ের আঁচলের আদর
শেয়ার করুন
ফলো করুন

শাড়ি মানেই অপার মায়া। শাড়ি মানেই মায়ের আঁচল। সেই যে মায়ের শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে মায়ের শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ, সে কি আর কোথাও মেলে! বাঙালি মেয়েদের হৃদয় এমনিতেই শাড়িপ্রেমে একেবারে কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। শাড়ি নিয়ে নাড়াচাড়া, মায়ের আলমারির শাড়িগুলো এলোমেলো করে দেওয়া, পাটভাঙা শাড়ির আঁচলটি মাথায় দিয়ে আয়না দেখে খিলখিল হাসি—ছোট ছোট পুতুল পুতুল মেয়েগুলো এত মায়াময়ী যে কেন হয়! যেন মায়েরই ছোট একটি প্রতিরূপ। মায়ের মতো মায়ের শাড়ির মায়াতেই বাঁধা পড়ে যাই এভাবে আমরা সেই জন্ম থেকেই।

মাূয়ের আঁচলের মায়া আর কোথাও নেই
মাূয়ের আঁচলের মায়া আর কোথাও নেই

রোদে ছোটাছুটি করে খেলে বেড়িয়ে, ঘেমেনেয়ে বাড়ি ফিরলেই মায়ের আঁচল ঘাম মুছিয়ে দেয়। মায়ের হাতের লোকমা খেয়ে পানি খেয়ে শেষে মায়ের আঁচলেই মুখ মুছে দে ছুট। কপট রাগে বকাঝকা দিলেও তাতেই যেন মায়ের প্রশান্তি। সেই আঁচলের মায়া আর কোথাও নেই পৃথিবীতে। ছোট্ট মেয়েটা মায়ের দেখাদেখি টিপ কপালে এলোমেলো করে মায়ের শাড়ি মাথায় গায়ে জড়িয়ে নিজেকে আয়নায় দেখে পরম আগ্রহে। মায়ের শাড়িতে মিছেমিছি বউ সেজে অ্যালবামে কত ছবি সাঁটা আছে কতজনের শৈশবের!

বিজ্ঞাপন

কিশোরী মেয়েটির কাছে শাড়ি মানেই শিরশিরে এক নতুন অনুভূতি। এই অনুভব নিজেকে চেনার, নিজের নারীত্বকে আবিষ্কারের। সবার অলক্ষ্যে মায়ের কমলা, গোলাপি বা নীল শাড়িটি আনাড়ি হাতে পরে আয়নায় নিজেকে দেখেই নিজেরই অপার বিস্ময়। এ অনুভূতি বলে বোঝানোর নয়। হয়তো কারও বিয়ে, স্কুলের অনুষ্ঠান বা পাড়ার নববর্ষের আয়োজনে মা-ই পরিয়ে দেন নিজের কোনো বিশেষ, সুন্দর আর পছন্দের শাড়ি। মায়ের শাড়িতেই আমাদের হাতেখড়ি হয় শাড়ি পরায়। সেই স্মৃতি বড়ই মধুর। জীবনে প্রথম শাড়ি, চুড়ি আর টিপে নিজেকেই নিজের পরি মনে হয়, হয়তো অন্য কারও মুগ্ধ দৃষ্টিও ঘুরে বেড়ায় পিছু পিছু। আবার ছুতোনাতা খুঁজতে থাকে কিশোরী মেয়েটি মায়ের শাড়ি পরার। কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে মায়ের জামদানি বা গরদের শাড়িটি পরে নিজেকে কতই–না বড় বড় লাগে। এরপরে সত্যি সত্যি বড় হয়ে নিজেরই কত শত শাড়ি হয়। তবু মায়ের শাড়িতে নিজে সেই কৈশোরের পরিই থেকে যায়। স্মৃতিতে মায়ের শাড়ি পরার সেই টুকরো টুকরো গল্পগুলো সাজানো থাকে মাড় দেওয়া পাটে পাটে ভাঁজ করা তাঁতের শাড়িটির মতোই।

মায়ের বিয়ের শাড়ির আবেদন অন্যরকম
মায়ের বিয়ের শাড়ির আবেদন অন্যরকম

মায়ের বিয়ের শাড়ির আবেদন আবার আরেক রকম। প্রায় সময়েই মেয়ের জিম্মাতেই এসে যায় মায়ের বিয়ের শাড়িটি। লাল টুকটুকে বেনারসিই সেকালে বেশি চলত বিয়েতে। আজকাল অনেকেই মায়ের বিয়ের শাড়িটি বিভিন্ন রকমের ডিজাইনের এমব্রয়ডারি, মিরর, গোটাপাত্তি বা কুন্দনের কারুকাজ, মিনাকারি ইত্যাদি করিয়ে নিয়ে নিজেই পরে থাকেন বিয়ে বা বউভাতের অনুষ্ঠানে। এই আপসাইকেল প্রক্রিয়া পুরোনোকে নতুন করে, অনন্য গৌরবে ফিরে আসে। আর অ্যান্টিক ভ্যালুসহকারে এই শাড়িটি কনের সাজকে করে তোলে অন্য রকম নজরকাড়া সুন্দর।

বিজ্ঞাপন

কখনোবা মায়েরা আকাশের তারা হয়ে যায়। তখন সেই ঘ্রাণ আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। মায়ের সুবাস তখন শুধু থাকে সযতনে রাখা মায়ের শাড়িটির ভাঁজে ভাঁজে। মায়ের শাড়িতেই মায়ের আদর, মায়ের মায়া, মায়ের স্নেহের পরশ খুঁজে বেড়াই আমরা সবার অগোচরে। তাঁর রেখে যাওয়া আটপৌরে অথবা তুলে রাখা শাড়িটি নাকের কাছে নিয়ে প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে চোখ বুজে মায়ের মুখটি মনে করা। মায়ের শাড়িটি আবার রেখে দেওয়া যত্ন করে। কখনো অজান্তেই দুই ফোঁটা জলও গড়িয়ে পড়ে তাতে।

মায়ের শাড়ি সব মেয়েরই সবচেয়ে প্রিয়
মায়ের শাড়ি সব মেয়েরই সবচেয়ে প্রিয়

মায়ের মমতা তুলনাবিহীন, নিঃশর্ত আর অপরিসীম। মায়ের আঁচল আর মায়ের শাড়িতেই জড়িয়ে থাকে শৈশব, কৈশোর, যৌবন আর মা-হারা প্রৌঢ় সময়ের হাজারো অনুভূতি, অগুনতি আবেগ। মায়ের শাড়ি তাই সবকিছুর চেয়ে আলাদা, সব মেয়েরই সবচেয়ে প্রিয়।

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২২, ০৫: ৩০
বিজ্ঞাপন