ছেলেদের ঈদের পোশাক বলতে ঐতিহ্যগতভাবে পাঞ্জাবির কথাই মনে হয়। ঈদের সকালে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের নামাজ পড়া, নামাজ শেষে কোলাকুলি, হইহুল্লোড়, এবাড়ি–ওবাড়ি বেড়ানো, ঈদের দুপুর বা রাতের দাওয়াত এসব কিছুতেই নতুন পাঞ্জাবি চাই–ই চাই। তাই তো কেনাকাটার তালিকা ছোট হোক কিংবা বড়, তাতে ঈদের পাঞ্জাবি স্থান করে নেয় ঠিকই।
এবারের ঈদবাজারে এসেছে হাজারো নকশার পাঞ্জাবি। গত দুই বছর মহামারির ভয়াবহতা বেশি থাকায় তা আমাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বাধ্য করেছে। এবার সেই আগের দুই বছরের মতো সে রকম শঙ্কাময় নিরানন্দ ঈদ করতে হবে না আমাদের। তাই উৎসবের আমেজে পাঞ্জাবির বাজার বেশ বিস্তৃত হয়েছে।
আড়ং, লুবনান, তাগা, কে–ক্র্যাফট, অঞ্জন’স, দেশাল, লা রিভ, সাদাকালো, টুয়েলভ, ইয়েলো, কিউরিয়াস, সেইলর, ইজি, রঙ বাংলাদেশ, জেন্টল পার্ক—পরিচিত এ ব্র্যান্ডগুলোতে পাঞ্জাবির কালেকশন দেখে নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া রয়েছে আজিজ সুপার মার্কেট, যেখানে পাবেন নিত্যনতুন নকশার পাঞ্জাবি।
ঈদ মে মাসের প্রথমে। সে সময়টায় দেশজুড়ে ভীষণ গরম থাকবে। তাই ফেব্রিকের দিকে বিশেষভাবে এবার নজর রেখেছেন আমাদের ডিজাইনাররা। দেখা যাচ্ছে দেশি তাঁত কটন, ভিস্কোজ কটন, টেক্সচারড এমব্রয়ডারি করা কটন, আদ্দি কটন, রেয়ন কটন, এন্ডি সিল্ক, জয়শ্রী সিল্ক—এসব কাপড়ের আধিপত্য। কটনের বিপুল ব্যবহারের কারণ মূলত এবারের আবহাওয়া। আমাদের দেশের তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতায় কটন একটি উপযোগী ফেব্রিক। এর বাইরে সিল্কের আয়োজন রয়েছে জমকালো উৎসবমুখর পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার জন্য।
অলংকরণে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে এমব্রয়ডারি। নানান রকম এমব্রয়ডারি ডিজাইন দেখা যাচ্ছে। ছোট মোটিফ ব্যবহার করা হয়েছে বেশির ভাগ নকশায়। এখানে জ্যামিতিক মোটিফ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। ইসলামিক কৃষ্টি থেকে আগত ক্যালিগ্রাফি ধরনের মোটিফের ব্যবহারও রয়েছে। অল্প পরিমাণে দেখা যাচ্ছে প্রাকৃতিক মোটিফের ব্যবহার। অলংকরণের স্থান হিসেবে বেশির ভাগ পাঞ্জাবির নেকলাইন বেছে নেওয়া হয়েছে। কিছু পাঞ্জাবিতে দেখা যাচ্ছে বুকের অংশে কাজ। পাঞ্জাবির নিচের দিকে কাজ হয়েছে তুলনামূলক অল্প। একই সঙ্গে ওভার-অল অর্নামেন্টেশন এবার কম। নেকলাইন, বাটন প্লেট এবং স্লিভ বর্ডারে অলংকরণের মাধ্যমে সাজিয়ে তোলা হয়েছে বেশির ভাগ পাঞ্জাবিকে।
এবার বহুল ব্যবহৃত হয়েছে ওয়াক্স ডাই, টাইডাই এবং অমব্রে ডাই। ডাইয়ের নানা রকম কারুকার্য নান্দনিক করে তুলেছে পাঞ্জাবিগুলোকে। এর বাইরে অ্যাপ্লিক, ব্লক, ব্রাশপ্রিন্ট, ছাপা প্যাটার্নের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
ঈদে একরঙা সাদা পাঞ্জাবির আবেদন একেবারে চিরন্তন। ফ্যাশন হাউসগুলোও সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। আবহাওয়া বিবেচনায়ও এবারে পাঞ্জাবির ক্ষেত্রে সাদা, আইভরি, অফহোয়াইটের চাহিদা প্রবল। প্রতিটি ফ্যাশন হাউসেই তাই সাদা পাঞ্জাবির বিশাল কালেকশন। সাদার ওপরে সাদা সুতার সৃজনশীল ও নিপুণ নকশা করা হয়েছে কিছু সাদা জমিনের পাঞ্জাবিতে। সাদা সুতার কাজ, সাদা ছাপচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে অলংকরণের ক্ষেত্রে। আবার কোনো অর্নামেন্টেশন ছাড়া একেবারে সাদা পাঞ্জাবিও রয়েছে।
সব মিলিয়ে এবার পাঞ্জাবির জমজমাট ও বৈচিত্র্যময় কালেকশন রয়েছে ঈদের বাজারে। তবে হালকা রঙের ও কটনের পাঞ্জাবি রয়েছে বেশির ভাগ ক্রেতাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে।