দেশের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী কাজী নওশাবা আহমেদ। এবার একটু অন্য রকম ঈদ কাটাবেন তিনি। কারণ, বাবাকে ছাড়া এবার নওশাবার প্রথম ঈদ। তবে রোজার শেষ দিনগুলোতে বেশ ব্যস্ততায় পার করছেন। ফাহমিদা শিকদারের সঙ্গে কথায় কথায় জানিয়েছেন নানা বিষয়।
ঈদসহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হচ্ছিল নওশাবার সঙ্গে। বলছিলেন, ২৫ রোজার পর থেকেই তাঁর ঈদ শুরু হয়। এ সময়টা তিনি কাটান সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে। ওদের জন্য ইফতার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ওদের গান শোনানো ও হাতে মেহেদি লাগানোর ব্যবস্থাও করা হয়। এতে স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি তাঁর বন্ধুরাও তাঁকে সাহায্য করেন।
ঈদ উপলক্ষে খুব একটা শপিং করা হয়নি তাঁর। যখনই কিছু কেনেন, তখনই একটা চরিত্রের কথা চিন্তা করে কেনেন। এবার ঈদেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি নওশাবার জন্য কিছুই কিনিনি আমি। তবে আমার মেয়ে প্রকৃতির জন্য বেশ সুন্দর কিছু জামা কিনেছি। ও আবার পোশাক-আশাকের ব্যাপারের খুবই শৌখিন। তার ওপর ওর পছন্দ ভ্যান গঘ আর পিকাসোর পেইন্টিং। ডিজাইন হিসেবে এ ধরনের পেইন্টিং আছে, এবার ঈদে এমন পোশাক কিনে দিয়েছি।
এবার ঈদে খুব একটা উপহার পাওয়া হয়নি তাঁর। উপহার পাওয়ার চেয়ে নাকি উপহার দিতে তিনি বেশি পছন্দ করেন। অবশ্য কেউ তাঁকে বই, গাছ, বিড়াল উপহার দিলে খুব খুশি হন। কথায় কথায় জানালেন, মায়ের জন্য এবার কী কিনবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। বলেন, ‘আম্মুকে এমন কিছু দিতে চাই, যাতে বাবার কথা মনে করে কান্নাকাটি না করেন। যাতে তাঁর প্রতি আমার ভালোবাসাটা প্রকাশ পায়।’
গেল ডিসেম্বরেই বাবাকে হারিয়েছেন নওশাবা। সেই দুঃখবোধ কিছুতেই তাড়াতে পারছেন না, বরং এবারই প্রথম তাঁকে বাবা ছাড়া ঈদ করতে হবে। এই শূন্যতার বোধ তাঁকে ঘিরে আছে। ঈদের প্রস্তুতির মধ্যে বারবার সেই শূন্যতা অনুভব করছেন। তবু জীবন চলতে থাকে। তাই তিনিও নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। তাতে হয়তো কিছুটা স্বস্তি মিলছে।
ঈদের দিনে তিনি খুব হালকা সাজপোশাকে থাকবেন। সারা বছরই কাজের জন্য মেকআপ করতে হয়। মুখ-ত্বকে প্রচুর প্রসাধন ব্যবহার করতে হয়। ঈদের সময়টাতে তাই নিজের ত্বকটাকে একটু বিশ্রাম দিতে চান। ঈদের সারা দিন সুতি পোশাকে কাটিয়ে দেবেন। পোশাকটি ফতুয়াও হতে পারে কিংবা শাড়িও। তবে সাদা রঙের হবে, এটা নিশ্চিত। কারণ, নওশাবার সবচেয়ে প্রিয় রং যে সাদা। সাদা যেকোনো কিছু দেখলেই তাঁর মন ভালো হয়ে যায়।
দেশি-বিদেশি খাবার নিয়ে নিরীক্ষা নওশাবার প্রিয় শখগুলোর একটি। তাই তো প্রতিবছর ঈদে নিজে কিছু না কিছু রান্না করেন। কী রান্না করবেন তা ঠিক করে দেয় তাঁর মেয়ে প্রকৃতি। তিনি বলেন, ‘আমি দেশ-বিদেশের রান্না করতে খুব পছন্দ করি। প্রতিবছর ঈদের আগে প্রকৃতিকে জিজ্ঞেস করি, “আম্মু এবার বলো তো কোন দেশের খাবার খাব আমরা?” এরপর ও যেই দেশের কুজিনের কথা বলে, সেই দেশের সেই পদ রান্না করি।’
খাবারের কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ বলে ওঠেন, ‘ইশ! এখন আবার আমার বাবাটার কথা মনে পড়ে গেল। আব্বু ঈদের আগে জিজ্ঞেস করতেন, “মা, এবার তুমি কোন দেশি খাবার রান্না করবে?” আব্বু আমার হাতের রান্না খুবই পছন্দ করতেন। তিনি সব সময় রান্নার ব্যাপারে আমাকে সঠিক মতামত দিতেন।’
প্রিয় খাবারের কথা উঠতেই বেশ জোরে হেসে উঠে বললেন, ‘আচার! আচার হলে আমার আর কিচ্ছু লাগে না। ঈদের দিন তিন বেলা যা-ই খাই না কেন, সঙ্গে আচার থাকবেই।’ এ ছাড়া সালাদ ও কনটিনেন্টাল খাবারের প্রতি দুর্বলতা আছে নওশাবার।
ঈদের দিন বাসায় মা, মেয়ে ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাবেন বলে জানান নওশাবা। এরপর একটা সময় করে প্রকৃতিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন কোথাও ঘুরতে। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে বিশেষ কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাঁর নেই।
এবার ঈদে নওশাবার দুটি নাটক প্রচারিত হবে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার একটি নাটকে ছয়টি ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছি। অল্প সময়ের মধ্যে লুক ও কস্টিউম পরিবর্তন করে চরিত্রে ঢুকতে বেশ ধকল গেছে। তিন দিনে ছয়টি চরিত্র করাটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। সময়স্বল্পতার পরও প্রতিটি চরিত্র সঠিকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। সে কাজে কতটা সফল হয়েছি, তা এখন দর্শকই ভালো বলতে পারবেন।’