সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় মডেল ‘দা কাঁটা লাগা গার্ল’ শেফালি জারিওয়ালার। বিগ বসের কারণেও তিনি এক পরিচিত মুখ। ২৭ জুন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে উঠে আসছে নানা তথ্য৷ এর মাঝেই সামাজিক মাধ্যমে তাঁর বহু বছর ধরে নেওয়া অ্যান্টি এজিং ট্রিটমেন্ট এক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে কিনা তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক। মৃত্যুর দিনে সারা দিন উপোস থেকে অ্যান্টি এজিং ইনজেকশন নেন শেফালি। আসলে শুধু শেফালি নন, বয়স কমানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছি এখন সবাই আমরা। কিন্তু এই দুঃখজনক কারণে আলোচিত অ্যান্টি এজিং ইনজেকশন কি কখনো প্রাণঘাতী হতে পারে? চলুন জেনে নিতে চেষ্টা করি।
বয়সের ছাপ বাড়তে শুরু করলে সবাই একটু বেশি চিন্তায় পড়ে যাচ্ছে ইদানীং। আধুনিক প্রযুক্তিতে বয়সকে ধরে রাখার জন্য গ্রহণ করা হচ্ছে নানা ধরনের অ্যান্টি এজিং ট্রিটমেন্ট। বিভিন্ন বিউটি প্রোডাক্টের পাশাপাশি জনপ্রিয় হচ্ছে অ্যান্টি এজিং ইনজেকশন। বিশ্বব্যাপী সেলিব্রিটিদের মাঝে এই পদ্ধতিটি সুপরিচিত। চিরতরুণ থাকার যে সাধ, তা অনেকটাই পূরণ করে দিচ্ছে এই ইনজেকশন। এর যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই, তা নয়। একেকজনের ত্বকে ও শরীরের জন্য তা আলাদা। তবে শেফালির মৃত্যুতে আবেগতাড়িত হয়ে ও নিছক ধারণা থেকে এ নিয়ে যেভাবে মৃত্যুভয় দেখানো হচ্ছে তা কিন্তু সত্য নয়৷ এই মডেল বয়স কমানোর জন্য বহু বছর গ্লুটাথায়ন ও ভিটামিন সি ইনজেকশন নিচ্ছিলেন। এর ফলে হার্টের কার্যকারিতায় বিঘ্ন ঘটা বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী। এ বিষয়ে ডার্মাটোলজিস্ট ডা. তানজিম তমা বলেন, ব্রাইটেনিং ও অ্যান্টি এজিং ইনজেকশন দীর্ঘদিন ব্যবহারে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জটিল ও গভীর হতে পারে। যেমন-
বোটক্স দীর্ঘদিন ব্যবহারে মুখের পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে, যার ফলে মুখের স্বাভাবিক অভিব্যক্তি হারিয়ে যায়।
ফিলার ব্যবহারে ত্বকের নিচে গাঁট বা চাকা তৈরি হতে পারে, চেহারা ফুলে যেতে পারে, এমনকি মুখের গঠনও অপ্রাকৃত হয়ে যেতে পারে।
গ্লুটাথিওনের ইনজেকশন বারবার নেওয়ার ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে, শরীরে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তে বিষক্রিয়াও হতে পারে।
ভিটামিন সি-এর অতিরিক্ত মাত্রা দীর্ঘ মেয়াদে কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে এবং শরীরের অ্যাসিড-ক্ষার ভারসাম্যেও বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
কিন্তু এর সঙ্গে সরাসরি হৃদ্রোগের কোন যোগসূত্র নেই।
তবে সাধারণভাবে অ্যান্টি এজিং ইনজেকশন কী ও এ ধরনের ট্রিটমেন্টের আরও কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো।
এই ইনজেকশন ট্রিটমেন্টকে রিংকেল রিলাক্সিং বা ডার্মাল ফিলার ইনজেকশনও বলা হয়। এটি এমন একটি কসমেটিক প্রসিডিউর যা বয়সের ছাপ পড়া কমায় এবং ত্বকের হারিয়ে যাওয়া ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখে। এই ইনজেকশনগুলো ফেসিয়াল মাসলগুলোকে ক্ষণিকের জন্য প্যারালাইজ করে দেয়, ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধি বাড়ায়।
সাধারণত এই ধরনের ইনজেকশনগুলোকে নিরাপদ বলা হলেও সঠিক নিয়ম না মানলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে যা যা ঘটতে পারে:
লালচে র্যাশ
যেখানে ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে সে জায়গাগুলোতে হালকা আঘাত পাওয়ার মতো দাগ বা লালচে র্যাশ হতে পারে। এগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে যায়। দাগ কমানোর জন্য কোল্ড প্যাক দিলে আরাম বোধ হয়।
লাল বর্ণ ধারণ করা
ইনজেকশন এরিয়া অল্প সময়ের জন্য লাল বর্ণের হয়ে যেতে পারে। এটা সাধারণত ট্রিটমেন্ট নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর হয়।
মাথাব্যথা
অনেকে ইনজেকশন নেওয়ার পর মাথাব্যথায় ভুগতে পারেন। এই ব্যথা ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ব্যথা সহ্য করতে না পারলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা যায়।
আইলিড ড্রুপিং
যদি চোখের আশপাশের এরিয়াতে ইনজেকশন দেওয়া হয়, তাহলে এই সমস্যা হতে পারে। এর কারণ হচ্ছে সাময়িক সময়ের জন্য চোখের আশপাশের মাসলগুলো প্যারালাইজ হয়ে যায়।
চোখ শুকিয়ে যাওয়া
চোখের পাশে যে ভাঁজ দেখা যায় সেখানে যখন ইনজেকশন পুশ করা হয় তখন এই সমস্যা হতে পারে। অনেকের চোখ দিয়ে পানি পড়ে।
পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া
অ্যান্টি এজিং ইনজেকশনের কারণে পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে, অনেক ক্ষেত্রে প্যারালাইজ হয়ে যায়। তবে এই সমস্যা জটিল হয়ে যায় এমন মানুষ সংখ্যায় কম।
দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া
চিরতরুণ হওয়ার এই দৌড়ে অনেকে এগিয়ে থাকলেও কমে যেতে পারে দৃষ্টিশক্তি। দেখা দিতে পারে ডাবল ভিশন, আবছা দেখা অথবা এর চেয়েও জটিল পরিণাম। এ ধরনের সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
কথা বলতে ও শ্বাস নিতে সমস্যা
যেহেতু এই ট্রিটমেন্টে পেশি খানিক সময়ের জন্য প্যারালাইজড হয়ে যায়, তাই কথা বলতে ও শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে। মূলত পেশি কাজ না করার কারণে এমনটা হয়।
অ্যালার্জি
অনেক সময় অ্যালার্জি হয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যেতে পারে। চুলকানি, র্যাশ, লালচে ভাব, মাথা ঘোরানো, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে হয়তো এই পদ্ধতি আপনি ব্যবহার করছেন, কিন্তু নিজের সুস্থতাও খেয়াল রাখবেন। হুজুগে পড়ে বয়স কমাতে গিয়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও হতে পারে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা।