জন্মদিনে জেনে নিন তেষট্টির তরুণ টম ক্রুজের হেলিকপ্টার স্টান্টে বিশ্বরেকর্ড করা ফিটনেসের রহস্য 
শেয়ার করুন
ফলো করুন

পৃথিবীর অন্যতম সুদর্শন পুরুষ হিসেবে টম ক্রুজের নাম বহুবার উঠে এসেছে। যদিও তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক সবসময় স্থিতিশীল ছিল না, তবে একটি ক্ষেত্রে তিনি বরাবরই অটল তা হলো তাঁর পরিমিত জীবনধারা। খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, ব্যায়াম সবকিছুতেই আছে দারুণ শৃঙ্খলা ও নিয়মের ছোঁয়া। আর এ কারণেই তিনি শুধু হলিউড নয়, পুরো দুনিয়ার স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে এক অনুপ্রেরণা। সম্প্রতি মিশন ইম্পসিবল-এর সিকুয়েলে হেলিকপ্টার স্টান্টে বিশ্বরেকর্ড করেছেন তিনি। ১৭০০ ফিট উচু থেকে প্যারাশ্যুট জাম্প দিয়ে এতে আগুন লাগা অবস্থায় লাফিয়ে পড়েছেন ল্যান্ডে টম এই বয়সে। তাও ১৬ বার।

আলোচিত সেই স্টান্ট, যেটি বশ্বরেকর্ডের মর্যাদা সিয়েছে সুপারফিট টম ক্রুজকে
আলোচিত সেই স্টান্ট, যেটি বশ্বরেকর্ডের মর্যাদা সিয়েছে সুপারফিট টম ক্রুজকে

টম ক্রুজের খাদ্যতালিকা বৈচিত্র্যপূর্ণ হলেও তাতে কিছু জিনিস একেবারেই নিষিদ্ধ। তিনি তিনটি খাবার পুরোপুরি এড়িয়ে চলেন। সেগুলো হলো চিনি ও চকলেট, ক্রিস্পস বা চিপস এবং ভাজাভুজি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের খাবার শরীরে প্রদাহ তৈরি করে, রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বাড়িয়ে দিয়ে পরে এনার্জি ক্র্যাশ ঘটায়, যার ফলে হঠাৎ করে ক্লান্তি, অমনোযোগিতা ও ত্বকের উপর বয়সের ছাপ পড়ে যায়।

শুধু হলিউড নয়, পুরো দুনিয়ার স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে এক অনুপ্রেরণা টম ক্রুজ
শুধু হলিউড নয়, পুরো দুনিয়ার স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে এক অনুপ্রেরণা টম ক্রুজ

টম ক্রুজ দিনে যেভাবে খাদ্য গ্রহন করেন একে পুষ্টিবিদদের ভাষায় বলে পোর্শন কন্ট্রোল। টম ক্রুজ দিনে ১৫ বার স্ন্যাকস হিসেবে খাবার গ্রহণ করেন। প্রতিটি খাবারই রান্না হয় কম তাপে, যাতে তার পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। তালিকায় থাকে অ্যান্টি অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার যেমন ব্লুবেরি, বিটরুট, আদা, ব্রকোলি, পালং শাক, টমেটো, স্যামন, হোয়াইট ফিশ, ডিম, অলিভ অয়েল, বাদাম, ডার্ক চকলেট।  অ্যালকোহল একেবারেই গ্রহণ করেন না। তাঁর শরীরে যেন খনিজ উপাদান ও পুষ্টির ভারসাম্য বজায় থাকে, সে জন্য তিনি ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেন নিয়মিত। 

বিজ্ঞাপন

যে পাঁচটি খাবার তাঁকে দীর্ঘমেয়াদিভাবে ফিট রেখেছে সেগুলো খুবই স্বাস্থ্যকর। প্রথমত তিনি প্রোটিনজাতীয় খাবার খান গুরুত্ব দিয়ে৷ যেমন ধীরে ধীরে গ্রিল করা প্রোটিন, ওয়াইল্ড স্যামন, মুরগির বুকের মাংস ও  বাইসনের চর্বিছাড়া মাংস। এ ধরনের হাই প্রোটিনযুক্ত খাবার তাঁর জন্য মাত্র ১৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপে ধীরে রান্না করা হয়। এতে পুষ্টিগুণ যেমন থাকে, তেমনি খাবারটি শরীরের জন্যও সহজপাচ্য হয়। 

প্রোটিন আর ব্লুবেরিতে আস্থা রাখেন টম
প্রোটিন আর ব্লুবেরিতে আস্থা রাখেন টম

দ্বিতীয় খাবারটি হলো ব্লু বেরি। টম ক্রুজের মিষ্টির ক্রেভিং পূরণ করে এই ফল। এক সাক্ষাৎকারে তিনি মজা করে বলেছেন, আমার সব পোশাকের মধ্যে লুকানো পকেট আছে যেখানে ব্লুবেরি থাকে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফ্রি রেডিক্যাল নিয়ন্ত্রণক্ষমতা সম্পন্ন ব্লুবেরির জাদুতেই এখনো ২০ ফুট উচ্চতা থেকে লাফ দেওয়ার যেসব দুর্ধর্ষ স্টান্ট আমরা তাঁকে করতে দেখি, সেগুলো সম্ভব হয়। 

বিজ্ঞাপন

তৃতীয় খাবারটি হলো কাঁচা শাকসবজি। পালং শাক, ব্রকলি, বিটরুটের পাতা ও আরুগুলার মতো সবুজ শাকে থাকা নাইট্রেট রক্তনালীকে প্রসারিত করে, ফলে শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়ে। যা জোর দৌড়ানোর মতো সিনেমেটিক দৃশ্যে তাঁকে  সহায়তা করে। 

চতুর্থটি হচ্ছে বাদাম। তীব্র পরিশ্রম ও এনার্জি বুস্টে বাদামের কোন বিকল্প নেই। তাই এটা থাকেই তাঁর খাদ্য তালিকায়। 

বাদাম আর শাকসবজিই তাঁর তারুণ্যের রহস্য
বাদাম আর শাকসবজিই তাঁর তারুণ্যের রহস্য

পঞ্চমটি হলো হালকা তাপে রান্না করা সবজি । টমেটো, বিট রুট, আদা ও ক্যাপসিকাম ১৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রার নিচে রান্না করা হয়। এই তাপে রান্না করলে ভিটামিন সি ও পলিফেনলের  পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। মাছ কিংবা মাংসের সঙ্গে তিনি এই সবজি খেয়ে থাকেন। 

টম ক্রুজের ব্যায়াম রুটিন খুবই নিয়মতান্ত্রিক 

কাজপাগল এই মানুষটি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "আমি সপ্তাহে সাত দিন কাজ করতে ভালোবাসি।" শুটিংয়ের বাইরে তাঁর প্রতিটি দিন শুরু হয় ভোর সাড়ে পাঁচটায়। চোখ খোলেন একটি ভাইব্রেন্ট এলার্মে, উঠে এক মিনিট নিজের মতো করে বসে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান নতুন দিনের জন্য। তারপরই শুরু হয় তাঁর সকালের রুটিন।

সকালের ফিটনেস রুটিন

৫ মিনিট ওয়েকিং ওয়াক। ট্রেডমিলে উঠে ধীরে ধীরে হাঁটেন তিনি এ সময়।

কানে থাকে প্রিয় অডিও বুক। এই সময় মানসিক প্রশান্তিও পেয়ে যান তিনি।

এরপর চলে যান ডাইনামিক স্ট্রেচিংয়ে, শরীরকে প্রস্তুত করেন ভারোত্তোলনের জন্য।

তারপর শুরু হয় আসল ব্যায়াম ওয়েট ট্রেনিং।

টম ক্রুজ সাধারণত রাত আটটার মধ্যেই রাতের খাবার শেষ করেন (শুটিং না থাকলে)। এই নিয়ম তিনিই ঠিক করেছেন, সুস্থ শরীর ও মানসিক স্বস্তির জন্য।

প্রথমেই ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান টম নতুন দিনের জন্য। তারপরই শুরু হয় তাঁর সকালের রুটিন
প্রথমেই ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান টম নতুন দিনের জন্য। তারপরই শুরু হয় তাঁর সকালের রুটিন

তিনি সপ্তাহে ৫ দিন নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। এক নজরে তাঁর ব্যায়ামের রুটিন হচ্ছে- 

সোমবার :  চেস্ট, শোল্ডার ও ট্রাইসেপ 

মঙ্গলবার : ফাংশনাল ও আউটডোর অ্যাকটিভিটি (সি-কায়াকিং, ফেন্সিং, হাইকিং, রক ক্লাইম্বিং) 

বুধবার: ব্যাক,বাইসেপস ও ট্র্যাপসেপস 

বৃহস্পতিবার - এক্টিভিটি ও  হাই ইন্টেন্সিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং 

শুক্রবার - লেগস ও কোরস 

টম ক্রুজের কাছে ফিটনেস মানে শুধু পেশীর জোর নয়; তিনি গুরুত্ব দেন শরীরের গতিশীলতা, নমনীয়তা এবং নিয়ন্ত্রণের উপর। তাই ভারী ওজন তোলার বদলে তিনি বেছে নিয়েছেন বডিওয়েট ও ফাংশনাল ট্রেনিং। সিনেমার কঠিন স্টান্টগুলো করার আগে তাঁর শরীর প্রস্তুত থাকে নানা দিক থেকে, যাতে লাফানো, দৌড়ানো কিংবা উঁচু জায়গা থেকে ঝাঁপ দেওয়া সবকিছুই হয় সাবলীল। 

এই তেষট্টির তরুণের কাছে দিনের প্রথম খাবার মানে শক্তির আধার। হাই-প্রোটিন ব্রেকফাস্ট তাঁর প্রতিদিনের রুটিনের অপরিহার্য অংশ। ডিম, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার তাঁকে সারাদিন ধরে রাখে কর্মক্ষম ও লক্ষ্যভেদী। তাঁর বিশ্বাস, দিনটি শুরু হোক এমনভাবে যেন শরীর ও মন দুটিই তৈরি থাকে নতুন দিনের জন্য।

চোখ ধাঁধানো অ্যাকশন, পর্দা কাঁপানো উপস্থিতি আর পরিমিত জীবনধারায় টম ক্রুজ হয়ে উঠেছেন বয়সকে হার মানানোর প্রতীক
চোখ ধাঁধানো অ্যাকশন, পর্দা কাঁপানো উপস্থিতি আর পরিমিত জীবনধারায় টম ক্রুজ হয়ে উঠেছেন বয়সকে হার মানানোর প্রতীক

টম ক্রুজের স্বাস্থ্য ও ফিটনেস ভাবনার মূলে আছে কঠিন জীবন শৃঙ্খলা। প্রতিদিন নির্দিষ্ট রুটিনে নিজেকে স্থির রাখেন তিনি সকালের শুরু, ব্যায়াম, খাওয়া, বিশ্রাম সবকিছুই চলে এক ছন্দে। তিনি মনে করেন, বয়স যতই বাড়ুক না কেন, একটি দৃঢ় রুটিন মানা হলে শরীর ও মন দুটোই থাকবে সুস্থ ও সক্রিয়। শুধু শরীর নয়, মনকেও রাখতে হয় প্রস্তুত। নিজের শরীরকে প্রতিনিয়ত নতুনভাবে চ্যালেঞ্জে ফেলার মধ্য দিয়েই তিনি বিশ্বাস করেন উন্নতি সম্ভব। একই ধরনের ব্যায়ামে না করে নতুন কিছু করার আনন্দ তাঁকে রাখে উজ্জীবিত।

টম ক্রুজ মনে করেন, আত্মবিশ্বাস আর মানসিক প্রস্তুতিই সাফল্যের আসল চাবিকাঠি। বাহ্যিক সৌন্দর্যের পেছনে যে মানসিক দৃঢ়তা লুকিয়ে থাকে, সেটাই একজন মানুষকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে ফিট রাখে। 

চোখ ধাঁধানো অ্যাকশন, পর্দা কাঁপানো উপস্থিতি আর পরিমিত জীবনধারায় টম ক্রুজ হয়ে উঠেছেন বয়সকে হার মানানোর প্রতীক। হয়তো আমাদের পক্ষে তাঁর মতো শারীরিক দক্ষতা অর্জন সম্ভব নয়, তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক দৃঢ়তা থাকলে আপনিও পেছনে ফেলে দিতে পারি বয়সকে।

সূত্র: মেনজ হেলথ

ছবি: ইন্সটাগ্রাম

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৬: ০৮
বিজ্ঞাপন