ছেলেবেলার ঈদের সরল উচ্ছ্বাস মিস করেন অভিনেতা মীর রাব্বি
শেয়ার করুন
ফলো করুন

নাদিয়া ইসলাম

ঈদ মানেই আনন্দ, পরিবার আর শৈশবের স্মৃতিতে ফিরে যাওয়া। সেই ছোটবেলার ঈদ, যখন একটা নতুন জামা, হাতে মেহেদি, আর ঘরে ঘরে ঘুরে সেমাই খাওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে থাকত নিঃস্বার্থ আনন্দ। তবে সময় বদলায়, আর সেই বদলের ছায়া পড়ে আমাদের উৎসব উদ্‌যাপনেও। এবারের ঈদে কথা হলো অভিনয়শিল্পী ও কথাবন্ধু মীর রাব্বির সঙ্গে, ছেলেবেলার ঈদের স্মৃতি রোমন্থনে জমে উঠেছিল আড্ডা।

ছেলেবেলার স্মৃতি তাঁকে আনন্দ দেয় আজও
ছেলেবেলার স্মৃতি তাঁকে আনন্দ দেয় আজও

স্মৃতিকাতর হয়ে রাব্বি বলেন, ‘শৈশবের ঈদে ছিল এক অন্য রকম আনন্দ। সেই নিঃশর্ত আনন্দ এখন আর খুঁজে পাই না। এখন ঈদের আনন্দ সীমাবদ্ধ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা কিংবা নিজেকে একটু সময় দেওয়ার মধ্যে। অথচ শৈশবের দিনগুলো ছিল একেবারে আলাদা। আমার শৈশব কেটেছে সাংস্কৃতিক আবহে। পাড়ার বড় ভাইদের থিয়েটার, গান, কবিতা, খেলাধুলা করতে দেখতাম। সেই পরিবেশই আমাকে অনুপ্রাণিত করত। ধীরে ধীরে সেসব চর্চার অংশ হয়ে উঠেছিলাম আমিও।’

বিজ্ঞাপন

ঝিনাইদহের ছেলে মীর রাব্বি সহাস্য বললেন, ‘ঝিনাইদহ দারুণ সুন্দর জায়গা। পুরো পাড়ায় ছিল ঈদের খুশি। সবাই মিলে হইচই করে পটকা ফুটাতাম, নতুন জামা পরে ঘুরে বেড়াতাম। একবার পটকা কিনতে গেছি দল বেঁধে, হঠাৎ পুলিশ চলে এল। সেকি কাণ্ড! ছোট-বড় সবাই মিলে দৌড়ে পালাচ্ছি! এখনো মনে পড়লে হাসি পায়।’
ঈদে নিজের রান্নাবান্না হয় কি না; এই প্রশ্নে মজার এক উত্তর দিলেন তিনি, ‘আমি রান্না করি না, তবে সাহায্যকারী হিসেবে দারুণ। সুন্দর করে কেটে, গুছিয়ে দিতে পারি। মা চমৎকার রান্না করেন। তাঁর সব রান্নাই মজা!’
কোরবানির ঈদের প্রিয় খাবার প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার মা আর বাবা মিলে একটা বিশেষ রেসিপিতে বিফ তেহারি রান্না করেন। সেটা আমার সবচেয়ে প্রিয়।’
কথাবন্ধু থেকে রেডিওর পেছনে পরিচালনার কাজে ছিলেন দীর্ঘ সময়, সেখান থেকে পুরোদস্তুর অভিনয়, পুরো সময় পরিক্রমা নিয়ে বলুন।

বিজ্ঞাপন

‘কথাবন্ধু হয়ে কাজ করাটা আমার কাছে এক অন্য রকম আনন্দ, এক গভীর অনুভূতির জায়গা,’ জানালেন মীর রাব্বি। রেডিওর মাইক্রোফোনের সামনে যেমন, তেমনি নেপথ্যে অনুষ্ঠান পরিচালনায়ও তিনি সমান পারদর্শী। রেডিওর সময়টার তুলনা আসলে অন্য কিছু দিয়ে হয় না,’ বলেন তিনি। পর্দায় আগেও কাজ করেছেন অল্পবিস্তর। মাঝখানে কিছু কাজের প্রস্তাবও পেয়েছিলেন, তবে সেগুলো দীর্ঘমেয়াদি ছিল না। পরিবর্তন আসে জাহিদ নীরবের ‘বুকপকেটের গল্প’ নাটকের মাধ্যমে। রাব্বি বলেন, নাটকটা মানুষের এত পছন্দ হয়েছে যে অভিনয়টাকে আরও বেশি করে আগলে নিয়েছি।

অভিনয়কে বেশি করে আগলে নিয়েছেন
অভিনয়কে বেশি করে আগলে নিয়েছেন

বর্তমান ব্যস্ততা প্রসঙ্গে রাব্বি জানালেন, ‘এই মুহূর্তে আমার একাধিক একক নাটক আসছে। বঙ্গ প্ল্যাটফর্মে “ফ্যাকড়া” নামে একটি সিরিজ চলছে, যেটা দর্শকদের ভালো লেগেছে। “রাইট আর রং” নামের একটি নাটক এনটিভিতে আসছে। দীপ্ত টিভিতেও একটি নাটক প্রচারের অপেক্ষায় আছে।’ ঠিক কবে কোন প্ল্যাটফর্মে কোন নাটক প্রচারিত হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারলেন না তিনি।

রাব্বি বলেন, ‘আমি খুব বেশি ভেবে পোশাক পরি না। আরাম আর স্বস্তিই আমার প্রথম শর্ত। ঈদের ফ্যাশন নিয়েও তাঁর ভাবনা সহজ ও স্বচ্ছ। কালো পাঞ্জাবি, জিনস আর একটা শার্ট—এই আমার ঈদের সাজ। খুব সাধারণ আর আরামদায়ক কিছু পরতেই ভালো লাগে।’ শুটিংয়ের প্রয়োজনে নতুন জামাকাপড় কিনতে হয় ঠিকই, তবে নিজের জন্য আলাদাভাবে খুব একটা শপিং করার পক্ষপাতী নন তিনি। ‘নিজের জন্য খুব বেশি শপিং করি না,’ হাসতে হাসতে বলেন রাব্বি।

ঈদের উপহার দিতাম আগে মাকে, এখন মা আমাকে উপহার দেন।
মন্ট ব্লাঙ্ক (Mont Blanc) লিজেন্ড সিরিজের পারফিউম রাব্বির খুব প্রিয়। আর শ্যানেল ব্লু তাঁর সংগ্রহে আছে।

শেষে ভক্তদের উদ্দেশে মীর রাব্বি বলেন, ‘সময়টা খুব অনিশ্চিত। অর্থনীতি, রাজনীতি, মানবাধিকার সবকিছু নিয়ে। কিন্তু তারপরও আমাদের আশাবাদী থাকতে হবে। সুন্দর সময় আসবেই।’

ঈদ মানেই পাঞ্জাবি তাঁর কাছে
ঈদ মানেই পাঞ্জাবি তাঁর কাছে

মীর রাব্বির ঈদের গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে উৎসব মানেই কেবল বাহ্যিক আয়োজন নয়; বরং সেটা অনেক বেশি ব্যক্তিগত অনুভব আর ভালোবাসার। হয়তো সেই শৈশবের ঈদ আর ফিরবে না, কিন্তু স্মৃতির আয়নায় সেগুলো আজও ঝকঝকে।

ছবি: মীর রাব্বির সামাজিক মাধ্যম

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৫, ১০: ০০
বিজ্ঞাপন