‘হাওয়া’ ছবিতে তুষির রহস্যময় লুক
শেয়ার করুন
ফলো করুন

রহস্যে ঘেরা মায়াবী এক বেদে নারী। তামাটে রং, কখনো খোলা আবার কখনো খোঁপা করা চুল। সমুদ্রের লোনা পানির ছাপ পরিষ্কার তাঁর চোখেমুখে। চেহারায় নেই বাড়তি কোনো সাজ। চোখে এক অদৃশ্য টান। আবেদনময়ী ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিই তাঁর রূপকে অনন্যতা দিয়েছে। এই লুককে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন অভিনয়শিল্পী নাজিফা তুষি।

ইতিমধ্যে তুমুল আলোচনায় থাকা ‘হাওয়া’ ছায়াছবি মুক্তি পাচ্ছে ২৯ জুলাই। এই ছবিতে তাঁর অভিনীত চরিত্রের নাম ‘গুলতী’। এই চরিত্রের লুক নিয়ে কথা বলেছেন নাজিফা তুষি।

পর্দায় তুষিকে যে রূপে দেখা যাচ্ছে, সেটা এক দিনের তৈরি নয়, বললেন তিনি। কিছুটা অতিপ্রাকৃত, রহস্যময় এই লুক ধারণের প্রস্তুতি চলেছে বহুদিন।

‘মনসামঙ্গল কাব্য’–এর ‘মনসা’ চরিত্র থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে রূপ দেওয়া হয়েছে ‘গুলতী’ চরিত্রটিকে। লোকগল্পে উল্লেখ করা মনসাদেবীর চরিত্রের সঙ্গে ‘গুলতী’র মিল পাওয়া যাবে না। তবে পোশাকের রঙে আছে বিশেষ মিল। দেবী যে শাপলা ফুলের ওপর আসীন, সেই ফুলের প্রেরণায়ই তৈরি হয়েছে নাজিফা তুষির শাড়ি।

বিজ্ঞাপন

‘গুলতী’ চরিত্রে মিথিক্যাল বা পৌরাণিক ছোঁয়া আছে। তাই তুষির সাজ ও পোশাকে অলীক রূপটি রাখা হয়েছে। এমনকি ত্বকের রঙেও রাখা হয়েছে রহস্যময় আবেদন। খুব ট্যান ও সমুদ্রের লোনাভাবকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যাতে চরিত্রটি একই সঙ্গে বাস্তবিকও মনে হয়, জানালেন ‘হাওয়া’ সিনেমার কস্টিউম ডিজাইনার আনিকা জাহিন।
মিনিমাল সাজ, পোশাক আর গয়নায় তৈরি হয়েছে অশরীরী লুক। এমন চরিত্রে আগে দেখা যায়নি অভিনেত্রী নাজিফা তুষিকে। তিনি জানান, ‘“গুলতী” চরিত্রের জন্য কয়েক দফা লুক টেস্ট করতে হয়েছে। আমার মেকআপ করেছেন ভারতীয় মেকআপ আর্টিস্ট সঞ্জয় পাল। শুধু মেকআপে লুককে বাস্তবিক রূপ দেওয়া সম্ভব হতো না। তাই বহুদিন ধরে রোদে পুড়ে ত্বকে ট্যান বা তামাটে ভাব আনা হয়েছে। যেন সঠিক টেকশ্চার পাওয়া যায়। এর ওপর ব্যবহার করা হয়েছে হালকা বেজ মেকআপ। চোখের সাজ রাখা হয়েছে খুবই মিনিমাল। কিছু দৃশ্যে চোখে রহস্য ও মায়া দেখাতে ব্যবহার করা হয়েছে কেবল কাজল। ঠোঁটের প্রাকৃতিক রং বজায় রাখতে লিপস্টিকের বদলে দেওয়া হয়েছে লিপটিন্ট।’

অভিনয়, সাজ ও পোশাক—সবকিছুকে নিখুঁত করতে বেদেপল্লিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন নাজিফা তুষি।

‘অনেক বেদে নারীর সঙ্গে ঘুরেছি, কথা বলেছি। তাঁদের সাজ ও শাড়ি পরার ধরন আর স্টাইল রপ্ত করতে হয়েছে। তবে একজন বেদে নারীকে খুব বেশি অনুসরণ করেছি। সেই নারীর প্রভাব এই চরিত্রে অনেকটাই দেখা যাবে। এ ছাড়া কয়েক মাস বেদে নারীদের মতো শাড়ি পরে ও সেজে থাকতে হয়েছে আমাকে। সেটে শাড়িও পরেছি নিজে নিজেই,’ বললেন নাজিফা তুষি।

বিজ্ঞাপন

যাযাবর হলেও বেদে নারীরা খুব গোছানো ও ছিমছাম থাকেন। তাঁদের শাড়ি পরার ধরন একবারেই আলাদা। ব্লাউজের সঙ্গে মিলিয়ে শাড়ি পরেন তাঁরা। শাড়ির আঁচল প্যাঁচানোর আছে বিশেষ নিয়ম। যদিও এভাবে শাড়ি পরার ধরনের কিন্তু নির্দিষ্ট নাম নেই। এ ছাড়া শাড়ি পরা হয় একটু উঁচু করে আর পেটিকোটের নিচে থাকে ফ্রিল বা কুঁচি। এমন প্রতিটি বিষয় মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছে নাজিফা তুষির লুক। অভিনেত্রী জানান, প্রাকৃতিক লুকই এই চরিত্রের প্রধান সৌন্দর্য। সেটে আসার পর ৩০ মিনিটেই তৈরি হয়ে যেতাম।

গলায় বিডসের চিকন মালা, নাকফুল ও নোলক, কানে ছোট দুল, হাতে পলা আর খোঁপায় শামুক বসানো কাঁটা গুলতীর সাজকে সম্পূর্ণ করে। আনিকা জাহিন জানান, প্রতিটি গয়না বাছাই করা হয়েছে খুব ভেবেচিন্তে। বিডস, মেটাল ও সামুদ্রিক উপকরণে তৈরি গয়নায় মাছ আর সাপের নকশা করা হয়েছিল।

কস্টিউম ওয়েদারিং কথাটি খুব বেশি পরিচিত নয়। পোশাকের নতুনত্ব ও চকচকে ভাব কমাতে মূলত কস্টিউম ওয়েদারিং করা হয়। নাজিফা তুষিকে যে শাড়িতে দেখা যাচ্ছে, তা ওয়েদারিং করা হয়েছে প্রায় দুই মাস ধরে। পুরোনো ও নরম ভাব আনতে শাড়িকে ১২ বার ডিটারজেন্ট দিয়ে ধোয়া হয়। ব্লিচিং পাউডারে ভেজানো হয় শাড়ির রং হালকা করতে। কারণ, সমুদ্রে লবণ আর কড়া রোদে কাপড়ের রং জ্বলে যায়। একেবারে শেষে চা–পাতা ভেজানো পানি বা পটাশিয়ামে সারা রাত ভিজিয়ে শাড়িকে একেবারে নরম করা হয়েছে। পরে রোদে শুকিয়ে শুকানো হয়েছে। আর সেই শাড়িতেই তুষি হয়ে উঠেছেন ‘গুলতী’। ‘হাওয়া’ ছায়াছবির মূল নারী চরিত্র। এই রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে করতে হলে ‘হাওয়া’য় মাততে হবে। অর্থাৎ দেখতে হবে ছবিটি। এর জন্য অবশ্য বেশি অপেক্ষার প্রয়োজন হবে না। প্রেক্ষাগৃহ প্রস্তুত দর্শকের জন্য।

ছবি: ফেইসকার্ড প্রডাকশন

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২২, ১১: ২৩
বিজ্ঞাপন