কেন এত ঠুনকো তারকাদের সংসার
শেয়ার করুন
ফলো করুন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর মিডিয়াতে প্রতিদিনই চলছে শাকিব-বুবলী-অপু আর পরীমনি-রাজের ‘এই আছে এই নেই’ সম্পর্ক আর তাসের ঘরের রোজনামচার বয়ান। সব সময় লাইমলাইটে থাকা তারকা জীবনের প্রেম-বিচ্ছেদ আলোচনার তুঙ্গে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। দিলীপ কুমার-সায়রা বানু বা টম হ্যাংকস-রিটা উইলসনের মতো কোনো কোনো তারকা দম্পতি দাম্পত্যের দীর্ঘ ইনিংসের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কিন্তু বেশির ভাগ তারকাদের দাম্পত্য জীবনের সমীকরণে সৃষ্টি হয় ছেদ।

রূপকথার গল্পের মতো সুন্দর ব্র্যাঞ্জেলিনা (ব্র্যাড পিট ও এঞ্জেলিনা) দম্পতি যখন কোর্টে ডিভোর্স ফাইল করলেন, ভক্তদের হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল। হালের আলোচিত আরেকটি ডিভোর্স হলো কনটেন্ট ক্রিয়েটর নাস ডেইলিখ্যাত নুসাইর ইয়াসিন ও তাঁর সঙ্গিনী অ্যালিন তামিনের। এ দেশি জনপ্রিয় জুটি তাহসান-মিথিলা আর অর্ণব-শাহানার বিচ্ছেদও মন খারাপ করে দিয়েছিল অনেকের। ব্যক্তিগত ইস্যু ছাড়াও কিছু চিরাচরিত কারণে তারকা দম্পতিদের সম্পর্ক এত ঠুনকো হয় বলে মনস্তাত্ত্বিকেরা মত দেন।

বিজ্ঞাপন

বিলাতের ম্যারেজ ফাউন্ডেশনের অব ইউনাইটেড কিংডম একটি সমীক্ষায় বলছে, বিশ্বব্যাপী সাধারণ দম্পতিদের তুলনায় তারকা দম্পতিদের বিবাহবিচ্ছেদের হার প্রায় দ্বিগুণ। বাস্তব চিত্রও সে রকমই দেখা যায় খালি চোখে।

এর কারণ নিরূপণ করা আসলে সহজ নয়। প্রথমত, তারকারাও আমাদের মতো মানুষ এবং চিত্রনাট্যের মতো সব সময় তাঁদের জীবনের গল্পগুলো সাজানো-গোছানো হবে—এটা প্রত্যাশা করা অমূলক। আবার কারও প্রেম-বিয়ে-বিচ্ছেদের বিষয়ে পাবলিক ট্রায়াল বা তাঁদের নিজের মতো করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দোষ দেওয়াও ঠিক নয়। তবুও ভক্তদের কৌতূহল রয়েই যায় এ বিষয়ে।

বিজ্ঞাপন

শিডিউল বিভ্রাট
তারকা দম্পতিদের কাজের শিডিউলে থাকে যোজন ফারাক। একজন হয়তো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুটিং করছেন। অন্যজন ভিন্ন একটি ইউনিটের সঙ্গে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। এতে প্রতিদিনের টুকিটাকি গল্প আর খুনসুটির মুহূর্তগুলো আদতে হারিয়ে যায়। ভিডিও কল, স্ন্যাপ চ্যাট আপাতদৃষ্টিতে দুজনের মাঝে কিছুটা সংযোগ রাখলেও দিন শেষে পড়ে থাকে ক্লান্তি ও শূন্যতা। সেই শূন্যতা হয়তো অন্য কোনো ভালো লাগার নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রাখে। আর পুরোনো ইংরেজি প্রবাদটা এখনো জ্বলজ্বলে সত্য হিসেবে প্রমাণিত, যা অনুবাদ করলে অনেকটা এমন দাঁড়ায় ‘চোখের আড়াল হলেই আসে মনের আড়াল’।

আকর্ষণের পারদ যায় কমে

তীব্র সুন্দর কিছু মুহূর্ত একত্রে যাপন করার পর বিবাহ নামক বন্ধনে দুটি মানুষ আবদ্ধ হন। তার আগে থেকেই চলে পাপারাজ্জিদের দৌরাত্ম্য আর ট্যাবলয়েডগুলোর রসাল কাহিনি। অপ্রকাশিত ব্যক্তিগত ছবি নিয়ে হয় তোলপাড়। অতঃপর বিবাহ এবং রোজকার বৈচিত্র্যহীন জীবন। এক ছাদের নিচে যাপিত জীবনের সঙ্গে বিয়ের আগের সেই উদ্দাম জীবনের অসাদৃশ্য একে অপরের প্রতি সেই তীব্রতর আকর্ষণকে ধীরে ধীরে ম্লান করে দেয়। এই অনুভূতি যেকোনো মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, জানালেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সাইকোথেরাপিস্ট তানজিলা হক।    

ইগোর সঙ্গে যখন যুক্ত হয় ঈর্ষা

সেলিব্রিটিরা মনোযোগের কেন্দ্রে থাকতে অভ্যস্ত। কেউ কেউ তাঁর সঙ্গীর চেয়ে নিজেদের গুরুত্ব বা প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেন। একে অপরের চেয়ে বেশি সফল হলে ঈর্ষাও বাড়তে পারে। বিশেষত, দুজনেই যদি একই ক্যারিয়ারের পথে থাকেন। পরস্পরের প্রতি দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার এটাও অন্যতম কারণ।

বিশ্বাসে মিলায় বস্তু

চঞ্চল তরঙ্গে বয়ে চলা মনে রুপালি জগতের নানা হাতছানি তো থাকেই। ক্ষেত্রবিশেষে মূল্যবোধের অবক্ষয় বিশ্বাসের জায়গাটায় যদি চিড় ধরায়, তখন দুজনের মধ্যকার সেই ‘হানি-বানি’ সম্পর্কটি স্থায়ী হয় না।

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৩, ০৬: ৩৯
বিজ্ঞাপন