বিউটি অ্যাংজাইটি: সৌন্দর্যের চাপে বাড়ছে মানসিক উদ্বেগ
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আপনি কি প্রায়শই নিজের চেহারা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন, আর সব সময় ভাবেন ‘আমি কি আরও ভালো দেখতে পারি?’ কখনো কি আপনার মনে হয়েছে, “আমি আরও সুন্দর হয়ে উঠতে পারতাম”। বা আপনি কি প্রায়ই নিজের পোশাক, স্টাইল, উপস্থাপনা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যদের নিখুঁত লুক দেখে হঠাৎ নিজেকে খুব সাধারণ লাগে। অনেকের উত্তরই হয়তো হবে হ্যাঁ। আর এই ‘হ্যাঁ’ থেকেই জন্ম নিচ্ছে নতুন এক ধরনের মানসিক চাপ ‘বিউটি অ্যাংজাইটি’। বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা এক অবিরাম তুলনার জগতে বাস করছে, যেখানে “যথেষ্ট ভালো” বলে আর কিছুই নেই।

যেখানে সৌন্দর্য হয়ে ওঠে চাপ

 বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা এক অবিরাম তুলনার জগতে বাস করছে, যেখানে “যথেষ্ট ভালো” বলে আর কিছুই নেই
বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা এক অবিরাম তুলনার জগতে বাস করছে, যেখানে “যথেষ্ট ভালো” বলে আর কিছুই নেই

কয়েক দশক আগেও, সৌন্দর্য ছিল সহজ ও আন্তরিক। একটা কাজল স্টিক, লিপস্টিক বা লিপ বাম,  আর একটি টিপ। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া যুগে এই সরলতার জায়গা নিয়েছে নিখুঁত ত্বক, মেকআপ করা মুখ আর ট্রেন্ডি স্কিনকেয়ার রিচুয়াল। ভারতীয় মনোবিজ্ঞানী জাসমিন অরোরা বলেন, “বিউটি ইন্ডাস্ট্রি এখন এক প্রকার রেসে পরিণত হয়েছে। নতুন ট্রেন্ড, নতুন ট্রিটমেন্ট আর সৌন্দর্যের নতুন দর্শন নিয়ে। মানুষ ভাবতে শুরু করেছে, ‘আমি যদি এটা না করি, তাহলে আমি পিছিয়ে যাব।’ এই চক্র থেকেই জন্ম নিচ্ছে বিউটি অ্যাংজাইটি।” তিনি আরও যোগ করেন, “যখন প্রতিটি ত্রুটিকে সংশোধনযোগ্য ধরে নেওয়া হয়, তখন মানুষ নিজের প্রতি স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গি হারায়। ফলে জন্ম নেয় গভীর মানসিক উদ্বেগ।”

সেলফ-কেয়ার থেকে সেলফ-স্ক্রুটিনি

সেলফ-কেয়ার রুটিন এখন  পরিণত হয়েছে সেলফ-সার্ভেল্যান্সে
সেলফ-কেয়ার রুটিন এখন পরিণত হয়েছে সেলফ-সার্ভেল্যান্সে

নিজের যত্ন নেওয়া বা সেলফ-কেয়ার আমাদের মনের প্রশান্তি এনে দিতে পারত। কিন্তু এখন অনেকের কাছে সেটি পরিণত হয়েছে নিখুঁত দেখানোর প্রতিযোগিতায়। চুলের প্রতিটি গোছা ঠিক আছে কি না, মুখে নতুন দাগ পড়ল কি না, অন্যরা কী ভাবছে। এই অযথা বিশ্লেষণই এখন অনেকের মানসিক চাপের উৎস। অরোরা বলেন, “আগে স্কিনকেয়ার মানে ছিল নিজের জন্য সময় দেওয়া। এখন সেটি হয়ে গেছে নিজের ‘অপূর্ণতা’ খুঁজে বের করার উপায়।”

এভাবে সেলফ-কেয়ার রুটিন পরিণত হয় সেলফ-সার্ভেল্যান্সে। যেখানে আমরা ক্রমাগত নিজেদের নজরে রাখি, তুলনা করি, আর মনে করি আমরা কখনোই যথেষ্ট সম্পূর্ণ নই।

বিজ্ঞাপন

আত্মসম্মান, সম্পর্ক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব

বিউটি অ্যাংজাইটি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, কাজের দক্ষতা এবং মানসিক প্রশান্তিকেও প্রভাবিত করে
বিউটি অ্যাংজাইটি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, কাজের দক্ষতা এবং মানসিক প্রশান্তিকেও প্রভাবিত করে

বিউটি অ্যাংজাইটি শুধু বাহ্যিক নয়, এটি আত্মসম্মানেও গভীর প্রভাব ফেলে। মনোচিকিৎসকদের মতে, যখন কেউ নিজের শরীরকে মূল্যায়নের বস্তু হিসেবে দেখতে শুরু করে, তখন আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়। সেই অনুভূতি থেকে জন্ম নেয় ভয়। যেন কেউই আমাদের যথেষ্ট সুন্দর ভাববে না।

এই চাপ দীর্ঘ মেয়াদে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, কাজের দক্ষতা এবং মানসিক প্রশান্তিকেও প্রভাবিত করে। মানুষ এক ধরনের অনিরাপত্তায় আটকে যায়। যেখানে নিজেকে ভালো লাগা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায় এই অদৃশ্য চাপ থেকে

আপনি কী করতে পারেন, সেই দিকে মন দিন। কেমন দেখাচ্ছে তা ভুলে যান
আপনি কী করতে পারেন, সেই দিকে মন দিন। কেমন দেখাচ্ছে তা ভুলে যান

বিউটি অ্যাংজাইটি থেকে বেরিয়ে আসার উপায় শুরু হয় সচেতনতা থেকে। নিজের চেহারা নয়, নিজের অনুভূতির দিকে মনোযোগ দিন।

অরোরা বলেন, “নিজেকে নিয়ে নিজের কাছে অতিরিক্ত সমালোচক করবেন না, অন্যের সঙ্গে তুলনা কমান। নিজের ভেতরের গুণগুলোকে ভালোবাসতে শিখুন।”
তিনি পরামর্শ দেন, “আপনি কী করতে পারেন, সেই দিকে মন দিন। কেমন দেখাচ্ছে তা ভুলে যান। বাস্তবসম্মত, বডি-পজিটিভ পরিবেশে থাকুন, আর প্রয়োজন হলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।”

সৌন্দর্য শুরু হয় সেই মুহূর্তে, যখন আপনি নিজেকে ভালোবাসতে শেখেন
সৌন্দর্য শুরু হয় সেই মুহূর্তে, যখন আপনি নিজেকে ভালোবাসতে শেখেন

সৌন্দর্যের এই অদৃশ্য চাপ থেকে মুক্ত হতে গেলে আমাদের বুঝতে হবে। নিখুঁত দেখানো নয়, বরং নিজের প্রতি ভালোবাসাই আসল সৌন্দর্য।

সেলফ-কেয়ার তখনই সত্যিকারের যত্ন হয়ে ওঠে, যখন তা ভালো লাগার উৎস হয়। বিউটি অ্যাংজাইটি আমাদের আধুনিক জীবনের বাস্তব চ্যালেঞ্জ বটে, কিন্তু সচেতন মনোযোগ, আত্মগ্রহণ আর সহমর্মী সেলফ-লাভই হতে পারে এর প্রতিষেধক। কারণ সৌন্দর্য শুরু হয় সেই মুহূর্তে, যখন আপনি নিজেকে ভালোবাসতে শেখেন। ঠিক যেমন আপনি আছেন।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে 

ছবি: এআই

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৪৮
বিজ্ঞাপন