বিলিয়নিয়ারদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের খুঁটিনাটি নিয়ে আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। এসব তেলেসমাতি কারবার নিয়ে সারাক্ষণই তোলপাড় চলতে থাকে মিডিয়া আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে এই ধনকুবেরদের মধ্যে ওয়ারেন বাফেট যেন অনেকটাই আলাদা। ১৯৩০ সালে জন্ম এই ঝানু মার্কিন বিলিয়নিয়ারের। ১৯৫১ সাল থেকে কর্মক্ষেত্রে সচল তিনি।
তাঁর বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে শুধু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং মার্কিন মুলুক আর তার বাইরে সেবা ও কল্যাণমূলক কাজের জন্য বহু সুনাম কুড়িয়েছে এটি। ওয়ারেন বাফেটকে সর্বকালের সর্বসেরা বিনিয়োগকারীদের একজন বলা হয়। তিনি যেখানেই হাত দিয়েছেন, সেখানেই সোনা ফলেছে এই এত বছর ধরে।
বর্তমানে ১৩৫ বিলিয়ন ডলার সম্পদের অধিকারী বাফেট বিশ্বের ১০ম ধনী ব্যক্তি। তবে এই ধনরাশি গড়ে তোলা আর তা ধরে রাখার জন্য ওয়ারেন বাফেট কিছু পন্থা অবলম্বন করেন বলে অনেক সূত্র থেকে জানা যায়। এবার তবে এই ঝানু বিলিয়নিয়ার পয়সা বাঁচাতে কী কী করেন, তা দেখে নেওয়া যাক।
১৯৫৮ সালে কেনা বাড়িতেই বাস করছেন এখনো
কোটিপতিরা যেখানে একের পর এক বিলাসবহুল বাড়ি কেনেন, বাফেট সেখানে ১৯৫৮ সালে ওমাহার নেব্রাস্কায় ৩১ হাজার ৫ শ ডলার দিয়ে কেনা বাড়িতেই থাকেন আজও।
অবশ্য বাড়িটি যে খুব ছোট, তা নয়। ৬ হাজার ৫ শ ৭০ বর্গফুটের ৫ বেডরুমের এই বাড়িতে বেশ কয়েকবার সংস্কারের কাজ হয়েছে। বর্তমানে এর মূল্য দাঁড়িয়েছে ১ মিলিয়ন ডলারে। বাফেটের এই বাড়ি সহসা বদলানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
সহজে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন না
১৯৭১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার লেগুনা বিচে বাফেটের একমাত্র অবকাশকালীন বাড়ি বা ভ্যাকেশন হোমটি তিনি বন্ধক দিয়ে ঋণ নিয়েছিলেন। ৩০ বছরের জন্য নেওয়া এই ঋণের ব্যাপারে তাঁর মতামত ছিল, এই এক বাড়ির পেছনে সব টাকা খরচ করার চেয়ে সেই টাকা দিয়ে আরও ভালো কিছু করা যেতে পারে। হাতে থাকা এই বাড়তি টাকা দিয়ে তিনি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের শেয়ার কেনেন, যা তাঁকে বিলিয়নিয়ার বানায়। কিন্তু এর পর থেকে তিনি বলতে গেলে কখনো কোনো কারণে ঋণ নেন না।
সস্তায় সকালের নাশতা সারেন
সকালের নাশতায় পছন্দের যেকোনো খাবার বানিয়ে দেওয়ার জন্য শেফ রাখার ক্ষমতা আছে বাফেটের। কিন্তু তিনি একে বাড়তি খরচ মনে করেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাজে যাওয়ার সময় মাত্র দুই-তিন ডলার দিয়ে খাবার কিনে নেন এই বিলিয়নিয়ার। আর সেটাই হয় তাঁর সকালের নাশতা।
ব্র্যান্ডের পণ্যের পেছনে তিনি খরচ করেন না
ডিজাইনার লেবেলের কোনো পোশাক বা সদ্য আসা মুঠোফোনের কোনো মডেলে বাফেটের আগ্রহ নেই। মাত্র ২০ ডলার দিয়ে কেনা ফ্লিপ ফোন ব্যবহার করেই তিনি দিব্যি ভালো আছেন!
কখনো টাকা ধার করেন না
১৯৯১ সালে এক অনুষ্ঠানে বাফেট জানিয়েছিলেন, তিনি কখনো টাকা ধার নেননি কারও কাছ থেকে। এ বিষয়ে তাঁর কোনো আগ্রহও নেই।
কম দামি গাড়ি চালান
বিলিয়নিয়ার আর মিলিয়নিয়ারদের পছন্দ যেখানে বিলাসবহুল স্পোর্টস কার কেনা বা গ্যারেজভর্তি ভিন্টেজ মডেলের গাড়ি রাখা, সেখানে বাফেট ব্যবহার করেন কম মূল্যের সারিয়ে নেওয়া গাড়ি। ২০১৪ সালে একবার শুধু ৪৫ হাজার ডলার খরচ করে ২০০৬ সালে কেনা ক্যাডিলাক ডিটিএস-এর বদলে ক্যাডিলাক এক্সটিএস কিনেছিলেন। বছরে মাত্র ৩ হাজার ৫ শ মাইল ড্রাইভ করেন বলে নতুন গাড়ি কেনাতেও তাঁর আগ্রহ কম।
টাকা বাঁচানোর জন্য নতুন নতুন পন্থা খোঁজেন
বাফেটের প্রথম সন্তান যখন জন্ম নেয়, তখন তিনি একটি দেরাজকে ছোট বাচ্চাদের শোবার বিছানা বা ব্যাসিনেটে কনভার্ট করেছিলেন। দ্বিতীয় সন্তানের সময় বাফেট একটি ক্রিব বা বাচ্চাদের খাট নিয়ে আসেন। তাঁর মতে, আপনার প্রয়োজন নেই, এমন জিনিস যদি আপনি কিনতে থাকেন, তাহলে শীঘ্রই দরকারি জিনিস কেনার জন্য সেগুলো বিক্রি করে দিতে হবে। তাই কী কী কিনছেন এবং কী কী জিনিস জীবন থেকে বাদ দিতে হবে, সে বিষয়ে সতর্ক হওয়ার উপদেশ দেন তিনি।
যা ভালো লাগে তা–ই করেন
বাফেট তাঁর সফলতার কৃতিত্ব দেন নিজের চিন্তাধারাকেই। তাঁর মতে, সবারই এমন কিছু কাজ করা উচিত, যা তাঁকে ভালো লাগা দেয়। শুধু ট্রেন্ডে আছে বলে বিলাসবহুল পণ্য বা হলিডেতে অতিরিক্ত খরচ না করে নিজের শখ, ভালো লাগার সাধারণ জিনিসগুলোয় আগ্রহ খুঁজে নিতে হবে। হতে পারে সেটা খেলা বা উকুলেলে বাজানো।
ক্রেডিট কার্ড নয়, ক্যাশ ব্যবহার করেন
আমরা বেশির ভাগ মানুষ যখন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে বেশি অভ্যস্ত। সেখানে বাফেট ৯৪ বছর বয়সে এসেও ক্যাশ ব্যবহার করেন। ক্রেডিট কার্ডে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করার চেয়ে একটু রাশ টেনে হিসাব করতে ভালোবাসেন তিনি।
কুপন ব্যবহার করেন
বিল গেটসের সঙ্গে একবার হংকংয়ে ম্যাকডোনাল্ডসে খেতে গিয়ে বাফেট তাঁর পকেট থেকে একটি কুপন বের করেন এবং এটা নিয়ে দুজনেই বেশ ঠাট্টা করেন। বাফেট আজও কুপন ব্যবহার করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আর কেনাকাটায় যেকোনো অফার বা কুপন ব্যবহার করার কোনো সুযোগ ছাড়েন না তিনি।
হিরো ইমেজ: ওয়ারেন বাফেট অফিশিয়াল-এর ইন্সটাগ্রাম