মিষ্টি হাসি, স্নিগ্ধ লুক আর পাশের বাড়ির মেয়ের মতো সাদামাটা সৌন্দর্য। এই তিনেই দর্শকের মন জয় করেছেন এই সময়ের আলোচিত অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। অভিনয়, পড়াশোনা, ক্যারিয়ার সামলে দম ফেলার ফুরসত নেই বললেই চলে। তবুও ঈদের ব্যস্ততার মাঝেই সময় দিলেন হাল ফ্যাশনের সঙ্গে এক আন্তরিক আড্ডায়। কথা হলো ঈদের স্মৃতি, কাজের অভিজ্ঞতা, পছন্দের ফ্যাশন আর আসন্ন সিনেমা উৎসব নিয়ে। প্রথমেই কথা শুরু হলো ঈদে শৈশবের সরল আনন্দের স্মৃতি দিয়ে।
'ছোটবেলার ঈদ আর বড়বেলার ঈদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, বড় হয়ে গেছি!' সহাস্যে বললেন সাদিয়া।গল্পের ঝাঁপি খুলে বসলেন এই মিষ্টি মেয়ে। 'ছোটবেলায় কাজিনরা সবাই বাসায় আসত। একসঙ্গে গরুর পেছনে ঘুরে বেড়াতাম। কোরবানির কয়েক দিন আগে থেকেই গরুকে খাওয়ানো, আদর করা, সব মিলিয়ে দারুণ আনন্দে কাটতো। এখন এসব মনে পড়ে হাসি পায়। তবে একবার গরু জবাই দেখে খুব খারাপ লেগেছিল, এরপর আর সেটা দেখতে ভালো লাগে না'।
অভিনয়, মডেলিং, পড়াশোনা—সব একসঙ্গে সামলাতে হয়, কিভাবে সামলান প্রশ্নে জানালেন, 'প্রথম দিকে কঠিন লাগত, মনে হতো এই চাপ কীভাবে সামলাব, কিন্তু এখন আর কষ্ট লাগে না। কারণ আমি সত্যিই উপভোগ করি। পরিবার, কাজ আর নিজের সময়, সব মিলিয়ে যত ব্যালেন্স করি, ততই শেখা হয়। দেখতে দেখতে মিডিয়াতে ছয় বছর কেটে গেল। প্রতিদিন কিছু না কিছু শিখছি। যখন মা আমার কাজ দেখে খুশি হন, তখন সবচেয়ে বেশি আনন্দ হয়। এটা একধরনের তৃপ্তি'।
সাম্প্রতিক নাটক 'লাইজু'-তে তিনি অভিনয় করেছেন এক বোবা মেয়ের চরিত্রে। একজন গ্রামের মেয়ে, যার নিজের যত্ন নেওয়ার সময় বা সচেতনতা নেই। গালে মেস্তা, আলুথালু শাড়ি। সাদিয়া বললেন, 'চরিত্রটিকে যতটা সম্ভব বাস্তব করে তোলার চেষ্টা করেছি। এই ধরনের ভিন্ন চরিত্রে কাজ করতে আমি দারুণ উপভোগ করি'।
সাদিয়া জানালেন যে চরিত্রগুলো বাস্তবতার ছোঁয়া দেয় তিনি সেরকম চরিত্রে অভিনয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যেমন রোমান্টিক বা মধ্যবিত্ত মেয়েদের চরিত্রে সাধারণ পোশাকেই অভিনয় করতে হয়। ওয়েব সিরিজ বা সিনেমায় অবশ্য আলাদা মেকআপ, গেটআপ হয়। তবে নিজের সঙ্গে না মানলে সে চরিত্র তিনি করেন না।
ঈদ উপলক্ষে সাদিয়ার সিনেমা 'উৎসব' মুক্তি পাচ্ছে। সেখানকার শুটিংয়ের দারুণ এক ঘটনা জানালেন আড্ডায়। 'শুটিং করতে রাজশাহী গিয়েছিলাম। এক মহিলা ছবি তুলতে এসে বললেন 'আপু আপনাকে দেখে কখনোই মনে হয় না আপনি নায়িকা, আপনি তো আমাদের পরিবারের মেয়ে, পাশের বাড়ির কেউ, সবসময় আপনি এমনই থেকেন। এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। এই ভালোবাসার কোনো তুলনা হয় না', সন্তুষ্টি নিয়ে বললেন এই অভিনেত্রী।
ঈদের শপিং নিয়ে জানালেন, 'এই ঈদে তেমন কিছু কিনিনি। রোজার ঈদে কেনা কিছু জামা পরা হয়নি সেখান থেকেই একটা বেছে নিবো । কোরবানির ঈদে কেনাকাটা হয়ও কম। আমি হালকা রং পছন্দ করি। সাদা সবচেয়ে প্রিয় রং। এছাড়াও মাস্টার্ড ইয়েলো, ল্যাভেন্ডার, কালো ভালো লাগে। পোশাক হোক বা ব্যাগ, সাদাই আমার সবচেয়ে পছন্দ'।
নিজস্ব স্টাইল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমি 'নো মেকআপ লুক' বেশি পছন্দ করি। ভারী মেকআপ না করে হালকা প্রসাধনে সাজা কিন্তু বেশ কঠিন। আমি খুব জাঁকজমক পছন্দ করি না। স্যালনেও খুব কম যাই, শুধু বড় কোনো আয়োজন হলে সাজি।বেসিক মেকআপ রুটিন প্রসঙ্গে সাদিয়ার কাছ থেকে জানা গেল, বিবি ক্রিম, চোখের নিচে কনসিলার, সামান্য পাউডার, হালকা ব্লাশন, মাস্কারা আর লিপস্টিকেই সাজ সারেন তিনি। 'আমি আইল্যাশ বা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করি না—সেগুলো মেকি মনে হয়', বললেন এই ন্যাচারাল সুন্দরী অভিনেত্রী।
ঈদের রান্না প্রসঙ্গে খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে জানালেন সাদিয়া, 'আম্মুর হাতের খাবার মানেই ঈদ। ঈদের দিন আমি নিজেও রান্না করি। তবে আম্মুর হাতের রান্না না খেলে যেন ঈদ পূর্ণ হয় না। বিশেষ করে আম্মুর হাতের ফিরনি—মিষ্টি কম, দুধ ঘন—এটা আমার ভীষণ পছন্দ। কোরবানির দিনের প্রথম রান্না করা মাংসটা তো অমৃত! আমি পাশে থাকি, মাংসে লবণ ঠিক আছে কি না সেটা দেখি। আম্মুর হাতের চিকেন ফ্রাই, কোরবানির পর রান্না করা প্রথম মাংস আর বিফ কষা খুবই মজা। আম্মুর রান্না করা খুব সহজ রেসিপির পোলাও আমার কাছে পৃথিবীর সেরা পোলাও। এদিকে আমার চাচা, মামা, এমনকি আব্বুও চালের রুটির সঙ্গে আমার রান্না করা মাংস খেতে পছন্দ করে।
'উৎসব' সিনেমায় সাদিয়া অভিনয় করেছেন জেসমিন চরিত্রে। নিজের চরিত্র সম্পর্কে বললেন, এই চরিত্রের লুকটা নাইন্টিজ স্টাইল। লম্বা জামা, বেণী, হিলসহ সব মিলিয়ে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। সিনেমা হলে গিয়ে দেখতে হবে বাকিটা! সাদিয়ার বয়ানে, আমার প্রথম নাটক ছিল 'ফুলের নামে নাম'-এ বেলি চরিত্র, 'মায়া শালিকে'-তে সারা, 'যখন-তখন'-এ রাহা। আর এই সিনেমায় জেসমিন চরিত্রটা আমার হৃদয়ের খুব কাছের।স্কিন কেয়ার আর ফিটনেস নিয়ে এই অভিনেত্রী জানালেন, বাসায় থাকলে বেশি কিছু করা হয় না। ফেসওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার আর লিপ বামই ব্যবহার করেন তিনি । সাদিয়া বলেন, আমার কাছে ফেস ক্লিনজিংই আসল । আর ব্যায়াম শুধু ওজন কমানোর জন্য নয়, নিজেকে ভালো রাখার জন্য করি। কখনো একটানা করি, আবার মাঝেমাঝে বিরতিও নেই। তবে মনের শান্তি আর ভালো ঘুম না থাকলে ব্যায়ামের কোনো মানে হয় না।সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সাদিয়া আয়মান বললেন,এই ঈদে সবাই সাবধানে থাকুন। প্রিয়জন, পরিবার, বন্ধুদের সঙ্গে ঈদটা উপভোগ করুন। আর অবশ্যই হলে গিয়ে 'উৎসব' দেখুন। সিনেমেয়ার ট্যাগ লাইনই পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ। ছবি দেখে জানাবেন কেমন লাগল। হাল ফ্যাশনের পাঠকদেরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন তিনি এই ঈদ আড্ডার সমে এসে।
ছবি: সাদিয়া আয়মান