সারা বছর কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় তারকদেরকে। এমনিতে নিত্যদিনের ঝামেলাও কম যায় না। জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌটুসী বিশ্বাসের প্রথম অভিনীত সেই সাড়া জাগানো ধারাবাহিক 'একান্নবর্তী'র মতো সেভাবে আর একসঙ্গে থাকা হয়না পরিবারের সবাই মিলে। তবে উৎসবের সময় নীড়ে ফেরা পাখির মতো সবাই পরিবার পরিজনের কাছেই যাই আমরা। মৌটুসীও ইতিমধ্যে খুলনায় নিজের বাবার বাড়িতে পৌঁছে গেছেন পূজা উপলক্ষে। কিন্তু সবকিছু আর যেন আগের মতো নেই।
এবারই প্রথম বাবাকে ছাড়া পূজার সময়টা কাটবে এই অভিনেত্রীর। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হিসেবে সবটা একা হাতে সামলাতে হচ্ছে তাঁকেই। হাল ফ্যাশনের সঙ্গে পূজা নিয়ে আলাপচারিতার মাঝে বললেন, 'এ বছরই প্রথম বাবা ছাড়া পূজা কাটাতে হচ্ছে। গত বছরও বাবা পূজার সময় আমার সঙ্গে ছিলেন। একদম সুস্থ-সবল মানুষ ছিলেন তখন। অথচ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তিনি আমাকে একা করে চলে গেলেন পরপারে। যেহেতু আমার আর কোন ভাই-বোন নেই, তাই বাবা আমার ওপরেই সব দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। আমি চেষ্টা করেছি সবটা পালন করতে'।
পূজার আয়োজনে রসনাবিলাসের বিষয়টা অনেকখানি জায়গা জুড়ে থাকে। আর মৌটুসীর কাছে অষ্টমীর সকালে লুচি, ছোলার ডাল আর সন্দেশ সেই ছোটবেলা থেকেই খুব প্রিয়। অবশ্য ছোলার ডালের চেয়েও লুচির সঙ্গে আলুর দম বেশি ভালোবাসেন তিনি। মাংস থাকেনা মৌটুসীর খাদ্যতালিকায়। পছন্দ করেন নিরামিষ পদ আর মাছ। মিষ্টির মিষ্টতা খুব বেশি হলে তাঁর মন ওঠেনা তাতে। এবারে দারুণ স্বাদের সন্দেশ আনিয়েছেন এই অভিনেত্রী বগুড়া থেকে। খুলনায় আসার আগে নিজের মুসলিম প্রতিবেশী আর বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সেই সন্দেশের আনন্দ ভাগ করে এসেছেন তিনি। এটাই তো আমাদের বাংলাদেশের মানুষের সত্যিকারের ধর্ম। আর তা হলো মানবধর্ম। আর তাই তো মন্দিরে পূজা-অর্চনায় বাধা-বিঘ্ন বা প্রতিমা ভাঙার মতো অত্যন্ত অনভিপ্রেত ঘটনাগুলো খুব কষ্ট দেয় মৌটুসীকে।
পুজার আনন্দ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মিশ্র অনুভূতির কথা জানালেন তিনি। বললেন, 'জন্মসূত্রে সনাতন ধর্মের মানুষ আমি, ফলে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবে একটা আনন্দ তো কাজ করেই মনে। এমন সময় ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। বাবা-মায়ের চাকরির সূত্রে তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতাম। তাই বেশিরভাগ পূজা কেটেছে চট্টগ্রামের রামকৃষ্ণ মিশনে। গত কয়েক বছর এ সময়টা আমরা সবাই মিলে কাটাই গ্রামের বাড়ি খুলনায়। তবে এবার সত্যি বলতে, বাবা না থাকায় আর নানা কারণে পূজার আনন্দটা বেশ ফিকে লাগছে'।
হালকা সাজেই স্বচ্ছন্দ মৌটুসী। বললেন'আমি খুব একটা জমকালো সাজপোশাক পছন্দ করি না। আরামদায়ক পোশাকই বেশি পরি। সেক্ষেত্রে পূজায় প্রথম পছন্দ সুতির শাড়ি। এবার দুটি সুন্দর শাড়ি উপহার পেয়েছি। আমিও উপহার দিয়েছি কাছের মানুষদেরকে। সেই সঙ্গে আরামদায়ক সালওয়ার কামিজও থাকবে মৌটুসীর পূজার পোশাকের তালিকায়। দুর্গাপূজায় লাল পেড়ে সাদা শাড়ির আলাদা আবেদন রয়েছে এই অভিনেত্রীর কাছে। কিছু ঐতিহ্য আসলে না বদলানোই ভালো। চিরন্তন এই পূজার আমেজের সাজে মৌটুসীকে সত্যিই মোহনীয় লাগছে।
সিরিমোনিয়াল অ্যাটায়ারের সাবেকি নকশার এই ক্ল্যাসিক শাড়ির সঙ্গে ভিন্টেজ স্টাইল গয়না বেছে নিয়েছেন মৌটুসী। জামদানি মোটিফের নকশা করা এই গোল্ডেন গয়নাগুলো পশ গ্যালারি থেকে নেওয়া।
শাঁখা-পলা, লাল টিপ আর চুলের ফুলের গাজরায় অপরূপা লাগছেন এই অভিনেত্রী। সেই সঙ্গে আলাদা করে নজর কাড়ছে আলতার সাজ।
আলোকচিত্রী নূর এ আলমের ফটোগ্রাফি আর মাসিদ রণ-এর স্টাইলিংয়ে চোখ জুড়ানো ছবিগুলোতে দুর্গাপূজার সামগ্রিক আমেজটি ফুটে উঠেছে অত্যন্ত সুন্দরভাবে। এই চিরন্তন সাজ আর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে এভাবে তুলে ধরা ও উদযাপন করার কোনো বিকল্প নেই আসলে। আর এখানে অভিনেত্রী মৌটুসীর পূজার সাজ কিন্তু সে কথারই জানান দিচ্ছে।
ছবির কারিগর: নূর এ আলম
স্টাইলিং ও কোরিওগ্রাফি: মাসিদ রণ
শাড়ি: সিরিমোনিয়াল অ্যাটায়ার
গয়না: পশ গ্যালারি
রূপসজ্জা: নূর আজমাইন