ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব চলছে। লাল গালিচায় নামকরা ডিজাইনারদের সুদৃশ্য সব পোশাক পরে হাঁটছেন তারকারা। এর মাঝেই এল নেতিবাচক ভাইব। ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে লাল গালিচায় তারকা অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও নিকোল কিডম্যান হলেন নেটপাড়ায় বডি শেমিংয়ের শিকার। কিন্তু কেন?
খ্যাতি শুধু ভালোবাসা, ভক্ত আর প্রাচুর্য নিয়ে আসে এমন একেবারেই নয়। খ্যাতির বিড়ম্বনা বলেও একটি জিনিস আছে। ঝা চকচকে পোশাকে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেই ক্যামেরার অবিরাম ফ্লাশলাইট যে সবসময় তারকাদের সুন্দর করেই উপস্থাপন করে তা কিন্তু নয়।
ভক্ত ও নেটিজেনরা যেমন তারকাদের ভালোবাসা দেন, পান থেকে চুন খসলেই যেন আবার হয়ে ওঠেন অত্যন্ত নেতিবাচক। একেই বলে স্পটলাইটের নির্মমতা। তারকারা তা ভালো করেই জানেন। তাই এ ব্যাপারে তাঁরা থাকেন অধিক সচেতন। তবে দুয়েকবার স্পটলাইটের নির্মমতা কারণ হয় হৃদয়ভঞ্জনের। ঠিক এমনই হয়েছে কিছুদিন আগে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ঐশ্বরিয়া রায়ের সঙ্গে এবং সম্প্রতি ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল কিছুটা অন্য আঙ্গিকে। আর তা হয়েছে এককালের ডাকসাইটে সুন্দরী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও নিকোল কিডম্যানের সঙ্গে। ঘটনাটি হচ্ছে বডি শেমিং। আর এ কথা তো আমরা সকলেই জানি যে কারো দেহের বিশেষ কোনো আকৃতি নিয়ে তাকে বিড়ম্বনায় ফেলাকেই ইংরেজিতে বডি শেমিং বলা হয়।
অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান নব্বইয়ের দশক থেকেই তাঁর সেনসেশনাল উপস্থিতির জন্য ঝড় তুলছেন দর্শক মনে। এবারের ৮১তম ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে নিজের সিনেমা বেবিগার্ল নিয়ে এসেছিলেন তিনি। স্ক্যাপারেল্লির ২০২৪ এর কতুর কালেকশনের চমৎকার একটি টু টোনড গাউনে নজর কাড়েন তিনি। পোশাক তো খুবই সুন্দর ছিল,তবে ভক্তদের প্রশ্ন অন্য জায়গায়।
শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছেন এই সুন্দরী। কেন এই পরিবর্তন? ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়তেই শোনা গেল ভক্তদের হাহাকার। গর্জিয়াস লাগছে। তবে এত শুকনা! যেন মনে হচ্ছে মারাত্মক কোনো অসুখ করেছে, বলছেন কেউ। কেউ আবার বলছেন, আজকাল খুবই ক্ষীণকায় মানুষের দেখা মিলছে। আশা করছি, নতুন ট্রেন্ড হিসেবে এটি আসছে না। খুবই অস্বাস্থ্যকর একটি ব্যাপার। কেউবা জানতে চাইছেন অ্যানোরেক্সিয়া হয়েছে নাকি এই সুন্দরীর। সোনালি চুলের ঢেউ খেলিয়ে লাল গালিচায় হাঁটা জোলি পড়েছিলেন বেশ বিব্রতকর অবস্থায়।
একই কারণে আলোচনায় আছেন আরেক সুন্দরী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। অপূর্ব সুন্দর চোখ, ছুরির চাইতেও ধারালো জ লাইনের জন্য প্রশংসা পান তিনি বেশ। অভিনয় জীবনে রাজত্ব করেছেন লাখো মানুষের হৃদয়ে। তবে খ্যাতির বিড়ম্বনা এখন পেয়ে বসেছে এই জগৎসেরা সুন্দরীকেও। একই উৎসবের লাল গালিচায় হেঁটেছেন তিনি। এসেছিলেন বিখ্যাত অপেরা তারকা মারিয়া ক্যালাসের বায়োপিক নিয়ে। একটি বেইজ রঙা স্টোন বসানো শিফনের অ্যাসিমেট্রিক গাউন পরে লাল গালিচার উত্তাপ বাড়িয়েছেন তিনি। সঙ্গে পরেছিলেন ফো ফারের তৈরি একটা স্টোল। ভীষণ স্টাইলিশ লাগছিল তাঁকে। সেজেছিলেন উইংড আই লাইনার ও ক্ল্যাসিক বোল্ড রেড লিপসে। শোভা বাড়িয়েছিল তাঁর সোজা ব্লন্ড চুল। পোশাকটির নকশা করেছেন বিখ্যাত ও জোলির বিশ্বস্ত ডিজাইনার টামারা র্যালফ।
তবে জোলির ছবির নিচেও কঠিন কমেন্ট ঠুকে দিয়েছেন ভক্ত, নেটিজেন ও ফ্যাশন বোদ্ধারা। পোশাক আর সুন্দর চেহারা ছাপিয়ে সকলের নজর পড়েছে তাঁর হাতের দৃশ্যমান রগগুলোর ওপরে। প্রতিটি শিরা উপশিরা যেন চামড়া ভেদ করে ওপরে উঠে আসছে। রীতিমতো আঁতকে উঠছেন অনেকে দেখে। নিষ্ঠুর কটাক্ষের শিকার হতে হচ্ছে তাঁকে। আরেকজন আবার লিখেছেন, খুবই ফ্যাকাশে, খুবই ব্লন্ড,খুবই শুকনা আর অতিরিক্ত বদমেজাজি অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। তাঁর সঙ্গে একেবারেই যাচ্ছে না এসব।” অনেকের নাকি আবার মনই উঠে গেছে জোলির ওপর থেকে।
নিকোল আর অ্যাঞ্জেলিনার মতো তারকাদের নিজেদের লুক নিয়ে শুনতে হচ্ছে কটাক্ষ। একদিন পুরো পৃথিবী হাতের তুড়িতে নাচিয়ে বেড়ানো সুন্দরীদের এরকম হেনস্তার শিকার হতে দেখে আশাহত ও ক্ষুদ্ধ হয়েছেন অনেকে। সত্যি বলতে, ,সৌন্দর্যের তো কোনো নিজস্ব সংজ্ঞা নেই। একেকজনের চোখে তা একেকরমভাবে ধরা দেয়। তবে একদলের ধরাবাঁধা সংজ্ঞার বাইরে গেলেই ডাকসাইটে সুন্দরীদেরও বিদ্ধ করা হয় কটূক্তির বাক্যবাণে। বিষয়টি হতাশ করার মতোই বটে!
ছবি ও ভিডিও: ইন্সটাগ্রাম