মমতাজ জাহান বেগম দেহলভী। মধুবালা নামে তিনি সর্বাধিক পরিচিত। ভারতীয় সিনেমার এক দাপুটে অভিনেত্রী কালোত্তীর্ণ ফ্যাশনের প্রতীক মধুবালা। চল্লিশের দশক থেকে ভারতীয় চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু তাঁর। মনভোলানো হাসি, অপরূপ চাহনি আর নয়ন মনোহর নাচে কেড়ে নিয়েছেন সবার মন। তাঁর ছিল তুখোড় ফ্যাশন সেন্স। তাই তো এত যুগ পেরিয়ে যাওয়ার পর ২০২৪ সালে এসেও তাঁর রেখে যাওয়া ফ্যাশন স্টেটমেন্টগুলো দাপটের সঙ্গে নিজের জৌলুশ ধরে রেখেছে ফ্যাশন–দুনিয়ায়। আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি। মধুবালার মৃত্যুর দিন। এদিনে তাঁর স্মরণে চলুন দেখে নিই জনপ্রিয় কিছু লুক, যা আজও বলিউড অভিনেত্রী বলুন কিংবা সাধারণ রমণী, সবার কাছেই সমান প্রিয়।
‘মুঘল–ই–আজম’–এর আনারকলি
১৯৬০ সালে মুক্তি পায় জনপ্রিয় সিনেমা ‘মুঘল–ই–আজম’। এটিতে আনারকলির চরিত্রে দেখা যায় মধুবালাকে। তবে সবার মনে দাগ কেটে যায় ‘পেয়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া’ গানে মধুবালার নাচ। কস্টিউম হিসেবে পরেছিলেন ঘেরওয়ালা একটি গোল ছাঁটের জামা। সঙ্গে ছিল টিউনিক। এ–জাতীয় পোশাক তখনকার কত্থক নৃত্যশিল্পীদের মধ্যে তুমুলভাবে জনপ্রিয় ছিল। ‘মুঘল–ই–আজম’–এ অভিনয়ের জন্য মধুবালা সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পাননি ঠিকই, তবে তাঁর ঘেরওয়ালা জামার নকশা পেয়েছিল অকল্পনীয় খ্যাতি।
চরিত্রের নামানুসারে পোশাকটির নাম হয়ে যায় আনারকলি। ষাটের দশকের আরেক অভিনেত্রী সাধনা এবং আশির দশকে রেখার হাত ধরে আনারকলি পৌঁছে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এরপর ‘দেবদাস’ সিনেমায় মাধুরী দীক্ষিতের চন্দ্রমুখী আর ‘বাজিরাও মাস্তানি’তে দীপিকার মাস্তানির পোশাকগুলোও কিন্তু তৈরি হয়েছিল মধুবালার আনারকলির আদলে।কারুকার্যময় লম্বা কল্লিদার ঘেরযুক্ত জামা আনারকলির এখনো বিপুল চাহিদা। আনারকলির এক চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, এ জামাটি প্রায় সব গড়নের মানুষের দেহেই মানিয়ে যায়। পাশাপাশি পরতেও বেশ আরাম। তাই তো এখনো আলিয়া ভাট, বিদ্যা বালান ও দীপিকা পাড়ুকোনের মতো ফ্যাশনিস্তাদের কাছে আনারকলির আবেদন কমেনি।
মনোক্রোম ও প্রিন্টেড জর্জেট শাড়ি
শাড়ি ছাড়া দেশি ফ্যাশন কল্পনাই করা যায় না। ষাটের দশকে তো শাড়িই ছিল প্রধান পোশাক। মধুবালা সিল্ক থেকে শুরু করে জর্জেট সব ধরনের শাড়িতেই নজর কেড়েছেন। মধুবালার একাধিক আইকনিক লুকে তাঁকে দেখা গিয়েছে একরঙা অর্থাৎ মনোক্রোম শিফন শাড়িতে। কালের বিবর্তনে এমন শিফন শাড়ি আবার জায়গা করে নিয়েছে ফ্যাশন ট্রেন্ডে। গত বছর আলিয়া ভাটের ‘রকি অউর রানি কি প্রেমকাহানি’ সিনেমায় একরঙা ও টু টোন শেডের জর্জেটে দেখা মেলে রানির। আলিয়ার শাড়িগুলো ঝড় তুলেছে দর্শকের মনে। বেড়েছে এমন শাড়ির ব্যাপক চাহিদা। আসলে একরঙা জর্জেটের শাড়ি বহু বছর ধরেই ট্রেন্ডে আছে। মধুবালাকে তাই ট্রেন্ড সেটারের তকমা দেওয়া যেতেই পারে।
শুধু একরঙা জর্জেট বা শিফনেই শেষ হয় না মধুবালার ফ্যাশন। ১৯৫১ সালে ‘জেমস বার্ক’ লাইফ ম্যাগাজিনের জন্য মধুবালার কিছু ছবি তোলেন। সেখানে প্রিন্টের একটি শিফন শাড়ি পরেছিলেন মধুবালা। তাঁর লাস্যময়ী লুক সবার মনে প্রিন্টেড শিফনের প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে, যা এখনো কমেনি একটুও।
ফুলেল প্রিন্ট
এখন বসন্তকাল চলছে বলে নয়, ২০২৪ দাপিয়ে বেড়াবে ফ্লোরাল প্রিন্ট, বলছেন ফ্যাশন বোদ্ধারা। ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে রোজ বা গোলাপের মোটিফের ফ্লোরাল প্রিন্ট।
মধুবালার একটি লুকে দেখা যায়, ঘাগরা–জাতীয় পোশাকের যে ব্লাউজটি পরা হয়েছে, তাতে রয়েছে গোলাপ ফুলের নকশা। কালো আর গোলাপি রঙের মিশেলে বেশ মানিয়েছে তাঁকে। সঙ্গে পরেছেন গোলাপি ওড়না।
অফ দ্য শোল্ডার ড্রেস
ভারতের মেরিলিন মনরো বলে খ্যাত মধুবালা পশ্চিমা ফ্যাশনেও কম যাননি। চল্লিশের দশকে তাঁর অফ দ্য শোল্ডার ড্রেস খুব দাপুটে ফ্যাশন স্টেটমেন্টের জন্ম দিয়েছিল।
সেই সঙ্গে তাঁর টকটকে লাল লিপস্টিকও ছিল সবার প্রিয়। অফ দ্য শোল্ডার নেকলাইন এখনো ফ্যাশন–সচেতন মানুষের প্রিয়। আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক? তার তো আছে বোল্ড আর ক্ল্যাসিক তকমা।
কানে চাঁদবালি, হাতে হাতফুল
ফ্যাশন–দুনিয়ায় মধুবালার গয়না আর ঝলমলে সব অনুষঙ্গের আধিপত্যও কম নয়। শাড়ি হোক বা ওয়েস্টার্ন পোশাক, মধুবালার কানে চাঁদবালি আর ঝুমকা শোভা পেয়েছে একাধিক সিনেমা, ফটোশুটে। চাঁদবালি আবার ফিরে পেয়েছে হারানো খ্যাতি।
বলিউড তারকা দীপিকা, আলিয়া থেকে শুরু করে সাধারণ রমণীদের কানে শোভা পাচ্ছে চাঁদবালি। কানের গয়না ঝুমকা তো চিরকালই সবার প্রিয়। আর এখন তা আবারও ট্রেন্ডের তুঙ্গে। রতনচূড় বা হাতফুল ইদানীং বেশ ট্রেন্ডে আছে। মধুবালার আনারকলি চরিত্রটি শুধু পোশাকে নয়, গয়না দিয়েও ফ্যাশনের ইতিহাসে লিখিয়ে নিয়েছিল নিজের নাম।
ছবি: ইন্সটাগ্রাম