সাজপোশাকের ব্যাকরণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো লুক পরিবর্তন। এই বদল পেতে কেবল একধরনের পোশাকে আটকে থাকি না আমরা। নতুন লুকের জন্য আসে নতুন ট্রেন্ড। কিন্তু শাড়ি এমন একটি পোশাক, যার ট্রেন্ড স্থায়ী। এর আবেদনও চিরন্তন। শুধু শাড়িকেই সব জেনারেশনের পোশাক বলে অভিহিত করা যায়। আবার যেকোনো শারীরিক গঠনেও শাড়ি সমানভাবে মানিয়ে যায়।
১২ হাত বা ১৮ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি বস্ত্রখণ্ড, তাতেই হয়ে যায় স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি আউটফিট। বিস্ময়কর এই পোশাক অগণিত স্টাইলিংয়ে পরা যায় সেলাই ছাড়াই। তবে সময়ের ফেরে এর বুননের ডিজাইনে আসে অভিনবত্ব। শাড়ির এমনই একটি ফ্যাশন হলো ডুরে। ইদানীং অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই ট্রেন্ডে নিজেকে সাজাতে তারকারাও পিছিয়ে নেই। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে সুতি বা হাফ সিল্ক তাঁতের শাড়িতে এবং আন্তর্জাতিক ডিজাইনারদের করা শিফন কালেকশনে স্ট্রাইপ বা ডুরের ব্যবহার দেখা গেলেও এমন জোরেশোরে আন্তর্জাতিক ট্রেন্ড হিসেবে স্ট্রাইপড শাড়ির ক্রেজ তৈরি হওয়ার ব্যাপারটি একেবারেই নতুন।
এই তো কিছুদিন আগেই ভারতীয় বাঙালি তারকা ডিজাইনার সব্যসাচী শাড়িতে স্ট্রাইপ নতুন করে নিয়ে আসেন। সব্যসাচীর কাজ মানেই সেটা স্টাইলিশ হতেই হবে। ফলে এই নকশা লুফে নেন তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ শাড়িপ্রেমীরাও। স্ট্রাইপড শাড়ির জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ এর কাপড়।
বর্তমান ট্রেন্ড অনুযায়ী পাতলা শিফন, জর্জেট বা সিল্ক কাপড়েই বেশির ভাগ স্ট্রাইপড শাড়ি ডিজাইন করা হচ্ছে। তাই ওজনে হালকা ও পাতলা শাড়িতে আরাম ও স্টাইল দুটিই পাওয়া যায়। আবার শাড়ির চিরচেনা ট্র্যাডিশনাল আমেজের সঙ্গে পাশ্চাত্য ডিজাইনের আধুনিকতা নিশ্চিত হচ্ছে আরামদায়ক, অনায়াস লুকে।
সাদা–কালো স্ট্রাইপের শাড়িতেই সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে তারকাদের। তবে সাদা-লাল, সাদা-সোনালি, মাল্টি কালার বা কয়েক রঙের স্ট্রাইপও কিন্তু দারুণ চলছে।
সাদা-কালো ও সাদা-সোনালি দুই ধরনের স্টাইপেই দেখা গেছে এই বলিউড ডিভাকে। যদিও এই দুই শাড়িতে তাঁর স্টাইলিং ছিল সম্পূর্ণ দুই ঘরানার। সাদা-কালো স্টাইপড শাড়ির সঙ্গে কারিনা পরেছেন ফুল স্লিভ বা বড় হাতার করসেট স্টাইলের ব্লাউজ। আর গতানুগতিক স্টাইলে শাড়ি না পরে তিনি কোমরের পাশে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন আঁচল। গলায় ছিল অক্সিডাইজড মেটালের ভারী নেকপিস। খোঁপা ছিল হালকা করে বাঁধা আর একেবারে গোছানো হেয়ার স্টাইল না করে রেখেছিলেন ‘মেসি’ বা ‘অগোছালো ভাব’। চোখে কালো পুরু কাজলের সঙ্গে ঠোঁট সাজিয়েছিলেন নুড লিপস্টিকে।
কারিনার সাদা-সোনালি স্ট্রাইপড শাড়ির লুক প্রথমটির চেয়ে কিন্তু পুরোপুরি আলাদা। সাদা শাড়িতে চিকন সোনালি রঙের প্রিন্টেড স্ট্রাইপে শাড়িটি গ্ল্যামারাস হয়েছে। শাড়ির সঙ্গে জোড় বেঁধে তিনি বেছে নিয়েছিলেন এমব্রয়ডারি ও মিরর ওয়ার্কের সোনালি স্লিভলেস ব্লাউজ। স্বভাবতই কানে, গলায় বা হাতে পরেননি কিছুই। ছিমছাম লুকের সঙ্গে হালকা ঢেউখেলানো চুল খোলা অবস্থায় ছেড়ে রেখেছিলেন এক পাশে। চোখ আর ঠোঁটের সাজও ছিল খুব হালকা। কাজল আর নুড লিপস্টিকেই অনন্যসাধারণ লেগেছে তাঁকে।
বোল্ড সাজের জন্য দীপিকার রয়েছে ভালোই সুনাম। একেবারেই গতানুগতিক ধারার বাইরে এক্সপেরিমেন্টাল সাজ তাঁর চেয়ে ভালোভাবে কেউই করতে পারেন না, বলেন সবাই। সব্যসাচীর সাদা-লাল স্টাইপড শাড়িতেও যথারীতি তিনি নজর কেড়েছেন ফ্যাশন পুলিশদের। শাড়িতে নেই নকশার বাড়াবাড়ি। একেবারেই হালকা এই শাড়ির সঙ্গে তিনি বেছে নিয়েছিলেন কালো ফুল স্লিভ ব্লাউজ। তবে স্লিভে ছিল টুইস্ট, যা পুরো পোশাকেই এনেছে নাটকীয়তা। হাতার নিচ থেকে প্রায় অর্ধেক অংশে সোনালি ভারী কাজ দীপিকার স্ট্রাইপড শাড়ি লুককে দিয়েছে অন্য মাত্রা। শাড়ির আঁচল ছেড়ে দিয়ে তিনি কোমরে পরেছিলেন সব্যসাচীর বেল্ট। সঙ্গে ছিল বোল্ড হেয়ার স্টাইল। পুলড ব্যাক, অর্থাৎ টান টান করে বাঁধা স্লিক বানের সঙ্গে লাল রঙের লিপস্টিক আর চোখে হালকা আইলাইনার ও কাজলের সাজ বেছে নিয়েছিলেন দীপিকা।
রাজকীয় ঘরানার সাজে দীপিকাকে মাত দেওয়া সত্যিই কঠিন। সম্প্রতি তাঁর এমনই একটি রূপ দেখা গিয়েছিল সাদা-সোনালি স্টাইপের এক শাড়িতে। কনুই পর্যন্ত লম্বা হাতা ও গলা বন্ধ ব্লাউজে তিনি সেজেছিলেন ঠিক রানির মতোই। রাজকীয় ভাব আনতে সংগত দিয়েছে মুক্তা, পাথর, কুন্দন আর সোনার মিশেলে গয়না।
স্টাইলের বিচারে আলিয়াও নেই পিছিয়ে। তাঁর নিত্যনতুন ফ্যাশন সেন্সের ভক্ত আছেন অনেক। পাশ্চাত্য পোশাকের পাশাপাশি একেবারেই ভারতীয় পোশাক ও সাজে সমানভাবেই তিনি অনন্য। আলিয়ার রঙিন স্ট্রাইপড শাড়িতে বেগুনি, কমলা, হলুদ, হালকা গোলাপি, কালো রংগুলোই এনে দিয়েছে ভিন্নতা। এর সঙ্গে জমকালো সোনালি এমব্রয়ডারি করা ভারী পাড় এনেছে এথনিক লুক। এই শাড়ির সঙ্গে তিনি কপালে পরেন ছোট কালো টিপ। চোখে-ঠোঁটে হালকা মেকআপ। আর সঙ্গে ছিল লম্বা ঝোলানো দুল।
ছবি: ইন্সটাগ্রাম