সেন্টেলা এশিয়াটিকা বা থানকুনি পাতা একাধারে ময়েশ্চারাইজিং, অ্যান্টি-এজিং ও ক্ষত নিরাময়ে কাজ করে। এই উদ্ভিদের নির্যাস ত্বকের জন্য জাদুকারী ভূমিকা পালন করে। চীনে সেন্টেলা এশিয়াটিকাকে ‘জীবনের অলৌকিক মহৌষধ’ নামে অভিহিত করা হয়। সত্যিই কি উদ্ভিদটি এতটা উচ্চ মর্যাদার দাবি রাখে। চলুন জেনে নেই।
সেন্টেলা এশিয়াটিকা, যা হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদিক এবং চীনা প্রথাগত চিকিৎসার একটি মূল উপাদান। বর্তমানে স্কিন কেয়ারের জগতে নতুন করে আলোচনায় এসেছে এটি। লিলি প্যাডের মতো পাতা বিশিষ্ট এই উদ্ভিদটি ‘টাইগার গ্রাস’ নামেও পরিচিত। কারণ বলা হয়ে থাকে আহত বাঘেরা এতে গড়াগড়ি খেয়ে আরাম পায়। এটি পার্সলি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। আফ্রিকা, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে প্রচুর পরিমাণে জন্মায়।
সেন্টেলা এশিয়াটিকা অ্যান্টি-এজিং, জখম নিরাময়, ময়েশ্চারাইজিং ও ব্যথানাশক গুণাবলির জন্য বিখ্যাত। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, রেডনেস কমায় এবং কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে কোরিয়ান স্কিন কেয়ারের জনপ্রিয়তায়, এই উপাদানটি টক অফ দ্যা টাউনে পরিণত করেছে।
এর চারটি সক্রিয় যৌগ ত্বকের যত্নে বিপ্লব এনেছে:
১. অ্যাসিয়াটিকোসাইড
২. অ্যাসিয়াটিক অ্যাসিড
৩. মেডেক্যাসিক অ্যাসিড
৪. মেডেক্যাসোসাইড
এই ভেষজটি স্কিনকেয়ার বিশেষজ্ঞ এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের কাছে এতটা প্রশংসিত কি শুধুই বাড়াবাড়ি। নাকি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেন্টেলা এশিয়াটিকা আসলেই কতটা কার্যকরী।
সেন্টেলা এশিয়াটিকার ব্যবহার হাজার বছরের অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে এর কী প্রভাব রয়েছে? গবেষণা তুলনামূলকভাবে কম হলেও, একেবারেই যে হয়নি তা না।
১. শুষ্ক ও সংবেদনশীল ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে
সেন্টেলা এশিয়াটিকা ত্বককে সুস্থ রাখে এবং ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। এটি লালচে ভাব ও প্রদাহ কমায়, যারা একজিমা বা রোসেসিয়ার মতো সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর। বছরের বিভিন্ন সময়ে তাপমাত্রার তারতম্যের সময় সেন্টেলা এশিয়াটিকা ত্বকের প্রতিবন্ধকতা রক্ষা করে।
২. পোড়া ও ক্ষত নিরাময়ে সহায়ক
বাঘেরা আহত হলে সেন্টেলা এশিয়াটিকায় গড়াগড়ি খায়, এই গল্পটি মনে আছে? বিজ্ঞান বলছে, তাদের পথ অনুসরণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। সেন্টেলা এশিয়াটিকায় রয়েছে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই ক্ষতিকর অণুগুলো ত্বকের ডিএনএ এবং সুরক্ষা স্তরে আঘাত হানে, আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে। সেন্টেলা এশিয়াটিকা ত্বকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়িয়ে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব কমায়। পেট্রোলিয়াম জেলির মতো অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গে এটি ব্যবহার করলে পোড়া এবং ক্ষত দ্রুত সেরে উঠতে পারে।
৩. প্রদাহ হ্রাস করা
প্রদাহ ক্ষত সারানোর একটি প্রাকৃতিক অংশ। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। ব্রন, একজিমা এবং বিভিন্ন ত্বকের সমস্যাগুলোর মূল কারণ হলো প্রদাহ। সেন্টেলা এশিয়াটিকার মতো সক্রিয় উপাদান প্রদাহ কমাতে কার্যকর, বিশেষ করে যখন এটি অন্যান্য ওষুধ বা ওভার-দ্য-কাউন্টার পণ্যের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়।
৪. বার্ধক্যের লক্ষণ ধীর করা
যদিও সেন্টেলা এশিয়াটিকার ফটোএজিং, দাগ এবং সেলুলাইট কমানোর প্রভাব সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন। সেন্টেলা এশিয়াটিকা ত্বকের সংযোজক টিস্যুর কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর চারটি সক্রিয় যৌগ অ্যাসিয়াটিকোসাইড, অ্যাসিয়াটিক অ্যাসিড, মেডেক্যাসিক অ্যাসিড ও মেডেক্যাসোসাইড কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়। এই উপাদানগুলো ত্বককে আরও ময়েশ্চারাইজড, তরুণ, টান টান এবং তারুণ্যদীপ্ত করে তোলে।
সেন্টেলা এশিয়াটিকা এখন ত্বক যত্নের জগতে একটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে পরিচিত। এর উপকারিতা আপনাকে ত্বকের যত্নে একটি নতুন মাত্রা দিতে পারে।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম