ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ট্রেন্ডি এই প্রাকৃতিক উপাদান কতটা কার্যকর

দূষণের কারণে শরীর প্রতিনিয়ত নানা পরিবেশগত টক্সিন, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও জীবনধারায় নেতিবাচক প্রভাবে লক্ষণীয়। এমন পরিস্থিতিতে শরীরের প্রাকৃতিক ডিটক্স সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে। এজন্যেই গ্লুটাথায়োন-এর প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

গ্লুটাথায়োন একটি প্রাকৃতিক ট্রাইপেপটাইড, যা লিভারে তৈরি হয় সিস্টেইন, গ্লুটামিন এবং গ্লাইসিন নামক তিনটি অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে। এটি শরীরের প্রাথমিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, রিঅ্যাকটিভ অক্সিজেন স্পেসিস (ROS) নিষ্ক্রিয় করে, ইমিউন সিস্টেম মডুলেট করে এবং কোষীয় বার্ধক্য প্রতিরোধ করে। স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন হেলথ লাইন উল্লেখ করেছে, ‘গ্লুটাথায়োন-এর ঘাটতি হলে শরীরের ডিটক্সিফিকেশন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তা ত্বক নিস্তেজ হওয়া, ক্লান্তি এবং নানা রকম দৈহিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।’

গ্লুটাথায়োন থেরাপি সাধারণত তিনভাবে দেওয়া হয়—   ইনট্রাভেনাস (IV), ইনট্রামাসকুলার ইনজেকশন এবং ওরাল সাপ্লিমেন্টেশন। তার মধ্যে ইনট্রাভেনাস (IV) ইনফিউশন সবচেয়ে কার্যকর, কারণ এটি সরাসরি রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং প্রাথমিকভাবে লিভারের বিপাককে এড়িয়ে যায়।

* লিভার ডিটক্সিফিকেশন: গ্লুটাথায়োন টক্সিন, ভারী ধাতু ও রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেগুলোকে শরীর থেকে বের করে দেয়।

* ত্বক উজ্জ্বল করা: এটি টাইরোসিনেজ এনজাইমকে ব্লক করে এবং পিগমেন্টেশন হ্রাস করে, যার ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়।

* মাইটোকন্ড্রিয়া শক্তিশালী করা: কোষে শক্তি উৎপাদন বাড়িয়ে ক্লান্তি ও অক্সিডেটিভ ড্যামেজ কমায়।

* ইমিউন ফাংশন উন্নয়ন: এটি শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।

• ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা: মেলানিন উৎপাদন কমিয়ে গ্লুটাথায়োন ত্বকে উজ্জ্বল ভাব আনতে সাহায্য করে।

• লিভারকে সুস্থ রাখে: অ্যালকোহল, ওষুধ ও দূষণ থেকে লিভারকে রক্ষা করে।

• শরীর ও মনকে চাঙা রাখে: হেলথ লাইন জানায়, এর ব্যবহারে মানুষ বেশি এনার্জেটিক ও মানসিকভাবে সতেজ অনুভব করেন।

• ইনফ্লেমেশন হ্রাস: এটি প্রদাহজনিত রোগ যেমন আর্থরাইটিস ও মেটাবলিক সিনড্রোমে সহায়ক হতে পারে।

হেলথ লাইনের বর্ণনা অনুযায়ী, সাধারণত প্রতি সেশনে ৬০০-১২০০ মিলিগ্রাম গ্লুটাথায়োন ইনট্রাভেনাস (IV) ইনফিউশন দেওয়া হয়, যা ৩০ মিনিট সময় নেয়। ভালো ফল পেতে ৪-৮টি সাপ্তাহিক সেশনের পর কিছু সময় অন্তর মেইনটেন্যান্স ডোজ দেওয়া হয়। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কম, তবুও ইনজেকশনের জায়গায় লালচে ভাব বা অল্প ব্যথা হতে পারে। চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

গ্লুটাথায়োন নিঃসন্দেহে একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের শরীর ও ত্বককে ভেতর থেকে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে পারে। তবে এর ব্যবহার শুরু করার আগে নিজের শারীরিক অবস্থা যাচাই করে নেওয়া এবং একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

• ক্লান্তি ও দুর্বলতা

• ত্বক নিস্তেজ বা মলিন হয়ে যাওয়া

• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস

• লিভারের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া

গ্লুটাথায়োন স্বাভাবিকভাবেই ফলমূল, শাকসবজি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার থেকে উৎপাদিত হয়, তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর উৎপাদন কমে যায়।

গ্লুটাথায়োন তৈরিতে সালফার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিছু সালফারসমৃদ্ধ খাবার: ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, রসুন ও পেঁয়াজ।

এই দুই ভিটামিন গ্লুটাথায়োনকে রক্ষা করে এবং পুনরায় সক্রিয় করে।
• ভিটামিন সি: আমলকী, লেবু, কমলা, পেয়ারা, টমেটো
• ভিটামিন ই: বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, অলিভ অয়েল

বিশেষত সিস্টেইন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড গ্লুটাথায়োনের মূল উপাদান। ডিম, মাছ, মাংস, ডাল ও ছোলায় এই উপাদান রয়েছে।

• অ্যাভোকাডো
• হলুদ (টারমারিক, এতে থাকে কার্কুমিন)
• পালংশাক

অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব গ্লুটাথায়োন কমিয়ে দেয়। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম ও মেডিটেশন বা ইয়োগা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।

এই দুটি অভ্যাস শরীরের গ্লুটাথায়োন রিজার্ভ দ্রুত ক্ষয় করে ফেলে।