দেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় আর গুণী সংগীতশিল্পী শায়ান চৌধুরী অর্ণব আর তাঁর গানের সাথি, সুগায়িকা সুনিধি নায়েক। এক নামে সবার খুব চেনা আর প্রিয় অর্ণব-সুনিধি জুটি। খুনসুটি লেগেই থাকে দুজনের মধ্যে। আবার তার ফাঁকফোকরে অবিরাম মিশে আছে ভালোবাসা, যত্ন আর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। বর্ণিল সাজপোশাক, এলিগ্যান্ট স্টাইল আর জেনজি জেনারেশনের ফ্যাশন অভিধান মতে ‘ড্রিপ’ লুক— সব রকম রূপেই ধরা দিলেন তাঁরা হাল ফ্যাশনের ক্যামেরায়।
ভালোবাসার অনুভূতিগুলো এমনিতে বলে বোঝানো দায়। আবার এমন কিছু জুটি রয়েছে, যার একজন কেমন শান্ত, উদাস আর ভাবুক তো আরেকজন কলমুখর আর উচ্ছ্বাসে দারুণ প্রাণবন্ত। তখন ভালোবাসার কথাগুলো প্রতিদিনের হাসি, কথা আর গানে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এদিকে দুজনই যদি গানের মানুষ হন, তবে তো সোনায় সোহাগা। অর্ণব-সুনিধির অনেকটা জুড়েই রয়েছে গান। সুনিধির জন্য গানও লিখেছেন অর্ণব। সেসব গান নিয়ে সামনে দারুণ কিছু করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁদের।
তবে কথায় কথায় দুজনের সম্পর্কের নানা রং ফুটে ওঠে। জানা যায়, তাঁদের যাপন আর জীবনের নানা দিকও। এই যেমন ধরা যাক ডিম মালাই। এই সুখাদ্য নাকি খুবই ভালো রাঁধেন অর্ণব। অতিমারির দিনগুলোতেই রান্নায় হাতেখড়ি এই গানের মানুষের। নিজেই হেসে বললেন, মাংস দারুণ রাঁধেন তিনি। মিলল সুনিধির সমর্থনও। ছটফটে তরুণী সুনিধিকে ঝটপট পাস্তা ডিশ তৈরি করতে ভালোবাসলে মানাতো বেশি। কিন্তু কথা বলে জানা গেল, তাঁর ভাষায় ঘটিবাড়ির রান্নাবান্নায় তিনি বেজায় পটু। বিশেষত অর্ণব জানান, সুনিধির পোস্ত দিয়ে করা সুস্বাদু পদগুলোর কথা। আসলে ভালোবাসার মানুষের জন্য বিশেষ কিছু রান্না করার মজাই আলাদা। রান্না আর গান—দুই-ই তো শিল্প।
অর্ণব যেন সেই মিলেনিয়ামের শুরুতে যেমন ছিলেন, তেমনই আছেন। দেখতে–শুনতে, চলনে-বলনেও। ভুবন ভোলানো হাসিটি থাকাতে হয়তো সাজপোশাক নিয়ে একেবারেই মাথাব্যথা নেই তাঁর। স্বভাবটিও আসলে তেমন।
সুনিধি বলছিলেন, তিনি সাজপোশাক আর ফ্যাশনের ব্যাপারে যতটা উৎসাহী, অর্ণব যেন ততটাই উদাসীন। মানিয়েও যায় আসলে অর্ণবকে এই ‘পাশের বাড়ির ছেলে’ লুকে।
পাঁচটি দারুণ উল্কির মালিক সুনিধি হাসতে হাসতে জানান, এ ব্যাপারে অর্ণবের কোনোই উৎসাহ নেই। অর্ণব পায়চারি করছিলেন আর পাশ থেকে ফোড়ন কেটে সুনিধির কথায় দিচ্ছিলেন সংগত। তাঁর মুখ থেকেই জানা গেল আরেক মজার তথ্য। তিনি জামাকাপড় কিনলে নাকি সবাই তা নিয়ে এই-সেই বহু অভিযোগ করেন, অনেকটা কপট অনুযোগের সুরে বললেন। সুনিধি সহাস্যে সমর্থন করলেও বললেন, টি–শার্টের ভালোমন্দ কিন্তু বেশ ভালো বোঝেন অর্ণব। তাই তিনি কারও জন্য কিছু কিনলে টি–শার্টই কিনতে পছন্দ করেন। তবে এই খুনসুটির ফাঁকে জানা গেল এক দারুণ রোমান্টিক গল্প। এই অর্ণবই সুনিধির মন পাওয়ার জন্য নিজে গিয়ে কিনেছিলেন খুব স্পেশাল একটি জামদানি শাড়ি। দেখেশুনে সত্যিই মনে হলো, শুধু মন নয়, গোটা সুনিধিকেই পেয়েছেন তিনি নিজের মতো করে।
দুজনে মিলে হাঁটতে বের হওয়া, কোথাও খেতে যাওয়া, এই ব্যাপারগুলো বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে ঢাকায়। জনপ্রিয়তাই কারণ। ব্যস্ততাও খলনায়কের ভূমিকায়। তবে শান্তিনিকেতনে গেলে নির্বিঘ্নে সময় কাটে তাঁদের একসঙ্গে ঘুরে বেড়িয়ে।
তারকাখ্যাতির তুঙ্গে থাকা এই জুটির দুজনকেই মাঝেমধ্যে ক্রেজি ভক্তদের দৌরাত্ব সামলাতে হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সবার ভালোবাসা খুব উপভোগ করেন তাঁরা।
অর্ণব গানের সুরে নিজেকে ‘আধখানা ভালো ছেলে, আধা মস্তান’ বললেও ভালোর দিকেই পাল্লা ভারী। তবে মাঝেমধ্যে একটু রাগারাগি করেন, তা–ও শুধু ঘরের মানুষের সঙ্গে। একটুখানি গোছানো আর অনেকটা এলোমেলো অর্ণবকে গুছিয়ে রাখেন সুনিধি।
আবার তাঁর জীবনে অর্ণব এক অসাধারণ ভালো বন্ধু। যে বন্ধুটি দিন শেষে তাঁর সব কথা শুনবে মন দিয়ে। এটাই বা কয়জন পায়। ২৭ বছরের জীবনে কর্কট রোগ শনাক্ত হবার ছয় মাসের মাথায় মাকে হারিয়েছেন সুনিধি। পার হয়েছেন অনেক চড়াই–উতরাই। সবকিছুতেই অর্ণব রয়েছে পাশে, ভাবতে ভালো লাগে তাঁর।
অর্ণবের গানে আছে, ‘ভালোবাসা তারপর দিতে পারে গত বর্ষার সুবাস/ বহুদিন আগে তারাদের আলো শূন্য আঁধার আকাশ’। শুধু গত বর্ষা নয়, অর্ণব-সুনিধির জীবনে সামনের বহু বর্ষা, শীত আর গ্রীষ্ম কাটুক এমনই ভালোবাসায় আর গানে গানে।