
আমাদের প্রতিদিনের ত্বক-জীবন মানেই তীব্র গরম, উচ্চ আর্দ্রতা, ধুলাবালি, দূষণ আর প্রখর রোদ। যে ভারী ক্রিম লন্ডনের শীতে ত্বক বাঁচায়, সেটিই ঢাকার আবহাওয়ায় এসে লোমকূপ বন্ধ করে দেয়, বাড়িয়ে তোলে তেলতেল ভাব ও ব্রণের ঝুঁকি। তার ওপর আমাদের মেলানিনসমৃদ্ধ ব্রাউন স্কিন—যা সহজে রোদে পুড়ে যায়, দাগ পড়ে গভীরভাবে, আর সামান্য জ্বালাপোড়াতেই রেখে যায় দীর্ঘস্থায়ী কালচে ছাপ।

এ কারণে পশ্চিমা স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট খারাপ না হলেও, সব সময় আমাদের জন্য উপযোগী হয় না। কারণ সেগুলো তৈরি হয়নি আমাদের ত্বক, আমাদের জলবায়ু আর আমাদের জীবনযাত্রা ভেবে।
বাংলাদেশি ত্বক শক্তিশালী, কিন্তু সংবেদনশীল। তাপ ও দূষণে দ্রুত প্রতিক্রিয়া করে, সহজে ড্যামেজ হয়। তাই আমাদের দরকার এমন স্কিনকেয়ার যা হালকা, নন-স্টিকি, ঘামের মধ্যেও কাজ করবে; সূর্যের তাপ ও ধুলাবালি থেকে সুরক্ষা দেবে; ত্বক ঠান্ডা রাখবে এবং দাগ ও পিগমেন্টেশনের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে।
এখানেই প্রয়োজন বিজ্ঞানের নির্ভুলতা আর ফার্মাসিউটিক্যাল দক্ষতা।

ফার্মাসিস্টরা জানেন—কোন উপাদান ত্বকের সঙ্গে কেমন প্রতিক্রিয়া করে, কোন অ্যাকটিভ সত্যিই কাজ করে, কোন প্রিজারভেটিভ নিরাপদ এবং কীভাবে আর্দ্র আবহাওয়ায় ফর্মুলাকে স্থিতিশীল রাখা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের একদল ফার্মাসিস্ট স্কিনকেয়ারকে দেখছেন নতুন চোখে—বিদেশি ট্রেন্ড অনুসরণ নয়, বরং স্থানীয় সমস্যার বৈজ্ঞানিক সমাধান খোঁজার চেষ্টা।
এই ভাবনাকেই বাস্তবে রূপ দিয়েছেন সিনথিয়া ইসলাম—একজন ফার্মাসিস্ট ও স্কিন ক্যাফের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তার লক্ষ্য একটাই: এমন স্কিনকেয়ার তৈরি করা, যা সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের ত্বক ও আবহাওয়ায় কাজ করবে।
এই যাত্রায় তার সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রফেসর ড. আবু জাফর মোহাম্মদ রুহুল মোমেন—৩০ বছরেরও বেশি আন্তর্জাতিক গবেষণার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন বিজ্ঞানী। বিজ্ঞান আর স্থানীয় বাস্তবতার মেলবন্ধনে তারা প্রতিটি ফর্মুলা তৈরি করেন শুরু থেকে—কপি নয়, কাস্টম ডিজাইন।

স্কিন ক্যাফের সানস্ক্রিন তৈরি হয়েছে ঢাকার তাপ, ঘাম আর রোদের কথা মাথায় রেখে—যা গলে যায় না, ভারী লাগে না।
তাদের ব্রাইটেনিং সিরাম কাজ করে দূষণজনিত ড্যামেজ ও দাগের বিরুদ্ধে, কোনো কঠোর ব্লিচিং উপাদান ছাড়াই।
ময়েশ্চারাইজারগুলো হালকা, নন-স্টিকি—ত্বককে নরম ও হাইড্রেটেড রাখে, লোমকূপ বন্ধ না করে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—প্রতিটি প্রোডাক্টের প্রতিটি ব্যাচ পেরিয়ে যায় মাইক্রোবায়োলজি চেক, থার্ড-পার্টি ইফিকেসি টেস্ট এবং ল্যাব সিমুলেশনের মধ্য দিয়ে, যেখানে পরীক্ষা করা হয় একেবারে বাংলাদেশের বাস্তব আবহাওয়ার মতো পরিবেশে।
সিনথিয়া ইসলাম বলেন, “আমরা ফার্মাসিস্ট—কিন্তু তার চেয়েও বড় পরিচয়, আমরা বাংলাদেশি। তাই আমাদের লক্ষ্য শুধু স্কিনকেয়ার বানানো নয়, বরং এমন স্কিনকেয়ার বানানো যা সত্যিই কাজ করে আমাদের ত্বকে, আমাদের এই আর্দ্র আবহাওয়ায়। বিশ্বের বেশির ভাগ স্কিনকেয়ার তৈরি ও পরীক্ষা হয় এমন পরিবেশে যেখানে পরিস্থিতি আমাদের মতো নয়। তাই আমাদের স্কিনকেয়ারও আলাদা হওয়া উচিত।”

বাংলাদেশের বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে স্কিন ক্যাফে তৈরি করেছে এক নতুন মান। একসময় যে সানস্ক্রিন বা ট্রিটমেন্টের জন্য গ্রাহকদের বিদেশি পণ্যের ওপর নির্ভর করতে হতো, আজ দেশীয় ব্র্যান্ড হয়েও স্কিন ক্যাফে সেখানে একটি শক্ত বিকল্প হয়ে উঠেছে।
স্কিন ক্যাফে দেখিয়ে দিচ্ছে—বিজ্ঞান, স্থানীয় জ্ঞান আর আন্তরিকতা থাকলে দেশীয় স্কিনকেয়ার শুধু প্রতিযোগিতা নয়, বরং বিশ্বাসযোগ্য সমাধান হিসেবেও জায়গা করে নিতে পারে।
আর হয়তো এভাবেই বাংলাদেশের ত্বকের জন্য, বাংলাদেশেই তৈরি স্কিনকেয়ার হয়ে উঠছে ভবিষ্যতের সবচেয়ে সুন্দর গল্প।
ছবি: স্কিন ক্যাফে