ছোটবেলার ঈদ আর এখনকার ঈদ কতটা আলাদা
ছোটবেলার ঈদ মানে অন্য রকম আনন্দ। আমার নানুবাড়ি ও দাদুবাড়ি ছিল ফরিদপুরে। আমরা থাকতাম মুন্সিগঞ্জে। সেখান থেকে ঈদ করতে যেতাম ফরিদপুরে। ঈদের দিন দাদুবাড়িতেই কাটাতাম। পরের দিন নানুবাড়ি। যেদিন বাড়িতে যাব, তার আগের রাতে খুব উত্তেজনা কাজ করত। সেখানে গিয়ে ভাইবোনদের সঙ্গে দেখা হবে, হাতে মেহেদি দেব, তারাবাতি জ্বালাব চাঁদ রাতে, সালামি নেব। হবে খাওয়াদাওয়া, হইচই আর আনন্দ। এখনকার ঈদ তো শুধু একটা জামা কেনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। আমি উপহার দিই এখন বাসার সবাইকে। এটা করতে খুব ভালো লাগে আমার। এই তো দুই সময়ের ঈদের পার্থক্য।
নতুন বউ হিসেবে প্রথম ঈদ কেমন লাগছে?
বিয়ে জীবনে অনেক বড় একটা পরিবর্তন আনে। এ এক বড় দায়িত্ব, সবাই এ কথাই বলে থাকেন। কিন্তু এখানে আসার পর আমাকে আমার নতুন পরিবারের সদস্যরা তা একবারের জন্যও বুঝতে দেননি। আমার শাশুড়ি, নানিশাশুড়ি সবার কাছ থেকে আমি আদর পাই। আমার শাশুড়ি যেখানে যান, যা-ই দেখেন, আমার জন্য নিয়ে আসেন। আমার পেশা, পোশাক, আচার-আচরণ সবকিছু নিয়ে তাঁরা খুশি। আমার স্বামী খুবই বন্ধুসুলভ। আমাকে ভালোভাবে বোঝেন। নতুন জীবনের শুরুটা খুব ভালো হয়েছে। সব সময় আমি এমন একটা পরিবারের অংশ হতে চেয়েছি এবং তা পেয়েছি এখন। আমি সৌভাগ্যবতী। আশা করছি ঈদটা ভালো কাটবে।
নতুন পরিবারের সদস্যদের জন্য আর নিজের জন্য কী কিনেছেন?
এবারে ঈদে কিছু কেনা হয়নি। কারণ, কিছুদিন আগেই আমার বিয়ে হয়েছে। প্রচুর উপহার পেয়েছি। অনেক শাড়ি জমেছে। সেগুলোই পরব। আর অযথা নতুন কাপড় কেনা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অবশ্য আমার শাশুড়ি এত উপহার দেন! এই ঈদেও অনেক কিছু পাঠিয়েছেন। আর আমার তরফ থেকে সবার জন্য উপহার কেনাকাটা চলছে, যেটা আমার কাছে খুব আনন্দের।
ঈদে কী উপহার পেলেন?
আমি যেহেতু নতুন বউ, এবার অনেক উপহার পেয়েছি। আমার শাশুড়ি, তাঁর বন্ধু, পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে অনেক উপহার পাওয়া হয়েছে। শাড়ি পেয়েছি অনেক। আসলে আমি শাড়ি পরতে ভালোবাসি, এটা সবাই জানেন। এ ছাড়া সুগন্ধী, গয়নাসহ অনেক উপহার পেয়েছি।
ঈদে কেমন পোশাক পছন্দ? কী পরবেন?
ঈদের দিন সকালে হালকা রঙের সুতির কুর্তি পরা হবে। যেহেতু এবারের ঈদ গরমে পড়েছে, এমন পোশাক পরে আরাম, দেখতেও স্বস্তিদায়ক। বাড়ির নতুন বউ যেহেতু, অবশ্যই শাড়ি পরা হবে। রাতে মায়ের বাসায় যাব। তখন সালোয়ার কামিজ পরব। এবারের ঈদে সুতির আরামদায়ক পোশাকই বেছে নিচ্ছি।
আপনাকে সব সময় স্নিগ্ধ সাজে দেখা যায়। কী ধরনের সাজপোশাক আপনার পছন্দ?
আমি আসলে কী ধরনের মেকআপ পছন্দ করি, সেটা নির্ভর করে আবহাওয়া আর আমার মনের ওপর। যেমন আমি এদিক–ওদিক বেরোলে মেকআপে থাকে আইলাইনার দিয়ে ছোট্ট একটা উইং আর ব্লাশন, ন্যুড কালারের লিপস্টিক। দাওয়াত, উৎসবে বা কোনো অনুষ্ঠানে অবশ্যই আমি সাজতে পছন্দ করি। সাজ নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করতেও ভালো লাগে। যদি হালের ধারা বলেন, আমার ঢিলেঢালা পোশাক খুবই পছন্দ। এগুলো খুবই আরামদায়ক, ফ্যাশনেবল আর সঙ্গে অনেক গয়না পরতে হয় না, খুব একটা হেয়ার স্টাইল করারও প্রয়োজন পড়ে না, এমনিতেই ভালো দেখা যায়। আমার শাড়ি খুব পছন্দ, এটা সবাই জানেন, তবে সব সময় শাড়ি পরা স্বস্তিদায়ক হয় না আমার জন্য। তখন কুর্তি পরা হয়। আমার ব্যক্তিগত স্টাইল স্টেটমেন্ট বলে তেমন কিছু নেই, তবে শাড়ির সঙ্গে লম্বা মালা, মাসকারা, কাজল আর অ্যান্টিক গয়না খুবই পছন্দ আমার।
আপনার ত্বকের যত্ন নিয়ে কিছু বলুন
হালের ট্রেন্ডি বিউটি ভ্লগগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকের যত্ন করি নিয়মিত। অর্ডিনারি ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট আমার খুব পছন্দ। আমি রাতে কয়েক ধাপে স্কিন কেয়ার করি। প্রথমে বেসিক ফেস ওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করি। তারপর টোনার দিই। এরপর নায়াসিনামাইড সিরাম দিই। এরপর আলফা আরবিউটিন হায়ালুরনিক অ্যাসিড সিরাম আর এর ওপর জেল বেজড কোনো ময়েশ্চারাইজার ও লিপ মাস্ক দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
পছন্দের পারফিউম ও পোশাকের ব্র্যান্ড কী?
শ্যানেল, গুচি, র্যালফ লরেন এগুলো আমার পছন্দের ব্র্যান্ড। জয়পুরের কুর্তি আমার খুব পছন্দ। আড়ং আর দেশালের শাড়ি আমার পছন্দ। আর ক্যাজুয়ালের ক্ষেত্রে এইচ অ্যান্ড এম আর মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার প্রিয় আমার।
ঈদে কী কাজ করছেন? গান নিয়ে এখন কী করছেন?
যেহেতু মাত্র বিয়ে হয়েছে, তাই তেমন কোনো কাজ করা হয়নি। তবে ইশান আর আমার একটা গান অনেক দিন আগেই করা আছে। সেটা চাঁদরাতে রিলিজ করছি।
ঈদের দিন কীভাবে কাটাবেন?
ঈদের দিন পরিবার-বন্ধু সবাই মিলে ঈদ করব। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নতুন জামা পরে অবশ্যই কিছু রান্না করব। আমার স্বামী, শাশুড়ি, নানিশাশুড়ি মিলে ঈদের সময়টা কাটাব। তারপর আমার মায়ের বাসায় যাব। সেখান থেকে ফিরে এসে কিছু বন্ধুকে বাড়িতে দাওয়াত দেব, যদি সময় ম্যানেজ করতে পারি।
ঈদে কী রাঁধবেন? আপনার নিজের পছন্দের খাবার কোনটি ঈদে?
রান্না করতে আমি খুবই ভালোবাসি আর খাওয়াতেও ভালোবাসি। প্রায়ই রান্না করে আমার বন্ধুদের বাড়িতে ডেকে খাওয়ানো হয়। এবারের ঈদে সকালে কোরমা আর পরোটা করব, যেটা আমার স্বামীর পছন্দ। আমার শ্বশুরবাড়ির সবাই শুনেছেন যে আমর হাতের রোস্ট-কোর্মা খুব মজা হয়। তাই সবার জন্যই তা করব। সঙ্গে কাবাব করব। ডেজার্টের মধ্যে জর্দা, শাহি টুকরা, ফ্রুট কাস্টার্ড করতে পারি ঈদে। আমার নিজের পছন্দের ঈদের খাবার হচ্ছে আমার মায়ের হাতের রান্না করা বিরিয়ানি, যেটার স্বাদ একেবারেই আলাদা। সঙ্গে সালাদ আর কাবাব। মায়ের হাতের সেমাই খুবই মজার হয়। আমার মায়ের সব রান্নাই আমার ঈদের পছন্দের খাবার।
হাল ফ্যাশনের পাঠকদের জন্য বার্তা
ঈদ আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। সারা বছর আমরা অপেক্ষা করি এই দিনের জন্য। তাই আনন্দের সঙ্গে দিনটি উদযাপন করুন। এই দিনে আমরা যেন সব ভুলে সবাইকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখি, ক্ষমা করে দিই। আমাদের জীবনটা আসলে অনেক ছোট। কখন কে চলে যাই, তার কোনো ঠিক নেই। তাই কারও ওপর অভিমান না রাখি। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
ছবি: সানজিদা মাহমুদ নন্দিতা