সামাজিক মাধ্যমে সবার ডে আর রিলস, শর্টস, স্টোরি জুড়ে এখন একটা গানই শোনা যাচ্ছে। আর তা হলো স্যাফায়ার। মাত্র আটদিন আগে রিলিজ হওয়া এই গানটি দিয়ে অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ব্রিটিশ শিল্পী এড শিরান। ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি বরাবরই এডের একটা টান আছে। কিছুদিন আগে এসেছিলেন ভারতে বেড়াতে। এবার সেই ঘুরতে আসার পেছনের আসল ঘটনাই জানালেন বোধহয় এই গানের মাধ্যমে।
'স্যাফায়ার' গানটিতে পাঞ্জাবি ভাষার বোল এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা। গানে ফিউশন হয়েছে খুবই চমৎকার। লোকেশনগুলোও ভারতবর্ষেই। গানে আছেন অরিজিৎ সিং আর মুখ দেখিয়েছেন খোদ কিং খান শাহরুখও। কিন্তু স্যাফায়ার আসলে এত স্পেশাল দুনিয়ার দুই প্রান্তের দুই শিল্পীর নিখাদ বন্ধুত্বের কারণে।
গানটি মুক্তি পাওয়ার কয়েকদিন পর নিজের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করা একটি পোস্টে এড শিরান শোনালেন এই অকৃত্রিম বন্ধুর গল্প। নতুন গানের পেছনে বন্ধুর অবদান স্বীকার করে নিলেন অকপটে। এছাড়াও, বন্ধুটির বাড়ি বেড়াতে গিয়ে হওয়া সুন্দর অভিজ্ঞতার কথাও বললেন। এই বন্ধু আর কেউ নন, ভারতের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী অরিজিৎ সিংই।
ভিনদেশের এই স্বর্ণকেশী গায়ক ও গীতিকার জানান, যখন প্রথমবার অরিজিৎ সিং এর গান শোনেন তখনই তিনি অত্যন্ত মুগ্ধ হন, ফ্যান হয়ে যান অরিজিতের। 'আশিকী ২' সিনেমার “তুম হি হো” গানটি শুনেই তিনি অরিজিৎ এর স্বরে ও সুরে বিমোহিত হন। এরপর শুরু হয় দুই দেশের এই দুই বিখ্যাত তারকার বন্ধুত্ব। এরই সূত্র ধরে আজ 'স্যাফায়ার' এর মতো এক মাস্টারপিসের জন্ম। গানটি এখন ঘুরছে প্রতিটি রিলে ও স্টোরিতে।
শিরান আরও জানান, তিনি তখনই অরিজিৎ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁকে জানিয়ে দেন যখনই অরিজিৎ চাইবেন, তিনি একসঙ্গে গান করতে চান। এরপর লন্ডনে অরিজিৎ এর একটি কনসার্টে উপস্থিত হন তিনি। একসঙ্গে গাইতে শুরু করেন 'পারফেক্ট' গানটি। যদিও তখন অনেকেই ভেবেছিলেন এই ঘটনা নেহাতই কাকতালীয়। ভক্ত ছাড়াও শিরানের নিজের ভাষাতেও এই উপস্থাপনা 'একটি অভাবনীয় শো' ছিল।
এই শোয়ের পরে ড্রেসিং রুমে শেরান অরিজিৎকে 'স্যাফায়ার' এর একটি প্রাথমিক ভার্সন শোনান। তখন সবে এই গানের ওপর কাজ করছেন। সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় এই সঙ্গীত তারকা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ও সুর নিয়ে নিজের ভাবনা জুড়ে দেন গানটির সঙ্গে। শিরানকে পাঞ্জাবিও নাকি শিখিয়েছেন অরিজিৎ।
এক পর্যায়ে এই বন্ধুত্ব অনেকদূর গড়ায়। ই-মেইল এর মাধ্যমে চিঠিপত্র আদান-প্রদানে। শেরান যখন ভারতে ঘুরতে আসেন, তখনই তাদের সিদ্ধান্ত হয়, গানটি শেষ করবেন, একসঙ্গে। অরিজিৎ বন্ধুকে নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রণও জানান। তবে এটি তাঁর কলকাতার বাড়ি নয়, তাঁর মফস্বলের পৈতৃক বাড়ি। শিরান তখন ছিলেন তার বাবার সঙ্গে। তবুও এই সুযোগ হাতছাড়া হোক, একেবারে চাননি তিনি।
বাবাকে নিয়ে তখনই পাড়ি জমান ভারতের উদ্দেশ্যে। প্রথম গন্তব্য কলকাতা। সেখান থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার যাত্রা অরিজিৎ এর হোমটাউন মুর্শিদাবাদের বাড়িটির উদ্দেশ্যে। একে শহরতলী বা গ্রামের বাড়ি বললেও ভুল হবে না। পৌঁছে তাঁরা নদীপথে ঘোরেন, এরপর স্কুটি চালিয়ে স্টুডিওতে ফেরেন,উপভোগ করেন সূর্যাস্ত ও জোছনার মায়া। প্রকৃতির জাছাকাছি থাকার এই অভিজ্ঞতার মনোমুগ্ধকর বর্ণনা দিয়েছেন শিরান তাঁর পোস্ট। 'স্যাফায়ার' গানের কাজও শেষ হয়। শেষ করেন। পাঞ্জাবি ভাষার উচ্চারণ শেখানোর পাশাপাশি অরিজিৎ তাঁকে সেতার বাজানোও দেখান। বন্ধুর অতুলনীয় আতিথেয়তার বর্ণনাও দিয়েছেন শিরান। তাঁর কাছে নাকি এটা সারাজীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে।
শিল্পের ভাষা সর্বজনীন। কোনো একটি দেশের সীমারেখায় একে বেঁধে ফেলা যায় না। বন্ধুত্বের বিনিসুতার বন্ধন জুড়ে গেলে তো তা আরও পূর্ণতা পায়। এটিই প্রমাণ করে শিরান আর অরিজিৎ এর বন্ধুত্বের গান 'স্যাফায়ার'।
সূত্র: এড শিরানের সামাজিক মাধ্যম
ছবি: ইন্সটাগ্রাম