মোটরস্পোর্টকে কীভাবে বাংলাদেশে আরও জনপ্রিয় করা সম্ভব?
খুব সহজ। আজকাল প্রায় বাসায়ই পিএসফোর বা পিএসফাইভের মতো কনসোল থাকে। আবার ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত করা যায় সিমুলেটর যেমন লজিটেকের স্টিয়ারিং হুইল। বড়জোর ২৮ হাজার টাকা মূল্যের এই স্টিয়ারিং হুইল বা কনসোলের সাহায্যে যে কেউ ভালো ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই অনলাইনে বিভিন্ন মোটরস্পোর্ট টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারবে। প্রায়ই এ রকম রেসিং ইভেন্টে স্পন্সরশিপ চুক্তি থাকে যে, কেউ জিতলে তাকে সম্পূর্ণ কোম্পানির খরচে সত্যিকারের মোটরস্পোর্ট টুর্নামেন্টে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
আমি এই কথা বারবার সবাইকে বললেও আসলে কেউ খুব মনোযোগ দেয় না এই বিষয়ে। যারা সিমুলেশনে ভালো, তারা অনায়াসে এভাবে মোটরস্পোর্টসে আসতে পারে। আমিও একবার ভারতের এমন একটি ভার্চ্যুয়াল টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলাম। অবশ্য সে সময়ে আমার হাত ভেঙে যাওয়ায় আমি জিততে পারিনি, টপ থার্টিতে এসেছিলাম। আমি যদি পারি, তবে সবাই পারবে এভাবে এগোলে।
আমাদের দেশে গাড়ি নিয়ে আরও কী কাজ করা যায়?
আমাদের দেশের মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রচেষ্টায় বাজেটে সামনে হাইব্রিড গাড়ির ডিউটি কমিয়ে আনা হচ্ছে। এই পদক্ষেপ সাধারণ এবং বিলাসবহুল দুই ধরনের হাইব্রিড গাড়ির জন্যই প্রযোজ্য হবে। ইলেকট্রিক গাড়ির দামও কমে আসবে সামনে, এ ধরনের গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে সরকার। সেই সঙ্গে দেশের সর্বত্র ইলেকট্রনিক চার্জিং পয়েন্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এখন আসলে সবাই বুঝতে পারছেন যে এই হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক গাড়িই আমাদের ভবিষ্যৎ। আর এ ক্ষেত্রে আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে আছি। আমাদের দেশে তো এ ধরনের গাড়ির লোকাল প্রোডাকশনও শুরু হয়ে যাচ্ছে, অনেকেই বলছে তারা ইলেকট্রিক গাড়ি বানাবে।
রেসট্র্যাকে আর কী কী গাড়ি চালাতে আপনি উপভোগ করেন?
রেসট্র্যাকে আরেকটি খুবই ফান টু ড্রাইভ গাড়ি হচ্ছে হোন্ডা সিভিক টাইপ আর। এটি আসলে ফ্রন্ট হুইল ড্রাইভ টাইপের হলেও সঠিক টায়ার প্রেশারে এই গাড়িটি রিয়ার হুইল ড্রাইভের মতো আচরণ করে। তো একই গাড়িতে আপনি দুই ধরনের ব্যাপার উপভোগ করতে পারছেন। এই গাড়িটি দিয়েই আমার রেস করার কথা মালয়েশিয়ায়। আর লোকালি যেসব গাড়ি আছে তার মধ্যে সবচেয়ে ফান টু ড্রাইভ হচ্ছে এই আমার পেছনের টয়োটা সুপ্রাটি। এটা টয়োটা আর বিএমডব্লিউর কোলাবোরেশনে তৈরি।
অনেকেই এই গাড়িকে বিএমডব্লিউ যি ফোর বলে মজা করে বা যুপ্রা বলে। এই কোলাবোরেশনের কারণ হচ্ছে, বর্তমান সময়ে টয়োটা প্রধানত ফ্যামিলি কার বা সেডান বানিয়ে থাকে আর বিএমডব্লিউ গাড়ির ইঞ্জিনের ফোকাস থাকে গাড়িকে পারফরম্যান্স–নির্ভর করার দিকে। তাই সঠিক ইঞ্জিনের জন্য বিএমডব্লিউর সঙ্গে কোলাবোরেট করেছে টয়োটা। যাতে তারা সঠিক ভোক্তা গোষ্ঠীর জন্য সঠিক জিনিসটি দিতে পারে। বাংলাদেশে এই গাড়ি এখনো ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে না থাকলেও বাইরে এই গাড়িটি বেশ বিক্রি হচ্ছে।
এবারের জয় আপনার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি আর কোনো জয় কি আপনাকে বিশেষ আনন্দ দেয়?
ভক্সওয়াগন পোলো কাপ শুরু হলো এ বছর ভারতে। এখানে ২২টি একদম একই রকম গাড়ি থাকে, যাতে নিজে থেকে কোনো কিছু পরিবর্তন করা যাবে না। ভক্সওয়াগনই গাড়িগুলো দেয়। আর ভারতীয় রেসাররা সত্যিকারের অ্যাথলেট। তারা যখন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে, তখন তারা খুবই সিরিয়াস থাকে। একটু প্রশ্রয় বা প্রশংসা পেলেই পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ে না। তারা বলতে গেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একেবারে নির্দয় ও স্যাভেজ। ওখানে আমরা চারজন বাংলাদেশি যাই। আমি, আমার ছাত্র ইশায়েত হোসেন এবং সঙ্গে চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে আরও দুইজন। এদের মধ্যে আমিই একমাত্র তিনবার পোডিয়ামে গিয়েছি। দুইবার দ্বিতীয় স্থান এবং একবার রেস জয়।
এই রেসের পরে আমি ইন্টারভিউতে বলেছি, ভারতের এই রেসটি জেতা অন্য দশটি রেসে জেতার সমান। এর কারণ হলো, এই রেসটি অসম্ভব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। রেসের ভিডিও দেখলেই সেটা বোঝা যাবে। কোয়ালিফাইংয়ের প্রথম ১৪ জনের মধ্যে সবার রেসিং টাইম এক সেকেন্ড সময়ের মধ্যেই। আমার মনে হয় এই রেসটি ফর্মুলা ওয়ান রেসের মতোই প্রতিযোগিতামূলক। ১৪টি গাড়ি এক সেকেন্ডের ভেতরেই কোয়ালিফাই করা খুবই চমকপ্রদ একটি ব্যাপার। তাই ভারতের রেসগুলো আসলে খুবই কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। গাড়ি সব এক, ফুয়েল লেভেল, ওজন সবই সমান। তাই মার্জিন অফ এরর এখানে ন্যূনতম; এ ছাড়া এখানে জিততে হলে খুবই মাথা খাটাতে হয়। কীভাবে মানুষের সঙ্গে ডিল করতে হবে, কীভাবে গাড়ি হ্যান্ডেল করতে হবে—এসবও ভাবতে হয়। এ ক্ষেত্রে পলিটিক্যালি কারেক্ট হওয়াও খুব গুরুত্বপূর্ণ; কারণ রেসিংয়ের আসলে দুটি পর্যায়। একটি ট্র্যাকে আর আরেকটি হলো ট্র্যাকের বাইরে।
(চলবে)