সম্প্রতি ‘নাইটহুড’ খেতাব জুড়েছে ডেভিড বেকহ্যামের নামের সঙ্গে। ফুটবলকে সঙ্গী করে এই তারকা তিন দশকের বেশি সময় জিতে চলেছেন মানুষের মন। ছিলেন ইংল্যান্ডের ফুটবল দলের অধিনায়ক। বলাই বাহুল্য, এই সম্মাননা তাঁর পাওয়ারই কথা। তবে এরই মাঝে করা হচ্ছে বেকহ্যাম পরিবারে ভাঙনের আশঙ্কা। এই গুঞ্জনে কিছুটা হলেও ম্লান ডেভিড বেকহ্যামের প্রাপ্তির খবর।
মাত্র ৫০ বছর বয়সেই বেকহ্যাম গড়ে তুলেছেন প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ। তিনি ও তাঁর স্ত্রী ভিক্টোরিয়া বেকহ্যামের স্বনামের ব্র্যান্ড ‘ব্র্যান্ড বেকহ্যাম’। তবে একসময়ের দুনিয়া মাতানো স্পাইস গার্ল ভিক্টোরিয়ারও আছে আলাদা ক্লোদিং ব্র্যান্ড। আজকের ধনকুবের বেকহ্যাম তৈরিতে এই ব্র্যান্ডের ভূমিকাও কম নয়। এই ব্র্যান্ডকে শুধু ফ্যাশন ব্র্যান্ড বললে ভুল বলা হয়। এটি ফুটবল ও ফ্যাশনের পাশাপাশি বেকহ্যাম পরিবারের পরম্পরাগত জ্ঞানের প্রতীক। ইদানীং ডেভিড বেকহ্যামের বড় ছেলে ব্রুকলিন ও তাঁর স্ত্রী নিকোলা পেলটজের পরিবার থেকে আলাদা হওয়ার গুঞ্জন এই ব্র্যান্ডের নিখুঁত ইমেজকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে ফেলছে।
পারিবারিক কলহের এই গুঞ্জন প্রথম শোনা যায় ২০২২ সালে। ব্রুকলিনের বিয়ের পর। পুত্রবধূ নিকোলা নাকি তাঁর ‘বিগ ডে’তে ভিক্টোরিয়া বেকহ্যামের ডিজাইন করা পোশাক পরতে রাজি হননি। পরবর্তী সময়ে দ্য টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিকোলা যদিও এই গুজব অস্বীকার করেন ও জানান, ভিক্টোরিয়ার অ্যাটেলিয়ার সময়মতো পোশাক তৈরি রাখতে পারেনি বলেই তা পরা হয়ে ওঠেনি। নিকোলা নিজে বেশ বড় মাপের অভিনয়শিল্পী ও ধনী পরিবারের মেয়ে। তাঁর বাবা নেলসন পেলটজ একজন ধনকুবের।
তবে পারিবারিক এই কলহ এখন রীতিমতো টিভি সিরিয়ালে রূপ নিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেলিব্রিটি ক্রাইসিস পিআর সামলানো দক্ষ লরেন বিচিং বলেন, ‘বেকহ্যাম পরিবার পুরো “রিয়েলিটি টিভি পরিবার”–এ রূপ নিয়েছে।’
বেকহ্যামরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দিয়ে নিজেদের সুন্দর মুহূর্তগুলো শেয়ার করতে ভুলছেন না। তবে গুজব আরও তুঙ্গে ওঠে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কার্যক্রম ঘিরেই। কারণ, ডেভিড বেকহ্যামের ৫০তম জন্মদিনের উদ্যাপনে ব্রুকলিন–নিকোলা দম্পতি উপস্থিতই হননি। এমনকি তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কোনো পোস্টও করেননি। এর পেছনে ব্রুকলিনের ছোট ভাই রোমিওর হাত থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বলছেন, রোমিও নাকি এখন যাঁর সঙ্গে প্রেম করছেন, তিনি বড় ভাই ব্রুকলিনের সাবেক প্রেমিকা। তাঁর উপস্থিতির কারণেই এই উদ্যাপনে অনুপস্থিত ছিলেন ব্রুকলিন। ডেভিড ও ভিক্টোরিয়া বেকহ্যামও অবশ্য গুঞ্জনের সত্যতা স্বীকার করেননি। বাবা দিবসে ব্রুকলিন ও নিকোলা দুজনেই স্যার ডেভিডকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিচিং এ নিয়ে আরও বলেন, সবচেয়ে বড় হতাশার বিষয় হলো, এখন মানুষ পরিবারটিকে তাঁদের আসল অর্জন দিয়ে নয়, বরং পারিবারিক কলহের গুঞ্জনের জন্য চিনছে।
মার্ক বোরকোস্কির মতে, ডেভিড বেকহ্যাম শুধু তাঁর তারকাখ্যাতির জন্য জনপ্রিয় নন, তিনি তাঁর ব্র্যান্ডের মাধ্যমে এনেছেন পরিবর্তন। মেট্রোসেক্সুয়ালিটিকে সমসাময়িক ধারায় পরিচিত করে তুলেছেন। কর্মজীবী পুরুষদের নেইলপলিশ পরার ব্যাপারটা স্বাভাবিক করে তুলেছেন। পরিবারকে প্রাধান্য দিয়েছেন বরাবর। ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়েই ফ্যাশনে নতুন কিছু নিয়ে এসেছেন। তবে এখন তাঁর এসব অবদান ভুলে গিয়ে ভক্তরা রীতিমতো ‘শার্লক হোমস’ হয়ে উঠছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতিটি ছবি আতশি কাচের নিচে ফেলে পারিবারিক কলহের সূত্র টানছেন।
তবে সোশ্যাল মিডিয়া কনসালটেন্ট ম্যাট নাভারা ব্যাপারটিকে সম্মতি জানাচ্ছেন। তিনি বলছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিটোল সুখের ছবি দিতে হবে, এমন কথা নেই। তবে ছবি দিয়ে একে অপরের সঙ্গে জুড়ে থাকাই যায়। এতে ভক্তদের মধ্যে অযথা গুজবের প্রতি আগ্রহ জন্মায় না।’
এ মাসের শুরুতে নিকোলা ও ব্রুকলিনের জার্মান গ্ল্যামার ম্যাগাজিন শুট আবার বলছে, এই ঝামেলা শেষ হতে অনেক দেরি। কারণ, তাঁরা কেউ বেকহ্যাম পরিবারের নামও উচ্চারণ করেননি সেখানে। এ ক্ষেত্রে প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের সঙ্গে নিকোলা–ব্রুকলিন জুটিকে মেলাচ্ছেন ভক্তরা। তবে ব্রুকলিন পেশা নির্বাচনে ভোগেন সিদ্ধান্তহীনতায়। কখনো ছবি তোলার প্রতি তাঁকে ঝুঁকতে দেখা যায়, আবার কখনো রান্নায়। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মনোবল নেই; এ কারণেই পারিবারিক কলহের সমাধান করতে পারছেন না বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।
ম্যাট নাভারা আরও বলছেন, এই কলহ বেকহ্যাম ব্র্যান্ড, হাউস নাইনটিনাইনের ওপর প্রভাব ফেললেও ফাটল ধরাতে পারেনি। পরিবারের ইমেজ অক্ষত রাখতে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান দ্রুত হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ছবি: ইন্সটাগ্রাম