সবাই চায় সুন্দর ত্বক। তাই নানান ধরনের স্কিনকেয়ার পণ্য ব্যবহারের প্রতিযোগিতা যেন লেগেই থাকে সবসময়। কিন্তু জানেন কি, বেশি পণ্য ব্যবহার করলে ত্বকের কী কী ক্ষতি হতে পারে?
ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ত্বকে অতিসংবেদনশীলতা, জ্বালা ও বারবার সংক্রমণের ঘটনা বেড়ে গেছে। এর মূল কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে একাধিক প্রোডাক্টের অতিরিক্ত ব্যবহার। ২০২৩ সালে জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে দশটির বেশি স্কিনকেয়ার পণ্য ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে ত্বকে জ্বালা বা প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এছাড়া ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, ব্রণ বেড়ে যাওয়া ও স্কিন ব্যারিয়ার বা ত্বকের প্রাকৃতিক রক্ষা দেয়ালও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নেট হ্যাবিট-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্বাগতিকা দাস হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা যেমন জামাকাপড়ে ট্রেন্ড ফলো করি, তেমনি স্কিনকেয়ারেও করছি। বারবার নতুন পণ্য কিনছি, পুরোনোটা ফেলে দিচ্ছি। ফ্যাশনের ক্ষেত্রে সবাই জানে ফাস্ট ফ্যাশন সব সময় নতুন ট্রেন্ড তৈরি করে। একই ভাবে বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতেও এই প্রবণতা এখন বেশ লক্ষণীয়। একটার পর একটা ‘মাস্ট-হ্যাভ’ প্রোডাক্ট তৈরি করছে কোম্পানিগুলো। এতে ভোক্তারা নতুন নতুন পণ্য ট্রাই করতে বাধ্য হচ্ছেন, যার ফলস্বরূপ ত্বকে দেখা যায় অসামঞ্জস্যতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভুলে যাই ত্বক নিজেই নিজের যত্ন নিজেই নিতে জানে। একসঙ্গে অনেক ধরনের পণ্য ব্যবহার করলে, ত্বক তার প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। কারণ এসব পণ্যে থাকে একাধিক সক্রিয় উপাদান। ফলে ব্রণ, প্রদাহ, র্যাশ দেখা দেয় এবং স্কিন ব্যারিয়ার দুর্বল হয়ে পড়ে।’
স্বাগতিকা দাস বলেন, ‘কম কিন্তু ভালো মানের পণ্য ব্যবহার করুন। তাতেই ত্বক সুন্দর থাকবে।’ তিনি পরামর্শ দেন, ত্বকের যত্নে একটি মৃদু ক্লিনজার, একটি হালকা কিন্তু কার্যকর ময়েশ্চারাইজার এবং একটি পুষ্টিকর তেল ও সানস্ক্রিন এই কয়েকটি উপাদানই যথেষ্ট। নানা ধরনের সক্রিয় উপাদান মিশিয়ে একাধিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করার চেয়ে এই সহজ রুটিন অনেক বেশি উপকারী। এতে ত্বক হয় শান্ত, মসৃণ এবং প্রাকৃতিকভাবেই স্বাস্থ্যকর।
তিনি জানান, ‘যারা জটিল এবং রাসায়নিক-ভিত্তিক স্কিনকেয়ার থেকে মিনিমাল এবং ভালো মানের প্রোডাক্ট ব্যবহারে ফিরে এসেছেন, তাদের ত্বকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গিয়েছে।’
এই আলোচনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সাসটেনেবিলিটি। ফাস্ট বিউটি ইন্ডাস্ট্রি যে পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি করে, তা ভয়াবহ। প্রতিনিয়ত প্রোডাক্ট কেনা, ব্যবহার করা, ফেলে দেওয়া—এই চক্র পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
স্বাগতিকা দাস বলেন, ‘যখন আপনি অল্প কিন্তু ভালো মানের প্রোডাক্ট বেছে নেন, তখন আপনি শুধু নিজের ত্বকের খেয়াল রাখেন না, বরং পরিবেশকেও রক্ষা করেন। সংরক্ষণহীন, প্রাকৃতিক এবং প্রমাণিত উপাদানে তৈরি প্রোডাক্ট ত্বকের জন্য যেমন নিরাপদ, পরিবেশের জন্যও তেমনি উপকারী।’
• অল্প কিন্তু দরকারি পণ্য ব্যবহার করুন
• নতুন কিছু কেনার আগে ভাবুন, পুরোনোটা শেষ হয়েছে কি না
• প্রাকৃতিক উপাদান আছে এমন প্রোডাক্ট বেছে নিন
• রিফিলযোগ্য বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্যাকেট খুঁজুন
সুন্দর ত্বক পেতে অনেক পণ্য ব্যবহার করতে হয় এমন কনজিউমার কালচারের ফাঁদে পা না দিয়ে। ত্বকের জন্য প্রয়োজন এমন পণ্যই বেছে নিন।
সূত্র: গ্ল্যাম ইউকে ও হিন্দুস্তান টাইমস
ছবি: পেকজেলসডটকম