বর্তমান সময়ে নিজেদের অগাধ ধনসম্পদ আর বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য ধনকুবেররা সবাই থাকেন আলোচনার তুঙ্গে। তার মাঝে ভারতের বিজনেস টাইকুন রতন টাটাকে অন্য রকম সম্মানের আসনে রাখেন সবাই। গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় তিনি হয়ে গেলেন মহাকালের অতিথি। মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। জীবনবোধ আর সাফল্যের নিরিখে ভারতের এই বিজনেস টাইকুন অনুসরণীয় ছিলেন গোটা বিশ্ববাসীর কাছে।
ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত বিনয়ী, পরিশ্রমী আর দূরদর্শী এই মানুষটির কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। তাই তো জীবন ও সাফল্য নিয়ে রতন টাটার শিখিয়ে যাওয়া কথা ও বাণীগুলো সব সময় মুখে মুখে ফেরে সবার। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক করার পর সেই ষাটের দশক থেকেই টাটা মোটরসের হাল ধরেন তিনি। এরপর আর পিছে ফিরে তাকানোর অবকাশ দেননি তিনি নিজেকে। পারিবারিক ব্যবসা টাটা গ্রুপকে গ্লোবাল পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন অন্য উচ্চতায়।
ধনসম্পদ তো অনেকেই অর্জন করেছেন এই দুনিয়ায়। কিন্তু রতন টাটা শুধু ধনকুবের হিসেবে নন, একজন মানুষ হিসেবেও সবার কাছে সমাদৃত হয়েছেন তাঁর বর্ণাঢ্য অথচ চিরকুমার জীবনকালে। চলুন তবে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার সঙ্গে সঙ্গে এই কিংবদন্তিতুল্য বিজনেস টাইকুনের কিছু অমূল্য বাণী দেখে নিই, যেগুলো আমাদের জীবনের পথে চলতে সমৃদ্ধ করবে, দিশা দেখাবে।
১. আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিশ্বাসী নই। সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটাকে সঠিক প্রমাণ করি আমি বরং।
২. দ্রুত হাঁটতে চাইলে একাই হাঁটো। কিন্তু অনেক দূর হাঁটতে চাইলে সবাইকে নিয়েই হাঁটতে হয়।
৩. লোহাকে তার নিজের মরিচাই পারে ধ্বংস করতে। ঠিক তেমনি একজন মানুষকে শেষ করে দিতে পারে তাঁর নিজের মানসিকতা।
৪. সবাই তোমার দিকে যে পাথরগুলো ছুড়ে মারবে, সেগুলো রেখে দাও। তারপর তা দিয়ে নিজের সাফল্যের মনুমেন্ট গড়ো।
৫. জীবনের পথে ওঠা ও নামা দুটিই খুব জরুরি। কারণ, ইসিজিতে যদি সরলরেখা আসে, তার অর্থ হচ্ছে আমরা মারা গিয়েছি।
৬. সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নিজেই ভবিষ্যৎ তৈরি করা।
৭. সফলতা পেলে তা নিজের মস্তিষ্কে গেঁথে ফেলা যাবে না, আর বিফল হলে তাতে হৃদয়কে ভেঙে পড়তে দেওয়া যাবে না।
৮. সবার কাছে তুমি যে সম্মান অর্জন করেছ, সেটিই তোমার সবচেয়ে বড় সম্পদ। একে রক্ষা করতে হবে।
৯. বিজয়ে বিনম্র হও। আর হেরে গেলে মাথা উঁচু করে সে পরাজয় বরণ করে নাও।
১০. আমাদের সবার মেধা ও প্রতিভা এক নয়, কিন্তু তা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে আমরা সবাই সমানভাবে সুযোগ পেয়ে থাকি।
এমন আরও অনেক কথা এই জ্ঞানী মানুষটি আমাদের শিখিয়ে গিয়েছেন। ছয় দশক ধরে বৈশ্বিক ব্যবসায়িক অঙ্গনে নিজের আলাদা অবস্থান জানান দেওয়া এই বিজনেস টাইকুন কখনো কোনো নিন্দনীয় বিতর্ক বা স্ক্যান্ডালে জড়াননি। নিজের কিছু নীতি ও মূলমন্ত্র মেনে চলা এই রতন টাটা তাই চিরস্মরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবেন বিশ্ববাসীর কাছে।
সূত্র: মানি কন্ট্রোল
ছবি: ইনস্টাগ্রাম ও উইকিমিডিয়া কমন্স