সম্প্রতি 'এশিয়ান অটো জিমখানা চ্যাম্পিয়নশিপ' শিরোনামের একটি প্র্যাকটিস রেসে কাশফিয়া আরফা অর্জন করেছেন ষষ্ঠ স্থান। এভাবেই আন্তর্জাতিক এফআইএ মোটরস্পোর্ট প্রতিযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরলেন তিনি। ১৭ অক্টোবর মালয়শিয়ায় আরেকটি রেস আছে কাশফিয়ার। এরপর ২৩ অক্টোবর স্পেনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবেন তিনি। অংশগ্রহণ করবেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেসিং প্রতিযোগিতা এফআইএ মোটরগেমস ২০২৪–এ। এই প্রতিযোগিতার অটো স্ল্যালোম ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহণ করবেন এই নবীন রেসার। এই প্রতিযোগিতায় দুজন চালক প্রয়োজন হয়। তাই কাশফিয়ার সঙ্গী হবেন আরহাম রহমান।
মূলত আরহাম রহমানই খুঁজে নিয়েছেন কাশফিয়াকে। ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডেলে কাশফিয়ার রেসিং দক্ষতা দেখে অটো মোবাইল অ্যাসোসিশন অব বাংলাদেশ–এর মাধ্যমে কাশফিয়াকে নক করেন আরহাম। অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন এবার বাংলাদেশ থেকে দল পাঠাচ্ছে এফআইএ মোটরগেমসে। যেখানে অধিনায়ক হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও চ্যাম্পিয়ন মোটরস্পোর্ট রেসার অভিক আনোয়ার।
খুব ছোট বয়স থেকেই গাড়ির প্রতি দারুণ আকর্ষণ কাশফিয়ার। তাঁর প্রথম রেসিং গাড়ি মাজদা আরএক্সএইট স্পোর্টস কার। মায়ের কাছ থেকে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের বিনিময়ে চেয়ে নিয়েছিলেন। নীল রঙের সেই গাড়িটি এখনো তাঁর ভীষণ পছন্দ। যদিও কোন বিশেষ ব্র্যান্ড, মডেল কিংবা রং কাশফিয়াকে আকর্ষণ করে না। তাঁর গাড়ি হলেই চলে। যেকোনো গাড়িতেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
প্রথম গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে কাশফিয়া বলেন, প্রথম গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা অবশ্যই রোমাঞ্চকর ছিল। খুব ছোটবেলাতেই স্টিয়ারিং ধরেছিলাম। ছোট থেকেই গাড়ির প্রতি আকৃষ্ট ছিলাম। ফাঁকা জায়গা পেলে সেখানে গাড়ি চালাতাম।
গাড়ির প্রতি এই ভালোবাসা থেকেই রেসিংয়ের শুরু। কাশফিয়া বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই ফরমুলা ওয়ানের ভক্ত। আর তখন থেকেই রেসিং আমার স্বপ্ন। ২০১৮ থেকে ড্রাইভিং শুরু করি। এসময় আমার সঙ্গী আলিফ হোসাইন খান আমাকে প্রেরণা যোগান, গাড়ির প্রতি এই আসক্তিকে পেশায় পরিণত করতে। রেসিংয়ে গতি আর চ্যালেঞ্জের মধ্যে এক ধরনের রোমাঞ্চ কাজ করে। প্রতিটি মূহুর্তের জন্য ফোকাসড থাকতে হয়, এটা আমাকে রেসিংয়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
রেস চলাকালীন মাথায় কী কাজ করে জিজ্ঞেস করলে কাশফিয়া জানান, আমি আমার দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছি। আমাকে পারতেই হবে। আসলে কোন অর্জন আমার একার নয়। সব দেশের জন্য।
রেসিংয়ের ক্ষেত্রে কাশফিয়া অনুসরণ করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় ও চ্যাম্পিয়ন রেসার অভিক আনোয়ারকে; আর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ফিলিপাইনের রেসার বিয়াংকা বাস্তামান্তেকে। তবে জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর মা। খুব অল্প বয়সেই বাবাকে হারিয়েছেন এই রেসার। কাশফিয়া বলছিলেন, এরপর থেকে মা একা হাতেই আমাদের দুই বোনকে আগলে রেখেছেন। তাঁর ত্যাগ, ভালোবাসা ও সাহস আমাকে প্রতিনিয়ত নতুন করে বাঁচতে শেখায়।
ফ্যাশন নিয়েও কথা হয় কাশফিয়ার সঙ্গে। স্পোর্টসওয়্যার সবচেয়ে পছন্দ তাঁর। সবসময় তাঁকে এই পোশাকেই দেখা যায়। আর পছন্দের রং সাদা। মজার ছলে বলে ওঠেন, পারলে বিয়ের অনুষ্ঠানেও স্পোর্টসওয়্যার পরে যেতাম। রেসিংয়ের পাশাপাশি কাশফিয়া আরফা হ্যান্ডবলেও তুখোড়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অত্যন্ত সাহসী বলে প্রশংসা করা হচ্ছে কাশফিয়াকে। এ ব্যাপারে কাশফিয়া অভিমত, আসলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঝুঁকি বা বাধা থাকে। আর এই ভয়, অনিশ্চয়তার বাধাগুলো অতিক্রম করতে সাহসই সবচেয়ে বড় শক্তি। তবে শুধু সাহসই না, সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস, পরিশ্রম আর ধৈর্য্যও সফলতার জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক র্যালিক্রস চ্যাম্পিয়নশীপে অংশ নেয়ার ইচ্ছা আছে কাশফিয়ার। আর দেশবাসীও এখন তাঁর স্বপ্নের সঙ্গে শামিল হয়ে গেছেন, বলতেই হয়।
ছবি: কাশফিয়া আরফার সামাজিক মাধ্যম