পথটা সহজ ছিল না আইদা মেহনাজের
শেয়ার করুন
ফলো করুন

মাত্রই কোভিড থেকে উঠেছেন। রেশ রয়েছে এখনো। ঈদের দিন কথা হচ্ছিল আইদার সঙ্গে। প্যারিসে নিজের ঘরে বসে কথা বলছিলেন। রোববার, ছুটির দিন। বাসাতেই ছিলেন।

আইদার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মাঝেমধ্যেই কথা হয়। তবে এবারের বিষয় ছিল তাঁকে নিয়ে ভোগের সাক্ষাৎকার। ভোগ ফ্রান্সের সাংবাদিক ইউসরা জেইন সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাঁর। ডুয়া লিপা, বেলা হাদিদদের মতো তারকাদের সামলাতে হয় তাঁকে। আর এর বাইরে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হয় সাংবাদিকদের সঙ্গে। বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা তো করতেই হয়, প্রয়োজনে শুটের পোশাক পাঠানো, কোথায় কী ছাপা হলো না হলো—সবই রাখতে হয় নখদর্পণে। ফলে, সাংবাদিকদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই সখ্য গড়ে উঠেছে আইদার। ইউসরাও ব্যতিক্রম নন।

বিজ্ঞাপন

তবে আইদা বললেন, ‘কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার আগে একদিন ইউসরার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। নানা বিষয় নিয়েই জানতে চাচ্ছিলেন ইউসরা। আমি ভাবছিলাম, তাঁর বোধ হয় মুগলারসংক্রান্ত তথ্য প্রয়োজন। আমিও সেভাবে উত্তর দিচ্ছিলাম। এ পর্যায়ে আমি বলি যে মুগলার নিয়ে কি তুমি কিছু লিখতে চাও? সে বলে, না, মুগলার নয়, তোমাকে নিয়ে। আমি তো আকাশ থেকে পড়ি!’

‘এভাবেই শুরু। তারপর একদিন দিনক্ষণ ঠিক করে আমাদের কথা হয়। আমি কিছু ফরাসিতে, কিছু ইংরেজিতে তাঁর কৌতূহল নিবারণ করি,’ যোগ করেন আইদা।

ইউরার প্রস্তাবে একটু অবাকই হন আইদা মেহনাজ
ইউরার প্রস্তাবে একটু অবাকই হন আইদা মেহনাজ

ইউসরা বলছিলেন, আরও একটা বিষয় নিয়ে নিবন্ধ লেখার আগ্রহ দেখিয়ে সেটা তাঁর সম্পাদক (ভোগ ফ্রান্সের সম্পাদক) ইউজিনি তোরশুর টেবিলে দিয়ে রাখলেও অনুমোদন এখনো মেলেনি। অথচ আইদাকে নিয়ে লেখার বিষয়টি সম্পাদককে জানালে সঙ্গে সঙ্গে অনুমতি দিয়ে দেন।

বিজ্ঞাপন

আইদাকে নিয়ে লেখার বিষয়টি ইউজিনির পছন্দ হওয়ার কারণও রয়েছে। যেহেতু মডেস্ট ফ্যাশনের অনুসারী তৃতীয় বিশ্বের একটি মেয়ে মুগলারের মতো ব্র্যান্ডে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলাচ্ছেন; বিষয়টা যতটা সহজ শোনাচ্ছে, ততটা তো নয়। এখানে তো তাঁর হার্ডশিপ রয়েছে যথেষ্টই। এসব বিষয়ই আসলে পরবর্তী সময়ে উঠে আসে ইউসরার সঙ্গে কথোপকথনে।

আজকের অবস্থানে আসতে অনেক চড়াই পার হয়েছেন মেহনাজ
আজকের অবস্থানে আসতে অনেক চড়াই পার হয়েছেন মেহনাজ

আইদা বলেন, ‘ফ্রান্সে বা বৃহত্তর অর্থে পশ্চিমা ফ্যাশন জগতে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের বাদামি ত্বকের ছেলেমেয়েদের কাজ পাওয়া অতটা সোজা নয়। আমি নিজেকে দিয়েই তো সেটা অনুভব করতে পারি। আমার রেজাল্ট যথেষ্ট ভালো ছিল। অনার লিস্টে নাম ছিল। কিন্তু ব্র্যান্ডগুলোয় আবেদনের পর দেখা গেল আমার থেকে পিছিয়ে থাকা শ্বেতাঙ্গ সহপাঠীরাই সেখানে চাকরি পেয়েছে।’

‘আসলে আমার মতো হিজাব পর একটা মেয়ের পক্ষে বড় ব্র্যান্ডে কাজ পাওয়া কঠিন বৈকি। আর গ্র্যাজুয়েশনের পর সেটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। তবে হ্যাঁ, এখন সেটা অনেক সহজ। অন্তত আমার যে অভিজ্ঞতা, তাতে বর্তমানে আমাকে যে কেউ নিতে পারে,’ বললেন আত্মবিশ্বাসী আইদা মেহনাজ।

এ সাক্ষাৎকারে আরও উঠে এসেছে থিয়েরি মুগলারের মতো ব্র্যান্ডকে নেপথ্যে থেকে সামলানো, এ পর্যন্ত আসা, ফ্রান্সের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে কাছ থেকে দেখা ও জানা ইত্যাদি বিষয়; আরও আছে ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে থেকে তাঁর অভিজ্ঞতা এবং সেই আলোকে তাঁর ভবিষ্যৎ ভাবনাও।

ডুয়া লিপার সঙ্গে আইদা মেহনাজ
ডুয়া লিপার সঙ্গে আইদা মেহনাজ

ফ্রান্সের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি, এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্র্যান্ড থিয়েরি মুগলারের ব্র্যান্ড ভিশনকে এগিয়ে নেওয়া, ফ্যাশন ব্র্যান্ড থেকে কসমেটিক ব্র্যান্ড হয়ে ওঠা মুগলারকে আবারও ফ্যাশনে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এবং সমান্তরালে এ ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার বিষয়গুলোও ইউসরার সঙ্গে শেয়ার করেছেন আইদা এ আলাচারিতায়। ফলে, বিষয়টি কেবল সুখপাঠ্যই হয়ে ওঠেনি; বরং তৃতীয় বিশ্বের ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষণীয়ও হয়েছে।

আর অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য এটা একটা বিরাট অর্জনও বৈকি। কারণ, এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশিকে নিয়ে ভোগ ফ্রান্স নিবন্ধ ছাপেনি বা তাঁর সাক্ষাৎকার নেয়নি। এ সাক্ষাৎকার তাদের অনলাইনে প্রকাশিত হলেও মুদ্রিত সংস্করণের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও রাখা হয়েছে।

আইদাকে নিয়ে ভোগ ফ্রান্সের নিবন্ধটি (https://www.vogue.fr/mode/article/rencontre-aydha-mehnaz-mugler-mode-modeste) তাই অনুবাদ করে পড়া যেতে পারে।

ভোগে প্রকাশিত আইদার ছবি নিয়েও কথা হচ্ছিল। আইদা হাসতে হাসতে বললেন, ছবিটা কিন্তু কমলাপুর রেলস্টেশনে তোলা।

ছবি: আইদার দেওয়া

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২২, ০৭: ৫৮
বিজ্ঞাপন