বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলেন ইলন মাস্ক। ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ ডিসেম্বর এই টেক জিনিয়াসের ব্যক্তিগত সম্পদ ৪০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪৮ লাখ কোটি টাকার সমান। মাস্কের এ বিপুল সম্পদের পরিমাণ বিশ্বের ১৫০টি দেশের বার্ষিক জিডিপির চেয়েও বেশি। পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ৪০০ বিলিয়ন ডলার ক্লাবে নাম লেখালেন তিনি। নতুন এ কীর্তি গড়ার পেছনে রয়েছে তাঁর প্রাইভেট স্পেস এক্সপ্লোরেশন স্টার্টআপ স্পেসএক্সের মূল্যবৃদ্ধি।
ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানির ভেতরেই স্পেসএক্সের শেয়ারের বিক্রির কারণে মাস্কের সম্পদের পরিমাণ একদিনেই প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পায়। নতুন মূল্যায়নের পর এ স্টার্টআপের মূল্যমান দাঁড়ায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলারে। এছাড়া মাস্কের সম্পদের বড় অংশ তাঁর ইলেকট্রিক ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি টেসলার শেয়ার থেকে আসে। টেসলার শেয়ারও গত ১১ ডিসেম্বরে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। এর ফলে সেদিন মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৪৭ বিলিয়ন ডলার।
তবে এ মাইলফলক ছোঁয়ার আগেও ইলন মাস্কই ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। শীর্ষ ধনীর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। তবে ইলন মাস্কের সম্পদের পরিমাণ জেফ বেজোসের চেয়ে ১৮০ বিলিয়ন ডলার বেশি। ফরাসি ধনকুবের বার্নার্ড আর্নো এ বছরের জানুয়ারি মাসে মাস্ককে ছাড়িয়ে শীর্ষ ধনীর তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন। সেসময় টেসলার শেয়ারের দরপতনের কারণে মাস্ক পিছিয়ে পড়েন। তবে মে মাসেই মাস্ক তাঁর স্বস্থানে আবার ফিরে আসেন এবং তারপর থেকে তিনি তা ধরে রেখেছেন।
২০২৪ সালকে ইলন মাস্কের সম্পদ বিস্ফোরণের বছর বলা যায়। ব্লুমবার্গের মতে, ২০২৪ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মাস্কের সম্পদের তালিকায় প্রায় ২১৮ বিলিয়ন ডলার যুক্ত হয়েছে। তাঁর সম্পদ বাড়ার পেছনে রয়েছে স্পেসএক্সের মূল্যায়নের ঊর্ধ্বগতি, টেসলার ১৩ শতাংশ শেয়ার (যা তাঁর অবদান সম্পদের প্রায় ১৭০বিলিয়নের সমান), এবং এক্সএআইতে প্রায় ৫৪ শতাংশ মালিকানা, যার মূল্য নভেম্বর পর্যন্ত ৫০বিলিয়ন ডলার ছিল। বিশেষ করে, টেসলার শেয়ার ৫নভেম্বরের পরে ৬৫ শতাংশর বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে, ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে মাস্কের সম্পদ প্রায় ১৩৬ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। ট্রাম্পের জয়ই মাস্ককে এ বিপুল টাকা এনে দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শুরু থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ছিলেন ইলন মাস্ক।
সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন ফেডারেল ইলেকশন কমিশনের নতুন নথিতে উঠে এসেছে ইলন মাস্কের ট্রাম্পকে সমর্থনের তথ্য। ট্রাম্পকে জেতাতে নিজের পকেট থেকে প্রায় ২৭০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন মাস্ক। মার্কিন নির্বাচনে একক ব্যক্তির পক্ষ থেকে এত বিপুল পরিমাণ টাকার অনুদান এটাই প্রথম। মার্কিন অলাভজনক সংস্থা ওপেনসিক্রেটসের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১০ সালের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দাতা হিসেবে ইলন মাস্কের এই অনুদানকে ধরা হচ্ছে। ফলে ইলন মাস্ক 'যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ডোনার হয়ে উঠেছেন।
ইলন মাস্ক ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে বিপুল পরিমাণে টাকা ঢালা ছাড়াও, নিজেই ট্রাম্পের বিভিন্ন জনসভায়ও অংশ নিয়েছেন।ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইলন মাস্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা হলেও ট্রাম্প মাস্ককে খালি হাতে ফেরাননি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন শাসনকালের 'ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সি DOGE এর সহনেতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত হয়েছেন মাস্ক।এ পদে সরকারের অভ্যন্তরে কাজ না করলেও মাস্কের সরাসরি হোয়াইট হাউসের সাথে যোগাযোগ থাকবে। ফেডারেল এজেন্সি ও সরকারের নীতিগুলিতেও মাস্কের উল্লেখযোগ্য প্রভাব থাকবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, মাস্কের ছয়টি কোম্পানির উপর নজর রাখে ফেডারেল কোম্পানি। এই ছয়টি প্রতিষ্ঠান হল, টেসলা, স্পেইসএক্স, এক্স (টুইটার), নিউরালিংক, এক্সএআই এবং বোরিং। এর মধ্যে, মাস্ক টেসলা এবং স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এক্স, নিউরালিঙ্ক, এক্সএআই এবং বোরিং কোম্পানির মালিক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এই ছয়টি কোম্পানির মধ্যে টেসলা ও স্পেসএক্স গত দশকে বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল চুক্তি পেয়েছে।অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জানুয়ারি মাসে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করলে মাস্কের ভাগ্য আরও খুলে যেতে পারে। ইলন মাস্কের বিষয়ে আসলে কিছুই গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় না।
সূত্র: নিউজ এইটিন, টাইমস অব ইন্ডিয়া
ছবি: ইন্সটাগ্রাম