সম্প্রতি ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নতুন করে আলোচনায় এসেছে র্যাপ সঙ্গীত। র্যাপ মূলত হিপহপ সংস্কৃতির একটি অংশ। নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস এলাকা থেকে ১৯৭০এর শেষভাগে জোয়ার আসে হিপহপের। তারপর মার্কিন মুলুক ছেড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকেই র্যাপ গান চলছে।
মূলধারার তারকাদেরকে ছাপিয়ে এখন র্যাপ শিল্পীরাই হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশি তরুণদের আইডল।
জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনের শুরুতে যখন সবাই ভয় পাচ্ছিল প্রতিবাদ করতে, তখন সামনে আসে র্যাপ সঙ্গীত শিল্পী সেজান, তাঁর প্রতিবাদী গান নিয়ে। নতুন এক্সপ্রেশনে 'কথা ক' গানে তিনি তীব্র নিন্দা জানন ছাত্রদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব অন্যায়ের। তারপর এগিয়ে আসে অন্য অনেক র্যাপ শিল্পীরাও। এসব র্যাপ গানের ভাষা ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনসহ অন্যান্য আন্দোলনের সময় উদ্দীপনাদায়ক গান বা কবিতার ভাষার চেয়ে আলাদা। জেন-জিদের অনুপ্রাণিত করেছে তাঁদের ভাষায় তৈরি এসব গান। প্রচলিত গানের চেয়ে র্যাপ এবার শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে, বলা বাহুল্য।
এসব প্রতিবাদী র্যাপ মনোযোগ কাড়ে সর্বশ্রেণির মানুষের। বিশেষ করে তরুণদের। আন্দোলনের সবচেয়ে দুগর্ম সময়ে হাল টেনে ধরায় র্যাপাররাই এখন তরুণদের হিরো। র্যাপ তারকাদের জনপ্রিয়তা যেমন বেড়েছে, তেমনি তাঁরা হয়ে উঠেছেন অগুনতি মানুষের ফ্যাশন ও স্টাইল আইকন। চলুন দেখে নেই এসময়ের আসল হিরোদের একজন সেজানের স্টাইল স্টেটমেন্ট। সবার আগে 'কথা ক' গান দিয়ে তিনিই সাড়া জাগিয়েছেন এই আন্দোলনের উত্তাল সময়ে।
র্যাপাররা সাধারণত অনুসরণ করেন জাংক, স্ট্রিট ও হিপহপ স্টাইল। ওভারসাইজড অর্থাৎ ঢিলেঢালা পোশাক র্যাপারদের মাঝে কমন ট্রেন্ড।
আর হিপ-হপে কিছু বেসিক ফ্যাশন উপকরণ আছে যেমন লুজ টি-শার্ট, ব্যাগি জিন্স, ক্যাপ, স্নিকার্স বিশেষায়িত অ্যাকসেসরিজ, জুয়েলারি, সানগ্লাস, ব্যাগ ইত্যাদি। আর শীতকালে সুসময় তাদের জন্য। যেকোনো ফ্যাশন তখন ক্যারি করা যায় সহজে।
সেজানের সঙ্গে কথা হয় তাঁর ফ্যাশন নিয়ে। জানান, র্যাপারদের নিজস্ব ফ্যাশন ধারা যেমন মেনে চলতে হয়, তেমনি ট্রেন্ডও অনুসরণ করতে হয়। কারণ স্টাইল স্টেটমেন্ট ধরে রাখা খুব জরুরী র্যাপ শিল্পীদের জন্য। র্যাপের তীর্থভূমি নিউইয়র্কের ফ্যাশন তাঁকে নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরিতে অনুপ্রাণিত করে। ওভারসাইজড জিন্স, কার্গো পরতেই বেশি পছন্দ করেন সেজান। সঙ্গে কখনো ব্যাগি টিশার্ট, কখনো হাফ হাতা শার্ট। প্রচলিত নিয়ম ভাঙ্গতেই এমন বড় কাপড় পরার চল শুরু করেছিলেন হিপহপ শিল্পীরা। সেজানকে জার্সি আর স্নিকার্সেও দেখা যায়।
জাংক জুয়েলারি হিপহপ ফ্যাশনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। চোখে পড়ার মতো বড় আংটি, ব্রেসলেট, চেইন 'সোয়্যাগ' যোগ করে তাঁদের লুকে। সেজানের গলায় আইকনিক কিউবান লিংক চেইন থাকে সবসময়। সঙ্গে নানান ধরনের লকেট পরে তৈরি করেন নিজের স্টাইল স্টেটমেন্ট। আঙুলে কখনো শোভা পায় পাথরের বা ধাতব আংটি।
সানগ্লাস এই র্যাপ শিল্পীর নিত্যদিনের সঙ্গী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর প্রোফাইলে ঢুঁ মারলেই এর প্রমাণ মিলবে। পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পছন্দ করেন রোদচশমা। বিভিন্ন শেপের চশমায় দেখা যায় তাঁকে। নানা স্টাইলের টুপি আর ব্যান্ডানাও তাঁর নিয়মিত অনুষঙ্গ।
মিউজিক ভিডিওগুলোতে রুমালের ব্যবহারও চোখে পড়ে। কখনো বাইকার স্টাইলে মুখে এটি বেঁধে র্যাপ পরিবেশন করেন, কখনো কলারে গুঁজে রাখেন সেজান।
সেজানদের এই আগল ভাঙা স্টাইল আসলে এক স্বতন্ত্র জীবনযাপনের অংশ। রাত-দিন বা ঘরে-বাইরে সবসময় তাঁরা নিজস্ব স্টাইলের মাঝেই থাকেন। আর এই ঘরানার শিল্পীদের পরিবেশনার এক বড় অংশ তাঁদের এসব লুক।
ছবি: সেজানের ইন্সটাগ্রাম