টিকটক যে সৌন্দর্য-বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রভাবক হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ত্বকের যত্ন থেকে শুরু করে মেকআপের সব নতুন ট্রেন্ড এসেছে এখান থেকে। বছরের শুরু থেকে টিকটকে রোজমেরি তেল ব্যবহারের ধুম পড়ে যায়। এ-সম্পর্কিত ভিডিওগুলোর ভিউ ২ দশমিক ৩ বিলিয়নেরও বেশি। যাঁরাই ব্যবহার করেছেন, তাঁরাই এই তেলের গুণগান গেয়েছেন। প্রথম প্রথম অনেকে এর উপকারিতা নিয়ে সন্দিহান প্রকাশ করলেও পরবর্তী সময়ে ট্রাইকোলোজিস্ট বা চুলরোগ বিশেষজ্ঞরা রোজমেরি তেলকে দিয়েছেন সবুজ সংকেত। ফলে এই তেল হয়ে উঠেছে এই বছরের সবচেয়ে বড় হেয়ার কেয়ার ট্রেন্ড।
চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে রোজমেরি তেলের জুড়ি মেলা ভার। রোজমেরিগাছে আছে জাদুকর কার্নোসিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিড স্নায়ু ও টিস্যুর ক্ষতি নিরাময় করতে পারে। এমনকি এটি সেলুলার টার্নওভার বা কোষের পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। বিশেষজ্ঞরা রোজমেরি তেলকে চুলের বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ মিনোক্সিডিলের সেরা বিকল্প হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একে মিনোক্সিডিলের চেয়েও এগিয়ে রাখছেন। কারণ, রোজমেরি তেল ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও সেটার পরিমাণ খুবই কম।
২০১৫ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁদের অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া বা বংশগতভাবে টাক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে, রোজমেরি তেল সরাসরি তাঁদের চুল পড়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, ২০১০ ও ২০১১ সালে আলাদাভাবে করা দুটি ক্লিনিক্যাল গবেষণায় এসেছে, অ্যালোপেসিয়া রোগীদের নতুন করে চুল গজাতে সহায়তা করে। আরেকটি গবেষণায় ফলাফল বলছে, টেস্টোস্টেরনের কারণে টাক হয়ে গেলে সেখানে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে রোজমেরিপাতার নির্যাস।
চুল লম্বা করতে বা নতুন চুল গজানো ছাড়াও রোজমেরি তেল বিভিন্ন কারণে হওয়া মাথার ত্বকের ইরিটেশন বা জ্বালাপোড়া এবং খুশকি কমাতে পারে। কারণ, এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। আবার অকালে চুল পাকার সমস্যা প্রতিরোধ ও সমাধান করতে পারে এটি।
অনেক ব্র্যান্ডের রোজমেরি তেল পশ্চিমা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে আমাদের দেশের বাজারে নয়। পাওয়া গেলেও সাশ্রয়ী নয়। তবে চাইলে দুটি পদ্ধতি মেনে ঘরেই খুব সহজে রোজমেরি তেল তৈরি করতে পারবেন। এ জন্য প্রয়োজন হবে তাজা বা শুকনা রোজমেরিপাতা ও যেকোনো ক্যারিয়ার অয়েল। তাজা ও শুকনা রোজমেরিপাতা যেকোনো সুপারশপে সুলভ মূল্যে পাওয়া যাবে।
১. এ জন্য দরকার হবে ৩ বা ৪টি তাজা রোজমেরির স্প্রিগ বা ডাঁটা এবং ২ কাপ বা ৪৭৫ মিলিলিটার ক্যারিয়ার তেল। এ ক্ষেত্রে নারকেল, জলপাই, আমন্ড বা জোজোবা তেল ব্যবহার করা যাবে।
২. প্রথমে তাজা রোজমেরির স্প্রিগ বা ডাঁটা খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর পাতাগুলোকে আলাদা করে শুকিয়ে নিতে হবে। মনে রাখবেন, ভেজা পাতা তেলে দিলে তেল ছিটে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
৩. এরপর একটি ছোট সসপ্যানে নিজের পছন্দমতো তেল নিয়ে অল্প আঁচে জ্বাল দিতে হবে।
৪. গরম তেলে খুব সাবধানে রোজমেরিপাতা দিয়ে ভালোভাবে নাড়িয়ে দিতে হবে। এরপর চুলার জ্বাল একদম কমিয়ে অন্তত এক ঘণ্টা জ্বাল দিন। এতে রোজমেরিপাতার সমস্ত নির্যাস তেলের সঙ্গে মিশে যাবে।
৫. এক ঘণ্টা হয়ে গেলে চুলা বন্ধ করে তেলটি ঠান্ডা করে নিন।
৬. সবশেষে ছাঁকনি নিয়ে তেলটা ছেঁকে একটি কাচের জারে ভরে নিলেই তৈরি রোজমেরি তেল।
১. প্রথমে একটা বড় পাতিল বা সসপ্যানে পানি গরম করতে হবে। সেই ফুটন্ত গরম পানিতে খুব সাবধানে চিমটার সাহায্যে একটি কাচের জার নিয়ে ১০ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। রোজমেরি তেল নষ্ট করতে পারে—এমন ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলার জন্য এ কাজ করতে হবে। জারের ঢাকনাটা কেবল সাবান দিয়ে ধুলেই চলবে।
২. জারটি শুকিয়ে এর মধ্যে চার টেবিল চামচ শুকনা রোজমেরিপাতা দিতে হবে।
৩. এরপর নিজের পছন্দমতো তেল দিয়ে জারটি ভরে ফেলতে হবে।
৪. তেলভর্তি জার খুব ভালোভাবে আটকে দুই সপ্তাহ রোদে দিতে হবে। এই সময়ে তেল ধীরে ধীরে গরম হবে এবং রোজমেরির নির্যাস তেলের সঙ্গে মিশে যাবে।
৫. এরপর স্ট্রেইনারে রোজমেরিপাতা ছেঁকে একটা বাটিতে রেখে ওই তেল আবার আগের জারে ভরে ফেলতে হবে।
৬. এই তেল সপ্তাহে দু-তিন দিন রোদে দিয়ে এক বছরের মতো ব্যবহার করা যাবে।
ব্যবহার
যদি ঘরে বানানো রোজমেরি তেল ব্যবহার করা হয়, তাহলে শ্যাম্পু করার আগে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে অন্তত ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে।
রোজমেরি এসেনশিয়াল তেল হলে তা দু-তিন ফোঁটা যেকোনো ক্যারিয়ার তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
ছবি: উইকিপিডিয়া ও পেকজেলসডটকম