ব্লাউজ বৈচিত্র্য

যেকোনো পোশাকের ক্ষেত্রে সবার আগে চলে আসে আরাম এবং স্বস্তির ব্যাপারটি। এবারে গ্রীষ্মের শুরু থেকেই গরমটা একটু বেশি। তাই এই ঈদে ব্লাউজ ট্রেন্ডে স্থান পেয়েছে ঢিলেঢালা ক্রপ টপ ঘরানার ও স্লিভলেস ব্লাউজ। এ ছাড়া ব্লাউজের হাতা এবং গলার কাটিংয়ে বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ভারমিলিয়নের স্বত্বাধিকারী ইফফাত আরা নুজহাতের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই ঈদে ব্লাউজের ডিজাইন করা হয়েছে আরামকে গুরুত্ব দিয়ে। মোটিফের ক্ষেত্রে দেশীয় এবং বিদেশি দুটো মোটিফই রয়েছে। ইফফাত আরা নুজহাত জানান, এবারে চেষ্টা করা হয়েছে ব্লাউজগুলোতে প্রকৃতির রং নিয়ে কাজ করতে। এ ছাড়া ব্লাউজের আরেকটি ট্রেন্ড চলছে সেটি হলো ব্লাউজ কাম ক্রপ টপ। অর্থাৎ ব্লাউজকে ঠিক ব্লাউজের মতো না পরে টপস হিসেবে শাড়ির সঙ্গে পরা যায়। এতে ব্লাউজটিই আরও বেশি হাইলাইটেড হয়। এ ছাড়া ব্লাউজে লেস এবং কুর্শিকাটার ব্যবহার দেখা গেছে এবার। পুরো ব্লাউজ খুবই সিম্পল কিন্তু গলায় কুর্শিকাটার কাজ বসানো এই ব্লাউজ পরলে গলায় আলাদা করে কোনো গয়নাও পরতে হবে না।

ব্লাউজের ফেব্রিকের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার হয়েছে সুতি। এ ছাড়া রয়েছে এন্ডি কটন, ভারমিলিয়ন সিল্ক, খাদি ইত্যাদি। ডিজাইনে শিবুরি ও টাইডাই ও কলমকারির ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। ব্লাউজ নিয়ে কাজ করা অনলাইন ফ্যাশন পেজ সুতলীর স্বত্বাধিকারী এবং ডিজাইনার রিফাত লোপা কাজ করছেন কলমকারি ফেব্রিক নিয়ে। নানা রঙের কলমকারি কাপড়কে ব্যবহার করা হয়েছে ব্লাউজের হাতায়। আর বডিতে থাকছে হ্যান্ডলুম। কিছু ব্লাউজ রয়েছে এক্সক্লুসিভ রেঞ্জের। সেগুলোর বডিতে এন্ডি সিল্কের আর হাতাটা প্যাঁচওয়ার্কের। অন্যদিকে ফ্যাশন হাউস ভারমিলিয়নে, ভারমিলিয়ন সিল্কের তৈরি ব্লাউজ বেশ ট্রেন্ডি এই ঈদে। সিল্ক হলেও এটি একদমই সামার ফ্রেন্ডলি। আরামের কথা মাথায় রেখে কিছু ব্লাউজের নিচে সুতি কাপড়ের লেয়ার ব্যবহার করা হয়েছে। ভিনটেজ এবং ট্র্যাডিশনাল প্রিন্ট এবার ব্লাউজগুলোতে চোখে পড়ার মতো। কারণ, ভারমিলিয়ান সিল্ক ফেব্রিকে এ ধরনের প্রিন্টগুলোই মানানসই, জানালেন ব্র্যান্ডটির ডিজাইনার।

ফ্যাশন সব সময় পরিবর্তনশীল। আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে যে ধরনের কাটিংগুলো ছিল ব্লাউজে, সেগুলো এবার আবারও নতুনভাবে ফিরে এসেছে। গলা এবং হাতা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন ডিজাইনাররা। এখন আর কেউ সাদামাটা ব্লাউজ পরতে পছন্দ করেন না। তাই হাতার ক্ষেত্রে নানা ভ্যারিয়েশন লক্ষ্য করা গেছে। যেমন ম্যাগি হাতা, কনুই ঢাকা হাতা, পাফি স্লিভের ঘটি হাতা, কনুইয়ের নিচে ফ্লেয়ার করা বা বেলবটম হাতা। ক্রপ টপ ব্লাউজের ক্ষেত্রে হাতাটা গোল করে পুরো বডিটার সঙ্গে একদম মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
গলার কাটিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু ইউ আকৃতি, কিছু আবার নৌকা ধাঁচের কাটিং রয়েছে। ওয়েদারের কথা চিন্তা করে ক্রপ টপ ব্লাউজে একটু ঢিলেঢালা কাটিংয়ের ব্যবহারও লক্ষ করা যায়। আগেকার কিছু কাটিং ঘুরেফিরে এসেছে এবারের ঈদের ব্লাউজের ট্রেন্ডে। এ ছাড়া চৌকো গলা, ওভাল শেপ, ঢেউখেলানো বায়াস কাট, হাইনেক বেশ ট্রেন্ডি এখন।

রঙের ক্ষেত্রে প্রাধান্য বেশি পেয়েছে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, মেরুন, কালো ও গোল্ডেন। এ ছাড়া রয়েছে সাদা। সাদার ওপর যেকোনো রংই মানায়। ছোট ছোট ফুলের মোটিফ ব্লাউজের জমিনে স্থান পেয়েছে। সব বয়সী মেয়েরা যেন পরতে পারে, সেভাবেই রং নির্বাচন করা হয়েছে। কিছু কিছু ব্লাউজে সাদামাটা ভাব দূর করতে কনট্রাস্ট কালার পাইপিংয়ের ব্যবহার করা হয়েছে গলায় এবং হাতায়।

ব্লাউজ এমনই হওয়া উচিত যেন দৃষ্টিকটু না হয় আর নিজেরও পরতে আরাম লাগে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফিটিংস। ব্লাউজ কেনা হোক কিংবা বানানো, সঠিক মাপ নেওয়া জরুরি। খুব বেশি টাইট কিংবা এমন কোনো কাটিং যেটা শরীরের সঙ্গে মানানসই না, এমন যেন না হয় সেভাবে ব্লাউজ নির্বাচন করতে হবে। শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ একেবারে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যদি শাড়িতে অনেক বেশি প্রিন্ট বা অনেক বেশি কারুকাজ থাকে, তাহলে ব্লাউজ একেবারেই সাদামাটা বা একরঙা পরা উচিত। আবার জমকালো ব্লাউজের সঙ্গে একরঙা চিকন পাড়ের শাড়ি ভালো লাগবে। জ্যামিতিক নকশা, ফ্লোরাল প্রিন্ট কিংবা নানা ধরনের মোটিফের ব্লাউজের সঙ্গে একরঙা শাড়ি খুব সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে। সে ক্ষেত্রে ব্লাউজটিও প্রাধান্য পায়। এভাবে বৈপরীত্য ও সামঞ্জস্য রেখে পোশাক পরলে সুন্দর লাগে দেখতে।
শাড়ির পাড়ে যদি ফ্রিল নকশা থাকে, তাহলে ব্লাউজের বর্ডারেও ছোট ফ্রিলের নকশা রাখলে ভালো লাগবে।

যেকোনো পোশাকেরই যত্ন প্রয়োজন। ব্লাউজ শখ করে কিনে বা বানিয়ে পড়ার পর অযত্নে ফেলে রাখাটা কাম্য নয়। তাই রইল ছোট্ট কিছু টিপস। ব্লাউজ ব্যবহারের পর বাতাসে মেলে দিন। বেশি কাজ কিংবা নকশাওয়ালা ব্লাউজের ক্ষেত্রে নিজের হাতে না ধুয়ে ড্রাইক্লিন করতে হবে। সুতির তৈরি ব্লাউজ ভাঁজ করে রাখুন কিন্তু অন্যান্য ফেব্রিকের ব্লাউজ হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখলে ভালো থাকবে।