বোশেখে বাঁধুন বেণি

চুলের সাজে ঐতিহ্য অনুসরণে আগ্রহী আমাদের মেয়েরা। বছরের প্রথম দিনে তাই বেণিতে হতে পারে কেশসজ্জা। রূপ বিশেষজ্ঞ শারমিন কচির সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন শুভ্রা ফ্লোরিডা রোজারিও।

কখনো কবিতায়, কখনো গল্পে, কখনো ইতিহাসে কিংবা শিল্পীর তুলির আঁচড়ে, বাঙালি নারীর কেশসজ্জা নানাভাবে ফুটে উঠেছে। একসময় বাংলার মেয়েরা লম্বা চুল রাখতেন। তখন থেকেই বাহারি খোঁপা এবং বেণিতে দেখা যেত মেয়েদের। যুগের প্রয়োজনে চুল বাঁধার ধরনে এসেছে বিবর্তন।

তবে চিরায়িত বাঙালি সংস্কৃতির খোঁপা আর গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বেণি থাকবে চিরকাল। আজকাল চুল বাঁধায় প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মিশেলে ফিউশন স্টাইল থাকলেও এই বৈশাখে নতুন করে ‘ট্র্যাডিশনাল’ খোঁপা ও বেণি নিয়ে ভাবছেন অনেকেই। শাড়ি কিংবা কুর্তির সঙ্গে খুব সহজেই মানিয়ে যাবে এমন চুলের স্টাইল। রইল কিছু দেশীয় চুল বাঁধার ধরন ও নিয়ম।

কলাবেণি

এ উপমহাদেশে কলাবেণি বেশি করতে দেখা যায় গ্রামগঞ্জের মেয়েদের। এখনো অনেক স্কুলে কলাবেণি করে যাওয়ার রীতি রয়েছে। এই বেণি করতে অবশ্যই থাকবে হবে লম্বা চুল। প্রথমে চুল দুভাগে ভাগ করে নিতে হবে। চুলের দৈর্ঘ্য অনুসারে দুটো বিনুনি বেঁধে নিতে হবে। এরপর প্রতিটি বেণি ফিতা দিয়ে বেঁধে ডাবল করে ওপর দিকে নিয়ে ফুলের মতো করে বাঁধতে হবে। যেহেতু বৈশাখ, তাই শাড়ির সঙ্গে লাল ফিতা মানাবে।

বেড়া বিনুনির খোঁপা

প্রথমে চুল দুভাগে ভাগ করে নিতে হবে। চুলের দৈর্ঘ্য অনুসারে দুটো বিনুনি বেঁধে নিতে হবে। এবার ক্রসের মতো করে ডান দিকের বিনুনি বাঁ দিকে এবং বাঁ দিকের বিনুনি ডান দিকের সঙ্গে আটকে দিতে হবে। এভাবে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে বানের মতো করতে হবে। শেষে ক্লিপ দিয়ে আটকে নিতে হবে। এ চুল বাঁধার ধরনটি একটু সেকেলে হলেও দেখতে কিন্তু বেশ স্টাইলিশ। শাড়ির সঙ্গে সহজেই মানিয়ে যাবে।

বেণি খোঁপা

এই বেণির সুবিধা হচ্ছে চুল ছোট থাকলেও ফলস চুলের সাহায্যে খোঁপা করা যাবে সহজেই। সামনের চুল গুলোকে একপাশ করে টুইস্ট বেণি করে পুরো চুলকে পেছনে নিয়ে ফলস চুল লাগিয়ে লম্বা বেণি করে নিতে হবে। এরপর লম্বা বেণি দিয়েই পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে খোঁপার মতো করে আটকে দিতে হবে। ব্যাস! হয়ে গেল বেণি খোঁপা। সৌন্দর্য বাড়াতে খোঁপার এক পাশে পছন্দসই ফুল গুঁজে নিতে পারেন।

খেজুর বেণি

খেজুর বেণি এখনকার মেয়েদের কাছে বেশ পরিচিত। বেণিটি করতে হলে চুলগুলোকে প্রথমে দুভাগ করে নিন। এরপর এক ভাগের একদম শেষ প্রান্ত থেকে খানিকটা চুল এনে অপর প্রান্তে মিশিয়ে দিন। আবার অপর প্রান্তের একদম শেষ অংশ থেকে খানিকটা চুল এনে বিপরীত প্রান্তে মিশিয়ে দিন। অর্থাৎ এক ভাগ চুলের শেষ প্রান্ত থেকে চুল নিয়ে অপর ভাগে মিশিয়ে দিতে হবে। এলোচুলে করতে অসুবিধা হলে চুলের গোঁড়ায় একটি রাবার ব্যান্ড বেঁধে নিয়েও করতে পারেন বেণিটি। খেজুর বেণি যতটা পারেন, হালকা রাখলেই ভালো দেখায়। ঢিলেঢালা বেণিই বেশি সুন্দর লাগে।

যেকোনো কিছু করার আগে প্রয়োজন প্রস্তুতি। চুলের ক্ষেত্রেও তাই। আগে থেকেই যত্ন নিলে চুল বাঁধার সময় স্টাইলটা হবে পারফেক্ট।
• অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে ঘন ঘন শ্যাম্পু না করাই ভালো। অনুষ্ঠান সকালে হলে রাতে শ্যাম্পু করবেন। তাহলে চুল শুকানোর সময় পাওয়া যাবে আর চুল বাঁধতেও সমস্যা হবে না।
• চুল শুকাতে আমরা হেয়ারড্রায়ার ব্যবহার করি। সে ক্ষেত্রে ‘কোল্ড মোডে’ দিইয়ে চুল শুকানো ভালো। গরম বাতাস চুলের ক্ষতি করে।
• চুলে রং বা হাইলাইট করা থাকে অনেকের। হেয়ারস্টাইলে যেন রংটা সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে তাই শাম্পু করার সময় অবশ্যই কালার প্রটেক্ট শ্যম্পু ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
• আমাদের একেকজনের চুলের ধরন একেক রকম। অনেকের চুলে জট লেগে যায় দ্রুত। তাই মাঝে মাঝেই চেষ্টা করুন আঙুল দিয়ে জট ছাড়ানোর।